প্রকাশিত:
৩১ মার্চ ২০২৪, ১৭:০০
তুরস্ক সেনাবাহিনীর অধীনে লোক নিয়োগের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন কামরুল হাসান (৬৫) ও মো. ফাহাদ হাসান সিয়াম (২৭)। সম্পর্কে তারা বাবা-ছেলে।
তাদের গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
শনিবার (৩০ মার্চ) নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ। এ সময় তাদের কাছ থেকে চারটি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ভিজিটিং কার্ড, প্যাড সিল, দুটি কম্পিউটার, বিদেশে পাঠানোর জন্য ভুয়া নিয়োগপত্র ও ভিসা জব্দ কর হয়।
রোববার (৩১ মার্চ) রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে কামরুল ও সিয়ামের সঙ্গে পরিচয় হয় সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বাসিন্দা সহিদুল ইসলামের। তাকে তুরস্কে সরকারিভাবে সেনাবাহিনীর অধীনে অনেক লোক নিয়োগ করা হবে বলে জানান কামরুল হাসান। সহিদুলকে সেখানে চাকরি দিতে পারবেন জানিয়ে প্রস্তাব দেন কামরুল। এও বলেন, তুরস্কে গিয়ে এ চাকরি করে ভালো বেতন পাবেন।
কামরুলের প্রস্তাবে রাজি হন সহিদুল। তুরস্কে যেতে তাকে ৭ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেন কামরুল। পরে তাকে সাড়ে তিন লাখ টাকা দেন সহিদুল।
এ ছাড়া ২০২০ সালের ৭ মে কামরুল ও তার ছেলে সিয়ামকে ২০ ব্যক্তি ২ লাখ ৩০ হাজার করে টাকা দেন। বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের মেডিকেলও করান তারা। কয়েকদিন পর বাবা-ছেলে মিলে সহিদুলসহ বাকি ২০ জনকে জানান, তুরস্কে এখন লোক পাঠানো যাবে না। সবাইকে মালয়েশিয়া ও সার্বিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হবে। এ কথার মাধ্যমে সবার কাছ থেকে আরও ৩২ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেন কামরুল ও সিয়াম। কিন্তু কাউকেই বিদেশে পাঠাতে পারেননি তারা।
রাজধানীর ওয়ারীতে বাবা-ছেলের অফিসে ছিল। সেখানেই ভুক্তভোগীদের সঙ্গে তাদের আর্থিক লেনদেন হয়। ওই অফিস বন্ধ করে পালিয়ে যান কামরুল ও সিয়াম। পরবর্তীতে সহিদুলের পুলিশে অভিযোগ করেন। সেটির ভিত্তিতেই কামরুল ও তার ছেলে সিয়ামকে গ্রেপ্তার করে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ইউনিট।
যেভাবে প্রতারণা করতেন বাবা-ছেলে
ডিবি প্রধান বলেন, কামরুল ও তার ছেলে সিয়াম ভুক্তভোগীদের বলতেন, তারা অন্তত পাঁচটি রিক্রুটিং এজেন্সির বৈধ লাইসেন্সধারী। প্রকৃতপক্ষে তাদের কোনো লাইসেন্স নেই। ভুয়া লাইসেন্স নম্বর ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলেছিলেন তারা। বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য তারা বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকায় অফিস ভাড়া নিতেন।
এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরকারিভাবে তুরস্ক, কানাডা, মালয়েশিয়া, সার্বিয়াসহ অন্যান্য দেশে লোক পাঠানোর জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নেন কামরুল ও সিয়াম। বিশ্বাস অর্জনের জন্য টাকা ও পাসপোর্ট নেওয়ার পর কিছু কিছু পাসপোর্ট তিনি বিভিন্ন বৈধ এজেন্টদের কাছে জমা দেন ভিসা করার জন্য। এগুলো দেখিয়েই পরবর্তীতে অন্যদের কাছ থেকে আরও টাকা নেন। এরপর ক্লাইন্টদের সঙ্গে নিজেরা যোগাযোগ বন্ধ করে দিতেন। কেউ টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিতেন তারা। একপর্যায়ে গোপনে তাদের অফিস পরিবর্তন করে ফেলতেন।
প্রতারণার শুরু হয়েছিল যেভাবে
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, কামরুল হাসান ১৯৯৮ সাল থেকে ১০ বছর মালয়েশিয়ায় কাটান। দেশে ফিরে ২০০১ সালে থেকে আল-রিফাত ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সিতে চাকির করেন। ২০২২ সালে এজেন্সিটির মালিক মারা যাওয়ার পর তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে নিজের বলে পরিচয় দিয়ে প্রতারণা শুরু করেন।
তিনি তুরস্ক, কানাডা, সার্বিয়া, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে লোক পাঠানোর কথা বলে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ জন বিদেশ গমনেচ্ছুদের কাছ থেকে পাসপোর্ট নিতেন। প্রার্থীদের মেডিকেল করানোর কথা বলে ১০ হাজার টাকা করে নিতেন। ভিসা প্রসেসিংয়ের কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১২ লাখ থেকে শুরু করে ৩০-৩৫ লাখ টাকা পর্যন্তও নিতেন।
গ্রেপ্তারের পর কামরুল ও সিয়ামের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ।
মন্তব্য করুন: