প্রকাশিত:
২৫ মার্চ ২০২৪, ১৫:৪০
২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন কালজয়ী রাজনৈতিক নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তরুণ প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতা দিবস মানে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা, নির্ভীক যোদ্ধা হওয়ার স্পৃহা, জীবনের গতিপথ বদলানো ও নতুন শপথ নেওয়ার সাহস। এটি শুধু একটি দিবস হিসেবে নয়, বিশ্বের বুকে স্বাধীন জাতি হিসেবে গড়ে ওঠার শপথে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করার দিন।
মহান এই ৫৪তম স্বাধীনতা দিবসে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত তরুণ মেধাবীদের শিক্ষার্থীদের ভাবনা, অভিপ্রায় ও মতামত তুলে ধরেছেন “নাগরিক সংবাদ” এর ক্যাম্পাস প্রতিনিধি রবিউল আলম।
“অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষাই স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য”
ফরহাদ মো: ফাহিম
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
স্বাধীনতা শুধুমাত্র একটি দিবস নয় বরং একটি জাতির জীবনের গতিপথ পরিবর্তনের এবং নতুন আঙ্গিকে প্রাণে শক্তি সঞ্চারের উৎস। পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্তির নামই হচ্ছে স্বাধীনতা অর্জন; যা বাঙালি জাতি দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জন করেছিল। তাই এই মহান স্বাধীনতা দিবসে শিক্ষার্থীদের মনে তৈরি হয় নতুনভাবে সমাজ গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয়। অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করায় হচ্ছে স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য। দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সৃষ্টির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের মর্যাদা সমুন্নত করার মাধ্যমে অপশক্তির হাত থেকে দেশের অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করায় শিক্ষার্থীদের মূল চাওয়া।
“সত্যিকার অর্থে কি আমরা স্বাধীন?”
মো: মনিরুজ্জামান
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
চিন্তায়-চেতনায়-বোধে-মননে ১৯৭১ সালে বাঙালি যেভাবে দৃঢ়চিত্তে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিল পাকিস্তানি আগ্রাসন থেকে মুক্তি পাবার তারই প্রতিফলন আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। তবে একজন নাগরিক তার নাগরিক সুবিধা ও অধিকার কতটুকু উপভোগ করতে পারছে, স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরে এসেও সে প্রশ্ন জনমনে জাগে। বর্তমান প্রেক্ষাপট, আমাদের বিবেক, স্বাধীনতা নিয়ে বারংবার প্রশ্ন তুলে; সত্যিকার অর্থেই কি আমরা স্বাধীন? আমরা কী আদৌ দুঃখ-দৈন্য, নিয়ম-অনিয়ম, প্রাকৃতিক মহামারি, অত্যাচার-শোষণের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি? আর কিছু নয়, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, সন্ত্রাস, স্বজনপ্রীতি এগুলোই বাঙালির চরম শত্রু। দেশের মানুষের জীবনযাত্রা সে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেয়। নিত্যপণ্য সমূহের চড়া মূল্যে সম্ভ্রান্ত শ্রেণির লোকজন স্বাচ্ছন্দ্যে বাস করতে পারলেও মাঠ পর্যায়ের মানুষজন দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত। দেশ বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন এবং আকাশচুম্বী বাজেট নির্ধারণ করে যাচ্ছেন। যার রেশ টানতে হয় সমাজের অপেক্ষাকৃত অনগ্রসর মানুষদের। ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং বেকারত্বমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হোক। অক্ষত থাকুক আমাদের স্বাধীনতা।
“ প্রকৃত কলম সৈনিকগুলো মুক্তি পাক”
মো: বশির উদ্দিন
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
সৃষ্টির প্রারম্ভ থেকেই মানব জাতি স্বাধীনচেতা, কৌতুহলী ও প্রতিবাদীসূলভ আচরণ নিয়ে আবির্ভূত। তবে বর্তমান আধুনিকতার ছোঁয়ায় স্বাধীনচেতা কলম সৈনিকেরা তা সর্বত্র ছড়িয়ে দিচ্ছে। এই আধুনিক যুগে আশা-আকাঙ্খা, যুক্তি তর্ক, বাদী-বিবাদী, উর্ধতন-অধঃতন ও অনলাইন প্লাটফর্মে যেদিকে একটু নজর যায় সেদিকেই কলম সৈনিকগুলো একটু ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছে গেছে। ভিন্ন-মাত্রা কী? এই তো মনের আকুতি, বেদনা, বিভিন্ন দাবি-দাওয়া কিংবা বেঁচে থাকার লড়াইকে তারা পত্র পত্রিকায় বা বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে কলমের মাধ্যমে তুলে ধরার জোর প্রচেষ্টা চালায়। তবে কলম সৈনিকগুলো কি স্বাধীন? ডিজিটাল সিকিউরিটি বা আইসিটি মামলা নামের আইন দিয়ে সেই কলম সৈনিকদের অধিকারটুকু বাকরুদ্ধ করা হচ্ছে নাতো প্রতিনিয়ত? বিভিন্ন পত্র পত্রিকা খুললেই দেখা মেলে প্রথম সারির হেডলাইনে “অমুক ব্যক্তি আটক, তমুক ব্যক্তি প্রতিবাদী, অমুক ব্যক্তির সাজা ইত্যাদি”। স্বাধীনতা দিবসে কলম সৈনিকগুলো মুক্তি পাক। প্রকৃত বাক-স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
“স্বাধীনতার পূর্ণ স্বাদ পাক নারীসমাজ”
তাহারিনা জান্নাত প্রমি
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
"স্বাধীনতা"- যা কেবল একটি শব্দ নয়, এক আকাশ সম অনুভূতি আর হাজারো মানুষের বেঁচে থাকার স্পৃহা। আর যদি প্রসঙ্গ আসে নারী স্বাধীনতার কথা তবে তা নারীর মুক্তির মূলমন্ত্র। এই একটি শব্দের জাদুবলে কর্ম, চিন্তা এবং মননে পুনর্জ্জীবিত হোক নারী সমাজ। বয়ে আনুক আমূল পরিবর্তন। হয়ে উঠুক শেক্সপিয়রের লেখনীর সেই মা, যিনি একটি শিক্ষিত জাতির রূপকার। ভেঙে গুঁড়িয়ে যাক সমাজের চোখে নারীর প্রতি সকল বদ্ধমূল ধারণা। স্বাধীনতার এই দিবসের প্রতিপাদ্য হোক, "স্বাধীনতার পূর্ণ স্বাদ পাক নারীসমাজ।"
“দেশমাতৃকা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা হোক আমাদের ব্রত”
এসএইচ জাহিদ
শিক্ষার্থী, শাবিপ্রবি
স্বাধীনতা অর্থ পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত। শব্দটি অর্জনে আমাদের রয়েছে দীর্ঘদিনের বিপ্লবী ইতিহাস। নয় মাসের চূড়ান্ত সংগ্রামে অর্জিত বিজয় আমাদেরকে নতুন লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে। স্বাধীনতা দিবস আসলেই মনে জাগ্রত হয় দেশের সেবায় নতুন কিছু করার ইচ্ছা। যে স্বপ্নকে বুকে লালন করে দেশের জন্য যারা শহিদ হয়েছেন। সেই শহিদদের চেতনাকে স্বরণ করে দেশমাতৃকার সেবা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করায় হোক আমাদের ব্রত।
"স্বাধীনতা একটি কাল্পনিক শব্দ মাত্র"
রবিউর রহমান রবি
শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। কবির ভাষায়- কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে আমাদের সব দুঃখ জমা দেবো যৌথ খামারে, সম্মিলিত বৈজ্ঞানিক চাষাবাদে সমান সুখের ভাগ সকলেই নিয়ে যাবো নিজের সংসারে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর এসে এই শব্দটির জায়গা ডিকশনারিতে ছাড়া আর কোথাও সন্ধান মিলে না। অর্থনৈতিক অসময় বন্টন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও সামাজিক অসমতা সহ নানাবিধ প্রশ্নে আজ স্বাধীনতা শব্দটা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠে। এই কাল্পনিক শব্দকে আমাদের বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত করার অহেতুক চেষ্টা হয়তো আমাদেরকে আজীবন ভুগাবে।
“ছাত্র সমাজ দায়িত্ব পালনে ব্রতী হোক”
মুমিন সাগর
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এই গৌরবান্বিত অহংকার দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শহিদদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞ। স্বাধীনতার সুফল ভোগ করার পাশাপাশি দেশ গঠনে আমাদের অর্থাৎ ছাত্র সমাজ দায়িত্ব পালনে ব্রতী হওয়া লাগবে। স্বাধীনতার মূল্যবোধ ধারণ করে জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে দেশকে উন্নত করতে হবে। সম্প্রীতি ও ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। নারী মুক্তি, পরিবেশ রক্ষা, বাক স্বাধীনতা ইত্যাদি সেক্টরে নজরদারি করতে পারলে এবং নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তোলাই প্রকৃত স্বাধীনতা।
“আমরা প্রকৃত স্বাধীন হতে চাই”
জান্নাতুল ফেরদৌস
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
‘একাত্তর’ মানে অসংখ্য দেশ প্রেমিক শহিদদের আত্মদানের, নৃশংস হত্যাকাণ্ড, সন্তান হারা মায়েদের আর্তনাদ ও স্বকীয়তা ফিরিয়ে পাবার স্পৃহা। বাঙালি জাতির সূর্যসন্তান বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে সকল বর্ণ এবং পেশার মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম হয়। তবুও আমাদের সকলের মনে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, আমরা জাতি হিসেবে কতটা স্বাধীন? আমরা কি পারছি স্বাধীনভাবে বাঁচতে? আমরা পারছি কি আমাদের এ স্বাধীনতা রক্ষা করতে? প্রকৃত পক্ষে স্বাধীন হতে চাইলে আমাদের সংবিধানের মৌলিক অধিকার গুলো যথাযথ প্রয়োগ হওয়া চাই। আমরা প্রকৃত স্বাধীন হতে চাই। মানুষের বেঁচে থাকাটা যেন অর্থবহ হয়, জীবনটা যেন কষ্টের বেড়াজালে আটকে না যায় সেই জন্য আমাদের এ লড়াই।
“শোষণ মুক্ত দেশ গড়ি”
শাহ বিলিয়া জুলফিকার
শিক্ষার্থী, জাককানইবি
২৫শে মার্চ, এক ভয়াবহ রাতের স্মৃতি, এক জাতির অদম্য সাহসের প্রতীক।একদিকে, পাক হানাদারদের নির্মম অত্যাচার, নিরস্ত্র মানুষের উপর গণহত্যা।অন্যদিকে, ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা; মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের গাথা। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর অর্জিত স্বাধীনতা আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। কিন্তু স্বাধীনতার সুফল কি সকলেই সমানভাবে ভোগ করছে? দারিদ্র্য, বৈষম্য, দুর্নীতি - এই সব অভিশাপ এখনো আমাদের পিছু ছাড়ছে না। তাহলে স্বাধীনতার সত্যিকার অর্থ কি শুধু লাল-সবুজ পতাকা উড়ানো?না, স্বাধীনতার অর্থ সকলের জন্য ন্যায়বিচার, সকলের জন্য সমৃদ্ধি। আসুন, এই স্বাধীনতা দিবসে আমরা সকলে মিলে একটি সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিই।স্বাধীনতার সত্যিকার অর্থ পূরণের জন্য কাজ করি। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে আসুন; আমরা একটি সুন্দর, সমৃদ্ধ ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
“স্বাধীনতা দিবসে প্রত্যয় হোক চেতনাকে ধারণ”
শাকিবুল হাসান
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
স্বাধীনতা দিবসের মর্ম আজকের সময়ের প্রজন্ম কতটুক বুঝতে পারে তা জানা নেই৷ আজ আমরা চেতনার ইতিহাস কে ভুলে যেতে বসেছি৷ স্বাধীনতা দিবসের ব্যানারে থাকে ভাষা শহিদের নাম, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শহিদ হওয়া বুদ্ধীজীবিদের স্বরণে নির্মিত মঞ্চে বসন্ত বরন উৎসব হয়৷ স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সোনার দেশের সোনার মানুষ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তা আজ ও প্রতিষ্ঠিত হয়নি৷ দেশের কাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু চেতনাগত, মানসিক উন্নয়ন ঘটেনি৷ আমাদের পূর্বপুরুষরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক হয়ে যে দেশ স্বাধীন করলো সেই স্বাধীন দেশে বসবাস করে আমরা একে অপরের শত্রু হই৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের মত এত বৃহৎ জায়গাতে পড়াশুনো করেও উদারতার পরিচয় দিতে আমরা ব্যর্থ৷ একে অপরকে সহযোগিতা করার বিপরীতে আমরা অন্যকে নিচে নামানোর যুদ্ধে নামি৷ দেশে বেকার জনবল বাড়াই, দেশের ক্ষতি করি৷ তাই স্বাধীনতা দিবসে আমাদের প্রত্যয় এমন হওয়া উচিত আমাদের চেতনাগত, মানসিক উন্নয়ন করে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করা৷ তবেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশের সোনার মানুষ প্রতিষ্ঠিত হবে৷
মন্তব্য করুন: