বুধবার, ২৭শে নভেম্বর ২০২৪, ১৩ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • ২৫ শহীদ পরিবারকে ৮ লাখ টাকা করে অনুদান প্রদান
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে সুখবর দিলো বিআরটিএ
  • রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ
  • গণমাধ্যমে হামলা-ভাঙচুর হলে ব্যবস্থা
  • কঠোর হতে চায় না সরকার, আমরা চাই শান্তিপ্রিয় সমাধান
  • বুড়িচংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত
  • নিম্নচাপে উত্তাল সাগর, ৪ সমুদ্রবন্দরে সতর্কসংকেত
  • ঢাকার যে ৫ এলাকায় আজ বেশি বায়ুদূষণ
  • সংঘর্ষে না জড়িয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের
  • যাত্রাবাড়ী-ডেমরায় ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

অধ্যাপক ছাড়াই চলছে ইবির ১৪টি বিভাগ

রবিউল আলম , ইবি

প্রকাশিত:
৩০ মার্চ ২০২৪, ১৬:৪৩

বর্তমান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ৩৬ বিভাগ নিয়ে নিজস্ব শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে ১৪টিতে নেই কোনো স্থায়ী অধ্যাপক। যার ফলে ভালো মানের গবেষণা, অভিজ্ঞ শিক্ষকদের পাঠদান ও মানসম্মত উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত এসব বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও অধ্যাপক পদে হয়নি। কয়েকটি বিভাগ অধ্যাপক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও ন্যূনতম আবেদন না পড়ায় পরবর্তীতে পদগুলোতে প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান মফস্বল এলাকায় এবং ভিন্ন জায়গায় একই চাকরিতে ভালো সুযোগ সুবিধা থাকায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে চান না অধ্যাপকরা। এ ছাড়াও ইবিতে শিক্ষক রাজনীতির প্রভাব থাকায় গবেষণাপ্রেমী যোগ্য প্রার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চাকরি করতে চান না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে আটটি অনুষদভুক্ত মোট ৩৬টি বিভাগ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ২২টি বিভাগে অধ্যাপক রয়েছে ২৪৪ জন, সহযোগী অধ্যাপক রয়েছে রেজিস্ট্রার অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ১৪টি বিভাগে ৫৪ জন, সহকারী অধ্যাপক রয়েছে ২২টি বিভাগে ৭৫ জন এবং ১০টি বিভাগে মোট প্রভাষক রয়েছেন ২০ জন।

তবে ২২টি বিভাগে ২৪৪ জন অধ্যাপক থাকলেও সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগ, সমাজকল্যাণ বিভাগ, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগ, আইন অনুষদভুক্ত ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত মার্কেটিং বিভাগ, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগ, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগ, প্রকৌশল অনুষদভুক্ত বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং জীববিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ফার্মেসি বিভাগ, কলা অনুষদভুক্ত ফাইন আর্টস বিভাগে এখনও কোনো অধ্যাপক নেই।

এদিকে ফাইন আর্টস এবং শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগ দুটিতে অধ্যাপক ছাড়াও নেই কোনো সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক। তবে ফার্মেসি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ৪ জন থাকলেও শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন ৩ জন।

এ বিষয়ে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক এইচ এম নাহিদ বলেন, ‘আমি অধ্যাপকের চেয়ে একটি বিভাগে অবকাঠামোর গুরুত্ব বেশি বলে মনে করি। অবশ্যই একজন অধ্যাপক যে সার্ভিস দিতে পারবে তা সবাই পারবে না, তবে অনেক ক্ষেত্রে ইচ্ছাশক্তির ওপর বিষয়গুলো নির্ভর করে। আমরা নানান সংকটের মধ্যে দিয়েও আমরা আমাদের ক্লাস পরীক্ষা চলমান রেখে আমাদের শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নিচ্ছি।’

ফাইন আর্টস বিভাগে কোনো অধ্যাপক না থাকায় বিভাগটিতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এএইচএম আক্তারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘বিভাগে সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পরে আমি যতটুকু শুনেছি, বিভাগে শেষ দুইবার যে নিয়োগ হয়েছে দু’বারই সিনিয়র পদের সার্কুলার ছিল। সে সময় কোনো আবেদন না থাকায় পদগুলোতে প্রভাষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একটি বিভাগ থাকার মানে হচ্ছে সে বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক ৪টি পদই জরুরি।’

তিনি আরও বলেন, ‘একজন সদ্য পড়াশোনা শেষ করা প্রভাষক আর একজন অধ্যাপকের মধ্যে অনেক তফাৎ। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও অনেক কিছু শেখার বিষয় থাকে।’

একজন অধ্যাপক এবং একজন প্রভাষকের কাছে শিক্ষার্থীরা যে জ্ঞান অর্জন করে তাদের মধ্যে কোনো তারতম্য হয় কিনা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. আব্দুল মুঈদ বলেন, ‘একজন প্রভাষক আর অধ্যাপকের পাঠদানের মধ্যে তারতম্য তো রয়েছেই। এমন তো না একটা মানুষ হুট করে অধ্যাপক হয়ে গেল। তাকে কিন্তু ১০-২০ বছর বিভিন্ন অভিজ্ঞতার ধাপ পার হয়েই এই জায়গায় আসতে হয়। এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে শিক্ষার্থীরা অনার্স-মাস্টার্স পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে যাচ্ছে অথচ কোনো অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষকের পাঠদান পায়নি।’

তিনি বলেন, ‘তাই মন চাইলেই একটি বিভাগ খোলা উচিত না। যদিও এতে আইনি কোনো অসুবিধা নেই, তবে নীতিগতভাবে নিয়ম হচ্ছে বিভাগটিতে শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়ার আগে প্রথমে অধ্যাপক নিয়োগ দেওয়া। নিয়োগ পাওয়ার পরে সেই অধ্যাপক এক বছর ধরে কারিকুলাম সাজাবে, তৈরি করবে এবং কোর্স ডিজাইন করবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এইম আলী হাসান বলেন, ‘আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সরাসরি অধ্যাপক পদে কারও নিয়োগ হয় না, পদোন্নতির মাধ্যমে শিক্ষকরা এটি পেয়ে থাকেন। তবে আমরা কয়েকটি বিভাগে কয়েকবার অধ্যাপক পদে নিয়োগের সার্কুলার ছাড়লেও কোনো আবেদন আসেনি। এখন বিভাগগুলো যদি পদ খালি থাকা সাপেক্ষে প্লানিং করে নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট আবেদন করে তাহলে আমরা আবার সার্কুলার ছাড়তে পারি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত আসে সাধারণত বিভাগগুলোর প্ল্যানিং কমিটি থেকে। অধ্যাপক পাওয়া যেহেতু কঠিন। তাই আমরা চেষ্টা করি নিচের দিকের পোস্টগুলোতে নিয়োগ দেওয়ার, কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র দু’টি। কোনো বিভাগে অধ্যাপক নেই আবার কোনো বিভাগে শুধু অধ্যাপক আছে লেকচারার নেই। এ নিয়ে বিভাগগুলোর কোনো উদ্যোগও আমি দেখি না।

‘এখন পর্যন্ত যেসকল বিভাগে অধ্যাপক আছে লেকচারার নেই এমন কোনো বিভাগ থেকে ফাইল আসেনি, তবে কিছু বিভাগের কথা আমি শুনেছি যে তারা অপেক্ষায় আছেন কখন তারা অধ্যাপক বা সহযোগী অধ্যাপক এর যোগ্যতা অর্জন করবেন। তারপরেই তখন এই বিষয়ে উদ্যোগ নিবেন।’

তিনি আরও জানান, ‘আমরা শিক্ষক নিয়োগের সার্কুলার ছাড়লেও তেমন কোনো সাড়া পাই না। শেষ যে বিভাগে নিয়োগ ছিল সেখানেও মাত্র তিনটি আবেদন পেয়েছিলাম। কিন্তু পরীক্ষা দিয়েছিল ২ জন।’

শিক্ষক নিয়োগে আবেদন না করতে চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘প্রথমত হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়টি মফস্বলে, দ্বিতীয়ত একই বিষয়ে ভিন্ন জায়গায় ভালো সুযোগ।’

অধ্যাপকের মাধ্যমে পাঠদান না পাওয়া শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জ্ঞানের ঘাটতি থাকছে কি না তা এভাবে বলা যাবে না। কারণ আমাদের নতুন যারা শিক্ষক অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, লেকচারার এরাও তো অত্যন্ত ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট, তবে হ্যাঁ অভিজ্ঞতা বলে একটা জিনিস থাকে একজন অধ্যাপক বা গার্ডিয়ানের বয়সী একজন বিভাগে থাকলে বহু সমস্যার সমাধান সম্ভব হতে পারে।’


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর