প্রকাশিত:
১৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:৩৩
১৩ এপ্রিল শনিবার মধ্যরাত থেকে ১৪ এপ্রিল রোববার ভোর পর্যন্ত ইসরাইলে তিনশ’র বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। গত ১ এপ্রিল সিরিয়ায় ইরানের দূতাবাসে ইসরাইলি হামলার প্রতিশোধ নিতে এই আক্রমণ চালানো হয় বলে জানিয়েছে ইরান। তবে লক্ষবস্তুতে আঘাত হানার আগেই ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রগুলো গুলি করে ভূপাতিত করেছে ইসরাইল। এই কাজে অংশ নেয় ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্রসহ যৌথ বাহিনী।
হামাস-ইসরাইল যুদ্ধের মধ্যেই তেলআবিবে তেহরানের নজিরবিহিন হামলা এই অঞ্চলে উত্তেজনার পারদ উর্ধ্বমুখী করেছে। ইরান হামলার সমাপ্তি ঘোষণা করলেও ইসরাইল হামলার জবাব কীভাবে দেয় সেটি দেখার অপেক্ষায় বিশ্ববাসী। অনেকে ধারণা করছেন, ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে হামলা করবে।
জন বোল্টন, যিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তিনি বলেছেন ইসরাইল যদি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর প্রতিশোধমূলক আক্রমণ শুরু করে তবে যুক্তরাষ্ট্রের এর সঙ্গে যোগ দেওয়া উচিত।
‘আমি মনে করি ইসরাইল পুরোটা না হলেও, খুব উল্লেখযোগ্য অংশ (ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি) ধ্বংস বা নিষ্ক্রিয় করতে পেরেছে। সত্যি বলতে, ইসরাইল যদি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি প্রতিহত করতে প্রস্তুত থাকে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের গর্বের সঙ্গে যোগ দেওয়া উচিত হবে। ‘
ইসরাইলে ইরানের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে, মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন বলেছেন যে তারা ইসরাইলের জন্য সামরিক সহায়তা পাস করতে আবারও চেষ্টা করবে।
ইসরাইলে আরও সাহায্য পাঠানোর পূর্ববর্তী প্রচেষ্টা ডেমোক্রেটদের আহ্বানের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছিল।
ডেমোক্রেটরা আহ্বান জানিয়েছিল যে ওই সহায়তা প্যাকেজে তাইওয়ান এবং ইউক্রেনের জন্য সহায়তা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
মধ্যপ্রাচ্যের সাবেক উপ-প্রতিরক্ষা সচিব মিক মুলরয় বিবিসিকে বলেছেন যে, ইসরাইলের জন্য সাহায্য অনতিবিলম্বে পাস করা উচিত। মার্কিন নিরাপত্তা সহায়তার জন্য যদি এটি না হয়, তবে আমরা একটি বড় আঞ্চলিক যুদ্ধের মুখোমুখি হতে পারি।
এই সহায়তা সেইসঙ্গে ইউক্রেন এবং তাইওয়ানের জন্য আমাদের সহায়তা দেওয়া আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থের মধ্যে পড়ে। এটি কোনো দান নয়। এটি মার্কিন জাতীয় প্রতিরক্ষার অংশ।
এদিকে ইরানের এই হামলার কী জবাব দেওয়া হবে ইসরাইলকে তা সাবধানে বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। রোববার হোয়াইট হাউসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানান, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে কীভাবে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা নিয়ে সাবধানে ও কৌশলী হয়ে কাজ করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, সিরিয়ায় ইসরাইলের বিমান হামলায় ইরানের সামরিক কমান্ডার নিহত হওয়ার ঘটনার বিনিময়ে ইসরাইল সবচেয়ে সেরা জবাবটিই পেয়েছে বলে মনে করে বাইডেন প্রশাসন। এছাড়া ৯৯ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন গুলি করে নামিয়ে আনা ও প্রতিরোধ করার মাধ্যমে ইসরাইল ইরানের তুলনায় তার সামরিক শ্রেষ্ঠতা বজায় রাখতে পেরেছে বলেও মনে করে যুক্তরাষ্ট্র।
ইরানের হামলার পরপরই ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা হয় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। টেলিফোন আলোচনায় দুই নেতা কীভাবে সব কিছু শ্লথ করা যায় ও একটির পর আরেকটি বিষয় নিয়ে এগোনো যায় তা নিয়ে কথা বলেন। তবে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা ইসরাইলের পক্ষে উল্লেখযোগ্যভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া দেওয়ার বিষয়ে কোনোকিছু জানাতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করে শুধু এটাই বলেন যে, বিষয়টির হিসাব ইসরাইলকেই করতে হবে।
তবে টেলিভিশনের প্রচারিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র জন কিরবি বারবার এই কথা বলেন যে, তার দেশ যে আরও বড় আকারের সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে না এই বিষয়টি এখন পরিষ্কার।
মন্তব্য করুন: