প্রকাশিত:
১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:২৬
মেহজাবীন চৌধুরী, তাসনিয়া ফারিণ, তানজিন তিশাদের পরে নতুন প্রজন্মের অভিনেত্রী হিসেবে বেশ কয়েকজন আলোচনায় উঠে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম সাদিয়া আয়মান, তানজিম সাইয়ারা তটিনী, নাজনীন নিহা অন্যতম। কয়েক মাস ধরেই ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে ছিল তাঁদের নাটক। প্রকাশের কয়েক দিনের মধ্যেই ইউটিউবে তাঁদের নাটকের দর্শক ভিউ কোটি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তাঁদের নিয়ে কাজের আগ্রহ বাড়ছে পরিচালকদের। অল্প সময়েই দর্শকের পছন্দের তালিকায় উঠে এসেছেন তাঁরা।
তটিনীর কাছে এটি দর্শকের আশীর্বাদ। তিনি বলেন, ‘আমার অভিনয়ের বয়স বেশি দিনের নয়। এত অল্প সময়ে দর্শকেরা আমার কাজ পছন্দ করেছেন। এটি ভাগ্যের ব্যাপার। এত তাড়াতাড়ি দর্শকের কাছে পৌঁছে যাব, ইতিবাচকভাবে নেবেন, আশা করিনি। শুরুতে ভয় ছিল। দর্শকের ভালোবাসায় ভয়কে আস্তে ধীরে জয় করতে পারছি।’
তবে এই অভিনেত্রী মনে করেন, অল্প সময়ে এই সাফল্য আবার ধরে রাখাও কঠিন, চ্যালেঞ্জেরও। তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েকজন কম সময়ে সফলতা পেয়েছি, কিন্তু এটা ধরে রাখা খুবই কঠিন। এটা ধরে রেখে দীর্ঘ সময়ে কতটা পথ পাড়ি দিতে পারব, সেটাই এখন দেখার। একটি নাটক করেই হিট হওয়া যায়। কিন্তু ছয় মাস পরে সেটা মনে থাকে না। হিট হওয়াটা ইজি কিন্তু দীর্ঘ সময় টিকে থাকাটা কঠিন। কাজ দিয়ে নিজের আলাদা পরিচয় তৈরি করা বড় চ্যালেঞ্জ।’
সেই দীর্ঘ পথের জন্য ভাবছেন কি? তটিনী বলেন, ‘অবশ্যই। আমি অভিনয় উপভোগ করি। অভিনয়ে উন্নতি করার চেষ্টা করছি। কাজের প্রতি সততা থেকেই এগিয়ে যাচ্ছি। যেন কাজকে দর্শক দীর্ঘদিন মনে রাখেন, সঙ্গে আমাকেও।’
কিন্তু সমসাময়িক যাঁরা ভালো করছেন, বিশেষ করে সাদিয়া বা নিহা—তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন কি? এমন প্রশ্নে তটিনী বলেন, ‘এঁদের সবার সঙ্গে আমার দেখা হয় না সব সময়। শুটিংয়ের কারণে আমরা বিভিন্ন লোকেশনে থাকি। তবে সবাই অনেক ভালো। নিহা তো অনেক মিষ্টি মেয়ে। আমাকে অনেক সম্মান করে। আমাদের মধ্যে ভালো করার চেষ্টা আছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়।’ এই অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘প্রতিযোগিতা ভেবে কাজ করা আলাদা চাপ লাগে। কাজটাকে কাজের মতো মনে করে, নিজের মতো করে বেস্ট শ্রমটা দেওয়াই ভালো। আমি চাই সবাই ভালো কাজ করুক। ভালো কাজের প্রতিযোগিতা হলে, নাটকের বাজারও ভালো হবে।’
২০২২ সালে ঈদুল ফিতরে ‘সুহাসিনী’ প্রচারের মধ্য দিয়ে নাটকে তটিনীর অভিষেক হয়। যদিও প্রথম শুটিং করা নাটক ‘বাঁচিবার হলো তার সাধ’। অভিষেকেই আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর ধীরে ধীরে কাজ বাড়ে, পরিচালকেরও আস্থা বাড়ে তাঁর ওপর। গত বছর ঈদুল আজহায় সাতটি নাটক প্রচারিত হয়। এই ঈদে প্রায় দ্বিগুণ। ‘গোলাপ গ্রাম, ‘শেষ কিছুদিন’সহ তটিনীর ১৫টি নাটক প্রচারিত হয়েছে এই ঈদে।
এ ব্যাপারে তটিনী বলেন, ‘সবগুলো নাটকেরই গল্প, চরিত্র ভালো। নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি নাটকগুলোতে। তবে ঈদের আমেজ এখনো শেষ হয়নি, এই নাটকগুলো থেকে কোনগুলো দর্শক আলোচনায় বেরিয়ে আসবে, তা জানতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, গত বছরের ঈদে প্রচারিত “প্রলয়” নাটকটি নিয়ে তেমন প্রত্যাশাই ছিল না। অথচ ওই নাটকটিই ইউটিউবে বেশি আলোচিত হয়।’
নতুন প্রজন্মের আরেক আলোচিত অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মানের নাটকে অভিষেকও হয় ২০২২ সালে। প্রথম নাটক ‘ফুলের নামে নাম’। গত বছর ঈদুল ফিতরে তাঁর আটটি নাটক প্রচারিত হয়। এবার ঈদের অনুষ্ঠানমালায় ‘তখন যখন’, ‘মানুষ আমরা’, ‘তুই আমারই, ‘পাতাবাহার’সহ ১২টি নাটক ছিল তাঁর। ঈদের কাজ নিয়ে সাদিয়া বলেন, ‘এই ঈদে সবগুলো কাজই উপভোগ করে করেছি, করে আরাম পেয়েছি। ঈদের তখন যখন নাটকটি বেশ আলোচনা হচ্ছে।’
তাঁর সঙ্গে এ সময়ে আলোচনায় উঠে আসা অন্যরা, বিশেষ করে তটিনী, নিহাদের প্রসঙ্গে সাদিয়া আয়মান জানালেন প্রায় একসঙ্গেই নাটকে আসা তাঁদের। তিনজনই একসঙ্গে বেড়ে উঠছেন এই অঙ্গনে। সাদিয়া বলেন, ‘আমাদের তিনজনকে নিয়েই আলোচনা হচ্ছে, এটি খুব ভালো লাগছে। আশা করছি আমরা আগামী ১০ বছর একসঙ্গে ভালোভাবে কাজ করে যাব। এর মধ্যে নতুন অনেকেই আসবেন। কিন্তু আমরা যাতে মিলেমিশে কাজ করতে পারি, সেটাই চাওয়া।’
অন্য দুজনকে প্রতিযোগী ভাবেন না সাদিয়া। এই অভিনেত্রীর বক্তব্য, ‘একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতার কিছু নাই। আমরা নিজেরা নিজেদের কাজ নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে পারি। তাহলে নিজ নিজ কাজের, অভিনয়ের উন্নতি হবে।’ তবে সব ছাপিয়ে এই ঈদে বড় পর্দায় অভিষেক হয়েছে সাদিয়া আয়মানের। ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কাজল রেখা’ ছবির ছোটবেলার কাজল রেখা চরিত্রে অভিনয় করে দর্শক প্রশংসা পাচ্ছেন।
সাদিয়া আয়মান জানালেন, মুক্তির প্রথম দিন পুরো টিমের সঙ্গে দুপুরে শো দেখেছেন তিনি। বলেন, ‘বড় পর্দার প্রথম কাজ। ছবিটি দেখার উদ্দেশ্যে যখন বাসা থেকে বের হচ্ছিলাম, তখন ভয় ভয় লাগছিল। ছবিটিতে আমার প্রথম তিনটি দৃশ্যে কোনো সংলাপ ছিল না। শুধুই এক্সপ্রেশন ছিল। কিন্তু প্রথম দৃশ্যেই নিজের ভালো লাগা কাজ করেছে। অন্য দৃশ্যগুলো যখন আসল, দেখলাম আশপাশের দর্শকের প্রতিক্রিয়া বেশ ভালো। মজার ব্যাপার হচ্ছে কিছু দৃশ্য দেখে আমি নিজেই কনফিউজড হয়েছি। দৃশ্যগুলো এত সুন্দরভাবে এসেছে! মনে হয়েছে, এই দৃশ্যগুলো কখন করলাম? নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তির পর থেকে ফেসবুকে প্রশংসা পাচ্ছি। তা ছাড়া আমার কাছের, এমনকি অপরিচিতরাও ফেসবুক ইনবক্স, ফোন মেসেজে প্রশংসা করছেন। এসব দেখে আমার মনটা ভরে গেছে।’
তবে মুক্তির আগে ছবিটি নিয়ে কিছুটা ভয়ও ছিল এই অভিনেত্রীর। কারণ, এই চরিত্র তাঁর জন্য ছিল অন্য রকম চ্যালেঞ্জের। একদিকে ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’র গল্প, অন্যদিকে বিখ্যাত কাজল রেখা চরিত্রটা।
সাদিয়া বলেন, ‘২০২২ সালে ছবিটির শুটিং শুরু হয়। তখনো আমার নাটকে অভিষেক হয়নি। অভিনয়ে একেবারেই নতুন। পর্দায় আমাকে কীভাবে নেবেন দর্শক, এটা নিয়ে দ্বিধা ছিল। অন্যদিকে মুক্তির আগের ভালোভাবে প্রচার হয়নি। এসব নিয়ে টেনশনে ছিলাম। তা ছাড়া পর্দায় আমার অভিনীত চরিত্রটি আমার বাস্তব বয়সের চেয়ে ১০ বছর কম—এটাও মাথায় ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত পর্দায় আমাকে যেভাবে দেখেছেন, সবকিছুই হয়েছে পরিচালকের জন্য।’ এখন থেকে নিয়মিত সিনেমায় দেখা যাবে কি আপনাকে? এই অভিনেত্রীর উত্তর, ‘অবশ্যই কাজ করব। ভালো গল্প, চরিত্র ও পরিচালকের অপেক্ষায় আছি। মনের মতো একটা কাজই আমার জন্য যথেষ্ট।’
গত বছর ঈদুল ফিতরে নাটকে অভিষেক হয় নাজনীন নিহার। ‘লাভ সেমিস্টার’ নামে প্রথম নাটকেই আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর গত প্রায় এক বছরে মাত্র সাতটি নাটক প্রচারিত হয়েছে তাঁর। প্রতিটি নাটকেরই ভিউ কোটির ওপরে। এত অল্প সময়ে অল্পসংখ্যক নাটকে অভিনয় করেও অনেকটাই আলোচনায় চলে এসেছেন তিনি। নিহা বলেন, ‘দর্শকের আশীর্বাদ, ভালোবাসা ও পরিচালকের সুন্দর নির্মাণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমার অভিনয়ের বয়স এখনো এক বছর হয়নি। সময় কম হলেও দর্শকের ভালোবাসা পাচ্ছি। এটি বড় পাওয়া।’ তবে দ্রুতই আলোচনায় আসাটা একজন অভিনয়শিল্পীর জন্য চ্যালেঞ্জেরও। নিহা আরও বলেন, ‘এটিই ভাবছি এখন। কারণ, অনেকের বেলায় দেখেছি, দ্রুতই আলোচনায় এসে পরিকল্পনার অভাবে দ্রুতই পিছিয়ে পড়েছেন। দীর্ঘদিন এখানে সুনাম নিয়ে কাজ করতে চাই। তাড়াহুড়া নেই। ভালো কাজ করতে গিয়ে কাজের সংখ্যা কম হলেও সমস্যা নাই।’
তটিনী, সাদিয়া আয়মানদের কাজের প্রশংসা করে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘এই দুজন কাজের ক্ষেত্রে আমার এক বছর সিনিয়র। আমি নিজেও তাঁদের কাজের দর্শক। তাঁরাও দিন দিন ভালো করছেন। তাঁদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। একজন সহকর্মী হিসেবে ভালো লাগে আমার।’
নিজের কাছে তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে হয় কি না? জানতে চাইলে নিহা বলেন, ‘কখনোই না। কাজের বেলায় আমরা বন্ধুর মতোই থাকতে চাই। সবাই সবার জায়গা থেকে ভালো করুক, এটাই চাওয়া।’
এদিকে ঈদুল ফিতরে ‘ম্যাচ মেকার’, ‘লাভ রেইন’ ও ‘তখন যখন’—তিনটি নাটকে অভিনয় করেছেন নিহা। ঈদ উৎসবে এত কম নাটক কেন? এমন প্রশ্নে নিহার উত্তর, ‘এই অল্প সময়ে আমি যে ভালোবাসা পেয়েছি দর্শকের, নষ্ট করতে চাই না। সংখ্যার চেয়ে মানের দিকে বেশি নজর দিতে চাই। আমার নিজের মূল্যায়ন, এখনো আমি ভালো অভিনয় পারি না। এখনই বেশি বেশি কাজ করলে শিখতে পারব না।’
মন্তব্য করুন: