প্রকাশিত:
২৪ মার্চ ২০২৪, ১৪:২২
মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আরও ১১৮ জন বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে চার ধাপে ৫৬০ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশ করেছে এ মন্ত্রণালয়।
রোববার (২৪ মার্চ) মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে চতুর্থ ধাপের এ তালিকা প্রকাশ করেন মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, চতুর্থ ধাপে ১১৮ জনসহ এখন পর্যন্ত ৫৬০ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর খসড়া তালিকা প্রকাশ করছি। তবে এটি চূড়ান্ত তালিকা নয়। আগামী ১৪ ডিসেম্বরের আগে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।
এর আগে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে জাতিকে মেধাশূন্য করার হীন উদ্দেশে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার-আলবদর-আল শামস বাহিনীর সহযোগিতায় ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারা দেশে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। নির্মমভাবে হত্যা করা হয় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। বাংলাদেশ যাতে আর কখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেটাই ছিল এ হত্যাযজ্ঞের মূল লক্ষ্য। ২৫ মার্চ কালরাত থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময়জুড়েই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। তবে বিজয়ের প্রাক্কালে ১৪ ডিসেম্বর এ হত্যাযজ্ঞ ভয়াবহ রূপ নেয়। দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবীদের নির্মম হত্যাকাণ্ড ছিল জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।
মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে গবেষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে সভাপতি করে গঠিত এ কমিটির সদস্য সংখ্যা ১১ জন। এর মধ্যে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি তিনজন, গবেষক ছয়জন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা দুজন। এছাড়া শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত কমিটি শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞা নির্ধারণের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট ও শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রাথমিকভাবে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আট সদস্য বিশিষ্ট দুটি উপ-কমিটি গঠন করে।
তিনি আরও বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত উপ-কমিটি প্রাথমিকভাবে পাওয়া তালিকা যাচাই-বাছাই করে জাতীয় কমিটির কাছে সুপারিশ সহকারে তালিকা প্রণয়ন করে। জাতীয় কমিটি চূড়ান্তভাবে যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করে তালিকা অনুমোদন করে। চার পর্ব মিলিয়ে মোট ৫৬০ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
চতুর্থ পর্বের তালিকা প্রকাশ করার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, চতুর্থ পর্বে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ১১৮ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বের তালিকা প্রকাশের পর অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকায় নাম ওঠানোর জন্য আবেদন করতে থাকেন। কমিটি সেই আবেদনসমূহও আমলে নিয়েছে। এছাড়া প্রজন্ম ৭১, রক্তঋণ, ১৯৭১: গণহত্যা নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর থেকে নাম সংগ্রহ করেছে কমিটি। এরপর কমিটি যাচাই-বাছাই করে চতুর্থ পর্বের তালিকা চূড়ান্ত করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, মোট ৫৬০ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর মধ্যে সাহিত্যিক ১৮ জন, দার্শনিক একজন, বিজ্ঞানী তিনজন, চিত্রশিল্পী একজন, শিক্ষক ১৯৮ জন, গবেষক একজন, সাংবাদিক ১৮ জন, আইনজীবী ৫১ জন, চিকিৎসক ১১৩ জন, প্রকৌশলী ৪০ জন, সরকারি-বেসরকারি কর্মচারী ৩৭ জন, রাজনীতিক ২০ জন, সমাজসেবী ২৯ জন, সংস্কৃতিসেবী এবং চলচ্চিত্র, নাটক, সঙ্গীত, শিল্পকলার অন্যান্য শাখার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ৩০ জন।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণায়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী।
মন্তব্য করুন: