প্রকাশিত:
২৪ মার্চ ২০২৪, ১৪:২৮
জীবনে চলার পথে টাকাপয়সার প্রয়োজন অনস্বীকার্য। অর্থসম্পদ- টাকাপয়সা মানুষের জীবনের এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ। সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে এর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এ অর্থ মানুষ উপার্জন করে, ব্যয় করে এবং সঞ্চয়ও করে। এ উপার্জন-ব্যয়-সঞ্চয়- সবই পার্থিব এ জীবনকে সাজিয়ে তোলার জন্যে, এ জীবনের সুখ ভোগ করার জন্যে। কিন্তু সামর্থ্য সকলের সমান থাকে না। কারও কাছে সঞ্চিত হতে থাকে প্রয়োজন-অতিরিক্ত টাকার ভাণ্ডার, কারও হাতে থাকে না দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজন পূরণের যৎসামান্য উপকরণ। এ পরিস্থিতিতে মানুষ এগিয়ে আসে মানুষের কল্যাণে। মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ায়। নিজের কষ্টার্জিত অর্থ বিলিয়ে দেয় অন্যদের প্রয়োজনে। একেই আমরা সাধারণত দান বা সদকা বলে জানি।
পবিত্র কুরআনুল কারীমে এসেছে-
اَلشَّیْطٰنُ یَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَ یَاْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَآءِ وَ اللهُ یَعِدُكُمْ مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَ فَضْلًا وَ اللهُ وَاسِعٌ عَلِیْمٌ.
শয়তান তোমাদেরকে দরিদ্রতার ভয় দেখায় ও কৃপণতার আদেশ করে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও দয়ার কথা দিচ্ছেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। -সূরা বাকারা : ২৬৮।
এ কথার মাধ্যমে বুঝে আসে যে, মানুষ যখন দান করতে চায় তখন মনে মনে এই চিন্তা করে যে আমি যদি দান করি তাহলে তো আমার সম্পদ কমে যাবে। বাস্তবিক পক্ষে তার এই মনে মনে চিন্তাটা যে আসে এটা শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। শয়তান মানুষের মনে একথা উদ্রেক করে দেয় যে, এইভাবে তুমি যদি দান করো তাহলে তোমার সম্পদ কমে যাবে।
শয়তান তখন তাকে অভাবের ভয় দেখায়। নিজের ভবিষ্যৎ, সন্তানের ভবিষ্যৎ ইত্যাদি নানা বিষয় সামনে তুলে ধরে তাকে দান থেকে বিরত রাখতে চায়।
আর মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, হে বান্দা তুমি যদি তুমি দান করো তাহলে আমি তোমার প্রতি দয়া করবো এবং তোমার সম্পদ আরো বাড়িয়ে দিব।
আল্লাহ যদি কাউকে দয়া করেন, তার আর ভয় কীসের! এ দয়ার প্রতি যার আস্থা অটুট, তার আবার কীসের দরিদ্রতা, কীসের অভাব! আল্লাহ তাআলা যে দানশীলদের দয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, বিষয়টি এখানেই শেষ নয়; তিনি এরপর ঘোষণা করছেন- আল্লাহ প্রাচুর্যময়। কোনো কিছুর অভাব তাঁর নেই। তিনি সর্বজ্ঞ। জগতের সবই তাঁর জানা। কোনো কিছুই তাঁর অজানা নয়, তাঁর থেকে গোপন নয়। যাকে তিনি চান, তাকে তিনি দেবেন। তাঁর দেয়ার হাত সদা প্রসারিত।
এমন সর্বব্যাপী ক্ষমতার অধিকারী যিনি, তিনি কথা দিচ্ছেন- নিজের কষ্টার্জিত সম্পদ কেউ কাউকে দান করলে তাকে তিনি দুটি পুরস্কার দেবেন :
এক. পরকালে তাকে ক্ষমা করবেন।
দুই. দুনিয়াতে তার প্রতি দয়া করবেন। অর্থাৎ তার সম্পদ আরও বাড়িয়ে দেবেন।
কিয়ামতের ময়দানে যখন মানুষের আমলের হিসাব নেয়া হবে, তখন কারও হাতেই কোনো টাকাপয়সা থাকবে না। দুনিয়ার আমলই তখন একমাত্র সম্বল। দুনিয়ার দান-সদকাহই পরকালের শাস্তি থেকে বাঁচিয়ে দেবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ.
কোনো দান-সদকাই সম্পদে ঘাটতি সৃষ্টি করে না। -সহীহ মুসলিম : ২৫৮৮।
যারা দান করে তাদের জন্য নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ হাদীসটি বেশ হৃদয়জুড়ানো। তিনি বলেছেন-
مَا مِنْ يَوْمٍ يُصْبِحُ الْعِبَادُ فِيهِ إِلاّ مَلَكَانِ يَنْزِلاَنِ فَيَقُولُ أَحَدُهُمَا اللّهُمّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا وَيَقُولُ الآخَرُ اللّهُمّ أَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا.
প্রতিদিনই দুজন ফেরেশতা নেমে আসেন। তাদের একজন দোয়া করেন- আল্লাহ! যে দান করে তাকে আপনি আরও দিন। অপরজন দুআ করেন- আল্লাহ! যে ধনসম্পদ আঁকড়ে ধরে রাখে, তার সম্পদ ধ্বংস করে দিন। -বুখারী : ১৪৪২।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে বেশি বেশি দান সদকা করে সৌভাগ্যবানদের তালিকায় নাম লিপিবদ্ধ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
মন্তব্য করুন: