প্রকাশিত:
১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৬:০০
ফরিদপুরে যাত্রীবাহী বাস ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৪ জন নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৫ জন একই পরিবারের। মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুরের তেঁতুলতলায় মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সবার পরিচয় পাওয়া গেছে। আর আহত তিনিজনকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ (বিএসএমএমসি) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হতাহতরা জেলার বায়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দা। ময়নাতদন্ত শেষে দুপুরে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ফায়ার সার্ভিস, হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। দুর্ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আলফাডাঙ্গা উপজেলা থেকে সকালে সিয়াম-সিনমুন (যশোর ন-১১-১৩৩৯) নামের একটি পিকআপে (পণ্যবাহী যান) ১৭ জন যাত্রী ফরিদপুর আসছিলেন। পথে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুর শহরতলির কানাইপুরের তেঁতুলতলায় ঢাকা থেকে মাগুরাগামী উত্তরা ইউনিক পরিবহণের (ঢাকা-মেট্রো-হ-১১-১৭৫১) একটি বাস পিকআপটিকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই ১১ জন নিহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান আরও ৩ জন। নিহতদের মধ্যে ৭ নারী, ৪ পুরুষ ও ৩ শিশু। হতাহতরা সবাই পিকআপের যাত্রী। দুর্ঘটনার পরই বাসের চালক ও হেলপার পালিয়েছে।
নিহত ১৪ জনেরই পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একই পরিবারের ৫ জন। তারা হলেন আলফাডাঙ্গা উপজেলার বুড়াইচ ইউনিয়নের ছত্রাকান্দা গ্রামের তারা মোল্লার ছেলে রাকিব হোসেন মিলন (৪৫), তার (মিলন) স্ত্রী সুমি বেগম (৩০), শিশুছেলে রোহান (৬), আরেক শিশুছেলে আবু সিনান (৩) ও নানিশাশুড়ি মর্জিনা বেগম (৭০)।
নিহত অন্যরা হলেন আলফাডাঙ্গা উপজেলার হিদাডাঙ্গা গ্রামের মৃত আলেক সরদারের স্ত্রী শুকুরুন্নেছা (৯৫), উপজেলার চর সরাইল গ্রামের তবিবুর খান (৫৫), উপজেলার বেজিডাঙ্গা গ্রামের সোনিয়া বেগম (৩৫), জাহানারা বেগম (৪৫), শিশু নুরানী (৮), হিদাডাঙ্গা গ্রামের কোহিনুর বেগম (৬০), বোয়ালমারীর কুমড়াইল গ্রামের ইকবাল শেখ (৩০), শেখর ইউনিয়নের কুমড়াইল গ্রামের সূর্য বেগম (৪৫) এবং পিকআপের চালক আলফাডাঙ্গা উপজেলার কুসুমদি গ্রামের নজরুল ইসলাম (৪০)।
দুর্ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকজন জানান, পিকআপের চালক গতি নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে বাসটির সামনের অংশে আঘাত করেন। এতে পিকআপটির সামনের অংশ বাসের নিচে চলে যায়। এ সময় পিকআপে থাকা যাত্রীদের কয়েকজন ছিটকে পাকা সড়কে পড়ে গিয়ে নিহত হন। দুর্ঘটনার পরই বাসের চালক ও হেলপার অন্য একটি গাড়িতে উঠে পালিয়ে যায়।
জানা গেছে, যে বাসটি দুর্ঘটনায় পড়েছে, সেটির ফিটনেস সনদ ও রুট পারমিট নেই। মারা যাওয়া যাত্রীরা ছিলেন একটি ছোট ট্রাকে (পিকআপ), যাতে যাত্রী পরিবহণ আইনে একেবারেই নিষিদ্ধ। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, দুর্ঘটনার স্থানে মহাসড়কে কিছু খানাখন্দ ছিল। বাসের চাকা গর্তে পড়ে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন। অবশ্য বিআরটিএর কোনো কোনো কর্মকর্তা বলছেন, বাসটির চালক দীর্ঘ যাত্রায় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়তেও পারেন।
নিহত রাকিব হোসেন মিলনের মামাতো ভাই নুরুজ্জামান খসরু জানান, মিলন ঢাকায় একটি মন্ত্রণালয়ে লিফটম্যানের কাজ করতেন। মন্ত্রণালয়ে তদবির করে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার দরিদ্র কয়েকটি পরিবারের জন্য ত্রাণের ঢেউটিন বরাদ্দ করান তিনি। সেই টিন আনতে গিয়েই তারা মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হন। টিন অন্যদের বুঝিয়ে দিয়ে পরিবার নিয়ে ফরিদপুর থেকে তার ঢাকায় ফেরার কথা ছিল।
ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার সুভাষ বাড়ই জানান, খবর পেয়ে তারা দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধারকাজে অংশ নেন। তারা ১১ জনের লাশ এবং কয়েকজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোর্শেদ আলম জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ উদ্ধারকাজে অংশ নেয়। দুর্ঘটনার কারণ বের করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার যুগান্তরকে জানান, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে ৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, নিহতদের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা এবং আহতদের ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি লাশ দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে এবং আহতদের চিকিৎসায় তাৎক্ষণিক ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন: