প্রকাশিত:
৩০ মার্চ ২০২৪, ১৭:১২
সরকারি ও বেসরকারি খাতে ভূমিকা রাখা উদীয়মান নারীদের অংশগ্রহণে, দক্ষতা ও নেতৃত্বের মাধ্যমে একটি সমতার বিশ্ব গড়ার আহ্বান জানানো হয় ‘উইমেন ইন লিডারশিপ’ শীর্ষক সামিটে।
শনিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর একটি হোটেলে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহায়তায় ‘উইমেন ইন লিডারশিপ’ প্রকল্পের অধীনে ওয়েভ ফাউন্ডেশন এই সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে আরো অংশীদারত্ব ছিল বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস উইমেন নেটওয়ার্ক (বিসিএসডাব্লিউএন) ও ক্লোর সোশ্যাল লিডারশিপ ইউকে-এর।
বিসিএসডাব্লিউএন এবং যুব নারী পেশাজীবীদের প্রকল্প প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের সদস্য, শিক্ষার্থী এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা এতে অংশগ্রহণ করেন।
সামিটে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী ও সংসদ সদস্য আরমা দত্ত। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (একাডেমিক) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস উইমেন নেটওয়ার্কের মহাসচিব সায়লা ফারজানা, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের সিনিয়র প্রগ্রাম ম্যানেজার তামিম মোস্তফা। সামিটে বিষয়ভিত্তিক দুটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আরমা দত্ত বলেন, ‘উন্নত দেশ গড়তে নারীর সমান অংশগ্রহণ, নারীর দক্ষতা বৃদ্ধি ও তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে জেন্ডার সমতা রক্ষার সময় এসেছে।
’অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ‘দুর্যোগের কারণে নারীরাই বেশি সমস্যার সম্মুখীন হয়। তা সত্ত্বেও নারীরাই চ্যাম্পিয়ন। লোকায়ত শিক্ষার মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণে নারীরাই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে। অংশগ্রহণ ও জ্ঞানের বিস্তরণে সংযোগ স্থাপন করতে হবে।
’অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানা বলেন, ‘ক্যাডার সার্ভিসের মধ্যে জেন্ডার সমতা ও নারী নেতৃত্ব নিশ্চিতের লক্ষ্যে বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের ভিশন ও মিশনের সমন্বয় ব্রিটিশ কাউন্সিলের সঙ্গে অংশীদারিমূলক এই কর্মসূচিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকে নিয়ে গিয়েছে। এই কর্মসূচি সামনে রেখে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। নারীকে পিছিয়ে রাখা এবং দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে নেতৃত্ব বিকাশে সবাইকে সংবেদনশীল আচরণ, কথা বলার চর্চা, সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।’
প্রকল্পের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে গিয়ে ঢাকার স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম ও শেরপুরের ঝাজর বিলনোতর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল মাওয়া উভয়েরই বক্তব্যে কর্মক্ষেত্রে, ব্যাবহারিক জীবনে কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাঠামোগতভাবে কোর্সগুলোর গুরুত্ব উঠে আসে।
মহসিন আলী বলেন, ‘সমতা এবং ন্যায্যতার মাধ্যমে আমাদের ক্ষমতা প্রয়োগের দিকটি ভাবতে হবে।
নারীর অধিকারপ্রাপ্তি ও নেতৃত্ব বিকাশে সবাইকে একযোগে কাজ করার জন্য জেন্ডার সংবেদনশীল হয়ে সর্বস্তরের অংশগ্রহণে আর্থ-সামাজিক, সুশাসন ও অধিকার নিশ্চিতে কাজ করে যেতে হবে।
তামিম মোস্তফা বলেন, ‘আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে যৌথভাবে কাজ করছি। লিঙ্গসমতা যদি নিশ্চিত না হয়, তবে ২০৪১ সালের যে উন্নত রাষ্ট্রের ভিশন সেটা অর্জিত হবে না। সে জন্য নারী নেতৃত্বকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে যেতে হবে।’
ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রগ্রাম ম্যানেজার মো. আব্দুর রহমান খান এবং ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রকল্প সমন্বয়কারী খালেদা আক্তার প্রকল্পের কার্যক্রম উপস্থাপন করেন। সঞ্চালনা করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপসমন্বয়কারী কানিজ ফাতেমা।
উদ্বোধনী অধিবেশনের পর ‘অংশগ্রহণ, দক্ষতা ও নেতৃত্বে গড়বো সমতার বিশ্ব’ এবং ‘নারীর অগ্রযাত্রায় বিনিয়োগ’ শীর্ষক দুটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্যানেল আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সানজিদা আক্তার; জেন্ডার অ্যান্ড সোশ্যাল ইনক্লুশন বিশেষজ্ঞ বাবেয়া রওশন; পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করোনা সেলের মহাপরিচালক সৈয়দা জেসমিন সুলতানা মিল্কি; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক বেনজীর এলাহী মুন্নী; জাতীয় শিক্ষাক্রম ও টেক্সটবুক বোর্ডের সম্পাদক উর্মিলা খালেদ, গ্রামীণ ফোনের হেড অব সার্ভিস ডেলিভারি শায়লা রহমান, নারায়ণগঞ্জের উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার মৌরীন করিম, চাঁদপুরের জ্যেষ্ঠ উপজেলা ফিশারিজ অফিসার মনোয়ারা বেগম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসমিয়া হক মৌসুমী প্রমুখ।
‘উইমেন ইন লিডারশিপ সামিট’ হলো বাংলাদেশে উইমেন ইন লিডারশিপ কর্মসূচির সমাপনী অনুষ্ঠান। এ উদ্যোগের লক্ষ্য হলো নারী নেতৃত্ব বিকাশ এবং নারীদের ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়াকে অগ্রসর করা। ৫০ জন নারী অংশগ্রহণকারী এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন, যাদের মধ্যে ছিলেন বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের ৩০ জন এবং ব্রিটিশ কাউন্সিল অ্যালামনাই থেকে ২০ জন যুব নারী পেশাজীবী। অনলাইন প্রশিক্ষণ, নেটওয়ার্কিংসহ ডিজিটাল ফেলোশিপের মাধ্যমে তাদের নেতৃত্বের ক্ষমতা এবং দক্ষতা বিকাশ, মেন্টরশিপ এবং সহযোগিতার সুযোগ, জেন্ডার সমতার ওপর ৮টি সপ্তাহের একটি স্ব-মূল্যায়নভিত্তিক অনলাইন লিডারশিপ প্রশিক্ষণের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক আটটি মেন্টরিং সেশন এবং আটটি লাইভ ওয়েবিনার ছিল এ প্রগ্রামের মূল কার্যক্রম।
মন্তব্য করুন: