প্রকাশিত:
৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৬
পবিত্র রমযানের পুরো মাস জুড়ে বিরাজ করে রহমত, বরকত এবং ক্ষমার ঘোষণা। তবে বিশেষভাবে এ মাসে রয়েছে এক মহিমান্বিত রজনী “লাইলাতুল কদর"। আল্লাহ তাআলা এ রাতের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনুল কারীমে উল্লেখ করেন:-
কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সেই রজনীতে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতরণ করেন প্রত্যেক কাজে তাদের রবের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সেই রজনী সুবহে সাদিক উদিত হওয়া পর্যন্ত। -সূরা কদর : ৩-৫।
তাই এ রাতের অন্বেষণে যেমন আগ্রহী হওয়া জরুরি তেমনি এ রাতে ইবাদত বন্দেগী নফল নামায, তিলাওয়াত, যিকির, তওবা-ইস্তিগফার, দুআ-দরূদ ইত্যাদির প্রতিও আরো যত্নবান হওয়া কাম্য।
লাইলাতুল কদর : যে রাতে কুরআন নাযিল হয়েছে। তথা রমযানের কদর রজনীতে আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীম নাযিল করেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন:-
নিশ্চয়ই আমি কদর রজনীতে কুরআন অবতীর্ণ করেছি। সূরা কদর : ১।
অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে:-
আমি এ (কিতাব) অবতীর্ণ করেছি বরকতপূর্ণ রজনীতে, বস্তুত আমি সতর্ককারী। সূরা দুখান : ৩।
এখানে বরকতময় রজনী বলতে শবে কদর বুঝানো হয়েছে।তো কদর রজনী একদিকে যেমন মহিমান্বিত অপরদিকে তা অত্যন্ত বরকতপূর্ণও বটে।
লাইলাতুল কদর : যে রাতে গুনাহ মাফ হয়। এ রাতে আল্লাহ তাআলার অবারিত রহমত ও করুণা বর্ষিত হয়।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:-
যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাব তথা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং সওয়াব প্রাপ্তির প্রত্যাশায় লাইলাতুল কদরে কিয়াম (ইবাদত-বন্দেগী) করবে, তার পূর্বের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। -সহীহ বুখারী : ২০১৪।
তাই ঈমান ও ইহতিসাবের উপলব্ধি জাগরূক রেখে লাইলাতুল কদরে কিয়াম (ইবাদত-বন্দেগী) করা বান্দার গুনাহ মাফের একটি বড় মাধ্যম।
লাইলাতুল কদর থেকে বঞ্চিত হওয়া অনেক বড় মাহরূমী।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ও তাঁর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে এত বড় খোশখবরী পাওয়ার পর এ রাতের ক্ষমা ও রহমত লাভের চেষ্টা না করা অনেক বড় বঞ্চনার বিষয়। হযরত আনাস রা. বলেন, রমযান আসলে নবীজী বলতেন:-
এই মহিমান্বিত মাস উপস্থিত। তাতে একটি রজনী রয়েছে, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ ও বরকত থেকে বঞ্চিত হল সে যেন সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হল। আর কেবল অভাগাই এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত থাকে। -সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৬৪৪, সুনানে নাসাঈ : ২১০৬।
সুতরাং অবহেলায় না কাটিয়ে কদরের রাতের মূল্যায়ন করা দরকার। কারণ নবীজী সাঃ শেষ দশকে ইবাদত-বন্দেগী বাড়িয়ে দিতেন।
হাদীস শরীফের ভাষ্য অনুযায়ী কদরের রাত সুনির্দিষ্ট নয়। তবে রমযানের শেষ দশকে তা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ হিসেবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে ইবাদতের মাত্রা ও পরিমাণ বাড়িয়ে দিতেন।আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা. নবীজীর শেষ দশকের আমলের বিবরণ দিয়ে বলেন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য দিনগুলোর তুলনায় রমযানের শেষ দশকে বেশি ইবাদত করতেন। -সহীহ মুসলিম : ১১৭৫।
তিনি আরো বলেন:-
রমযানের শেষ দশক শুরু হলে নবীজী পূর্ণ রাত্রি জাগরণ করতেন। পরিবারের সবাইকে জাগিয়ে দিতেন এবং নিজে কোমর বেঁধে ইবাদতে মগ্ন হতেন। -সহীহ মুসলিম : ১১৭৪।
যেভাবে লাভ করতে পারি শবে কদরের ন্যূনতম ফযীলত:-
মুমিনমাত্রেরই কর্তব্য হল কদর রজনীর পূর্ণ কদর করা। অন্তত এ রাতে বিলকুল গাফেল না থাকা। রমযান মাসের ফরয নামাযগুলো জামাতের সাথে আদায় করার মাধ্যমে কদর রজনীর ন্যূনতম কদর হতে পারে।
হাদীস শরীফে এসেছে:-
যে ব্যক্তি ইশার নামায জামাতে আদায় করল সে যেন অর্ধ রজনী কিয়াম করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাযও জামাতে আদায় করল সে যেন পূর্ণ রাত নামায পড়ল। সহীহ মুসলিম : ৬৫৬।
তাই এ মাসে জামাতে নামাযের প্রতি সবিশেষ যত্নবান হওয়া জরুরি। তাহলে আশা করা যায় শবে কদরের ন্যূনতম ফযীলত থেকে মাহরূম হব না ইনশাআল্লাহ।
হাদীস শরীফের বর্ণনা অনুযায়ী রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিতে আমরা লাইলাতুল কদরকে তালাশ করে বেশি বেশি আমল করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার তাওফিক দান করুন। ইনশাআল্লাহ।
লেখক : মুহাদ্দিস - জামিয়া ইসলামিয়া মারকাযুদ দ্বীন, তিতাস, কুমিল্লা।
মন্তব্য করুন: