বুধবার, ২৭শে নভেম্বর ২০২৪, ১৩ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • ২৫ শহীদ পরিবারকে ৮ লাখ টাকা করে অনুদান প্রদান
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে সুখবর দিলো বিআরটিএ
  • রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ
  • গণমাধ্যমে হামলা-ভাঙচুর হলে ব্যবস্থা
  • কঠোর হতে চায় না সরকার, আমরা চাই শান্তিপ্রিয় সমাধান
  • বুড়িচংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত
  • নিম্নচাপে উত্তাল সাগর, ৪ সমুদ্রবন্দরে সতর্কসংকেত
  • ঢাকার যে ৫ এলাকায় আজ বেশি বায়ুদূষণ
  • সংঘর্ষে না জড়িয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের
  • যাত্রাবাড়ী-ডেমরায় ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

শহরে পরিবেশগত কারণে অটিজম সমস্যা বাড়ছে

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত:
২ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:৩৭

দেশে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর সংখ্যা অন্যান্য এলাকার চেয়ে শহরে অনেক বেশি। ২০১৩ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরে প্রতি ১০০ জনে তিনটি শিশুর অটিজম রয়েছে। গ্রামে গড়ে প্রতি ৭০০ জনে একজন। অর্থাৎ গ্রামের চেয়ে শহরে অটিজম শনাক্তের হার ২১ গুণ বেশি।


দেশে অটিজম নিয়ে অনেক গবেষণা হলেও এর সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। গবেষকরা শুধু এটুকু নিশ্চিত করেছেন যে এটি জিনগত সমস্যা। পরিবেশগত সমস্যার কারণে এই হার অনেক বেশি।

দেশে ঠিক কত শিশুর অটিজম রয়েছে, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এর সঠিক পরিসংখ্যান এখনো নেই।


তবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলমান প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ জরিপ অনুসারে, ১ এপিল পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত অটিজম সমস্যা থাকা শিশুর সংখ্যা প্রায় ৮৬ হাজার ১৪২। এর মধ্যে পুরুষ ৫২ হাজার ৮৩৮ জন ও নারী ৩৩ হাজার ২৫০ জন। এ ছাড়া হিজড়া সম্প্রদায়ে রয়েছে ৫৪ জন। অর্থাৎ অটিজম শনাক্ত ব্যক্তিদের ৬১.৩৩ শতাংশ পুুরুষ।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একসময় অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুকে বছরের পর বছর সমাজের সবার কাছ থেকে আলাদা করে রাখা হতো। সামাজিক কোনো আচার-অনুষ্ঠানে তাদের অংশগ্রহণ ছিল না। তবে এখন সেটি ধীরে ধীরে কমে এসেছে। বেশির ভাগই থাকছে চিকিৎসা বা শিক্ষার বাইরে। এ ক্ষেত্রে খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি।


এমন পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আজ মঙ্গলবার উদযাপিত হচ্ছে ১৭তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে—‘সচেতনতা-স্বীকৃতি-মূল্যায়ন : শুধু বেঁচে থাকা থেকে সমৃদ্ধির পথে যাত্রা’।

দেশে ২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম ও স্নায়বিক জটিলতা সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিশিষ্ট পরমাণুবিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়ার মেয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অটিজম বিশেষজ্ঞ ড. সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তাঁর উদ্যোগে ২০১১ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো অটিজমবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গঠিত হয় সাউথ এশিয়ান অটিজম নেটওয়ার্ক (এসএএএন), যার সদর দপ্তর করা হয় বাংলাদেশে। তাঁর চেষ্টাতেই বাংলাদেশে ‘নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিস-এবিলিটি ট্রাস্ট অ্যাক্ট ২০১৩’ পাস করা হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরোডিস-অর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) বিভাগের অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডু  বলেন, ‘অটিজমের কারণ জানতে আমরা বেশ কিছু গবেষণা করেছি। এতে দেখা গেছে, অটিজম মূলত জিনগত সমস্যা এবং পরিবেশগত কারণে এর মাত্রা বাড়ে। একসময় মনে করা হতো, ভিটামিন ডির ঘাটতি থাকার কারণে অটিজমের মাত্রা বাড়তে পারে। কিন্তু গবেষণায় এর প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বায়ুতে সিসার মাত্রা নিয়ে গবেষণা করেছি, কিন্তু এটি অটিজমের কারণ হিসেবে সম্পর্কযুক্ত মনে হয়নি। তবে বিভিন্ন জরিপে শহর অঞ্চলে অটিজমের মাত্রা বেশি পাওয়া গেছে। এর কারণ হিসেবে শহরে পরিবেশগত কিছু সমস্যাকে ধরা হয়।’

তিনি বলেন, ২০১৭ সালে বিএসএমএমইউয়ের অধীনে তিন বছরের কম বয়সী অটিজম আক্রান্ত শিশুদের ওপর করা এক জরিপে দেখা গেছে, অটিজমের মাত্রা এক হাজারে ১৭ জন। অটিজম আক্রান্ত চারজন ছেলে হলে একজন মেয়ে পাওয়া যাচ্ছে।

অটিজম সমস্যার ব্যক্তিদের সমাজের মূলধারায় আনা যাচ্ছে না কেন

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ  বলেন, ‘অটিজম নিয়ে বাংলাদেশের একটি কর্মকৌশল রয়েছে। তাদের মূলধারায় নিয়ে আসতে সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা বিশ্বের কাছে একটা উদাহরণ। তবে নীতির জায়গায় আমরা যত দূর এগিয়েছি, কাজের জায়গায় ততটা এগোতে পারিনি।’

ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা চাই অটিজমে আক্রান্ত যে শিশু ও ব্যক্তিরা রয়েছে তারা মূলধারায় আসুক। তারা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখুক এবং তাদের অধিকার নিয়ে মূলধারার মানুষের সঙ্গে বেঁচে থাকুক। কিন্তু সমস্যা হলো সামাজিক কুসংস্কার; অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা পোষণ করা।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। কোনো একটি একক প্রতিষ্ঠান, বিভাগ বা ব্যক্তির পক্ষে এটির সমাধান করা সম্ভব নয়। এখানে স্বাস্থ্য বিভাগের যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, তেমনি সমাজসেবা, শিক্ষা ও সুধীসমাজের গুরুত্ব রয়েছে। সংবাদমাধ্যমেরও গুরুত্ব রয়েছে। সবাইকে একসঙ্গে রেখে যদি কাজ করা যায়, তাহলে এটি কার্যকর হবে।’

অটিজম লক্ষণ প্রকাশ পায় দেড় থেকে তিন বছর বয়সে

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, গড়ে প্রতি ১২৫ শিশুর মধ্যে একজন অটিজমের উপসর্গ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। লক্ষণ প্রকাশ পেতে সময় লাগে দেড় থেকে তিন বছর।

ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডু বলেন, এসব শিশু অন্য শিশুদের সঙ্গে মিশতে চায় না, একা থাকতে পছন্দ করে, একা একা নির্দিষ্ট কিছু জিনিস নিয়ে খেলতে পছন্দ করে। স্বাভাবিক শিশুরা যে ধরনের খেলাধুলা করে, অটিজম আক্রান্তরা সে ধরনের খেলাধুলা করে না। অটিজম আক্রান্ত শিশুরা বোতল, ব্রাশ বা কাগজের টুকরা নিয়ে খেলাধুলা করে। এ ধরনের শিশুদের নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয় কম, চোখে চোখ রেখে কথা বলে না। তারা বেশি রাতে ঘুমাতে চায়। এদের হজমের অসুবিধা থাকে। কখনো কখনো তারা অধিক পরিমাণে হাইপার থাকে। অনেক সময় কারো কারো খিঁচুনি ও মৃগী রোগ দেখা দেয়।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর