প্রকাশিত:
৩১ মার্চ ২০২৪, ১৫:৪৩
নাজাত শব্দের অর্থ মুক্তি। পবিত্র রমজান মাসের প্রথম ২ অংশ তথা রহমত ও মাগফিরাতের ২০দিন সিয়াম সাধনার পর রোজাদাররা পরম প্রাপ্তির পর্যায়ে পৌঁছে যান। বান্দার জন্য জাহান্নামের আগুন ও শাস্তি থেকে মুক্তির চেয়ে বড় পাওনা আর কিছু নেই। নবী করীম (সা.) বলেন, রমজানের প্রথম ১০দিন রহমতের, পরের ১০দিন মাগফিরাত লাভের ও শেষের ১০দিন হল জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের। শুরু হচ্ছে বান্দার পাপ মোচনের সময়। বান্দার কৃত পাপের ক্ষমা করার জন্য মহান রাব্বুল আলামীন রমজান মাসকে প্রতিবছর বান্দার জন্য একটি মোক্ষম সুযোগ হিসেবে প্রেরণ করেন। যার কারণের তারা স্রষ্টার নৈকট্য লাভ করে ধন্য হতে পারে। মুসলমানরা মাহে রমজানকে নিজের জীবন নিষ্পাপ পুণ্যময় করার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে।
রমজান মাস যখন শুরু হলে মহান রাব্বুল আলামীন এই মাসের প্রথম রাতেই দশ লক্ষ বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। যাদের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে রয়েছে, এমন সব গুণাহগারদের মাফ করে দেন তিনি। আর নাজাতের সময়ে পবিত্র লাইলাতুল কদরের রাতে অগণিত বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। পবিত্র মাহে রমজানের ২৯তারিখ রাতে সারা মাসের যত মাফ করা হয়েছে তার দ্বিগুণ, আর ঈদের রাতে আরো দ্বিগুণ সংখ্যক বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন। এমন সুসংবাদ জানা যায় হাদীস থেকে। সেইসাথে কবীরা গুনাহের জন্য তওবা করে ক্ষমা প্রার্থনার কথাও বলা হয়েছে। পবিত্র মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের জন্য গুনাহ মাফের এক সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
রমজানের প্রথম দশকে মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দাকে রহমতের বারিধারা বর্ষণ, মাগফিরাত ও ক্ষমার উপযোগী করে তুলে। আর দ্বিতীয় দশকে ক্ষমা করে, শেষ দশকে বান্দার জন্য নাজাতের ফায়সালা করেন। হাদিস শরিফে নাজাতের এই সময়কে ‘ইতক্বুম মিনান নার’ বা জাহান্নাম থেকে মুক্তির দশক বলা হয়েছে।
হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত একটি হাদীস থেকে জানা যায়, যখন রমজানের শেষ ১০ রাত আসত, তখন নবী করিম (সা.) কোমরে কাপড় বেঁধে নেমে পড়তেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত জেগে থাকতেন। আর পরিবার-পরিজনকেও তিনি জাগিয়ে দিতেন।
মুসলিম শরীফে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত অন্য একটি হাদীসেবলা হয়, ইন্তেকাল পর্যন্ত নবী করীম (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন, এরপর তাঁর স্ত্রীরাও ইতিকাফ করেছেন। এ সময় তিনি আল্লাহর ইবাদতে মসজিদে নির্জন বাস করতেন। দুনিয়াবি সব ধরনের সম্পৃক্ততা থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করতেন, ইবাদতে মশগুল থাকতেন।
নাজাতের এই সময়ে ইতিকাফের মাহাত্ম্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একজন আলেম বলেন, মসজিদের ইতিকাফ হচ্ছে হৃদয়ের প্রশান্তি, আত্মার পবিত্রতা ও চিত্তের নিষ্কলুষতা। চিন্তার পরিচ্ছন্নতা ও বিশুদ্ধতা। ফেরেশতাকুলের গুণাবলি অর্জন এবং লাইলাতুল কদরের সৌভাগ্য ও কল্যাণ লাভসহ সব ধরনের ইবাদতের সুযোগ লাভের সর্বোত্তম উপায়। এ জন্য রাসুল (সা.) নিজে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইতিকাফ পালন করেছেন এবং তাঁর বিবিরাসহ সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই এই সুন্নতের ওপর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আমল করেছেন।
রমজানের প্রথম দুই দশকের গুরুত্ব ও ফজিলত থাকলেও শেষ দশকের গুরুত্ব ও ফজিলত আরো অনেক গুণ বেশি। কেননা এ দশকেই রয়েছে পবিত্র রজনী লাইলাতুল কদর। শবে কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। অর্থাৎ এক হাজার মাস ইবাদত করলে যে সওয়াব হতে পারে, এই রাতের ইবাদতে তার চেয়েও বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে।
রমজানের শেষদিকে যে দোআগুলো বেশি বেশি পড়বেন:-
ক. ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি।’ অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাস অতএব আমাকে ক্ষমা করে দাও।’ -ইবনে মাজাহ।
খ. রাব্বানা মা খালাকতা হাযা বাতিলান সুবহানাকা ফাকিনা আযাবান্নার।’ অর্থ ‘হে আমাদের প্রভু-প্রতিপালক! তুমি এ (বিশ্বজগতকে) বৃথা সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র। সুতরাং তুমি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা কর।’ -সুরা আল ইমরান : ১৯১।
গ. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি।’ অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাস অতএব আমাকে ক্ষমা করে দাও। -মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ।
ঘ. ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাঁও ওয়াকিনা আযাবান্নার।’ অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু-প্রতিপালক! আমাদেরকে ইহকালেও এবং পরকালেও কল্যাণ দান কর আর আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা কর।’ -সুরা বাকারা : ২০১।
ঙ. ‘রাব্বি ইন্নি যালামতু নাফসি ফাগফিরলি।’ অর্থ: ‘হে আমার প্রভু! নিশ্চয় আমি আমার আত্মার ওপর অত্যাচার করেছি। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা কর।’ - কাসাস : ১৬।
আসুন, রমজানের এই শেষ দশকে অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি দোয়ার প্রতিও অনেক বেশি জোর দেই আর দয়াময় প্রভুর দরবারে সকাতর প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের দোয়া গ্রহণ করে আমাদেরকে ক্ষমা করেন, আমিন।
মন্তব্য করুন: