মঙ্গলবার, ২৬শে নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • ২৫ শহীদ পরিবারকে ৮ লাখ টাকা করে অনুদান প্রদান
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে সুখবর দিলো বিআরটিএ
  • রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ
  • গণমাধ্যমে হামলা-ভাঙচুর হলে ব্যবস্থা
  • কঠোর হতে চায় না সরকার, আমরা চাই শান্তিপ্রিয় সমাধান
  • বুড়িচংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত
  • নিম্নচাপে উত্তাল সাগর, ৪ সমুদ্রবন্দরে সতর্কসংকেত
  • ঢাকার যে ৫ এলাকায় আজ বেশি বায়ুদূষণ
  • সংঘর্ষে না জড়িয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের
  • যাত্রাবাড়ী-ডেমরায় ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

এসি বিস্ফোরণের কারণ এবং আমাদের করণীয়

ইঞ্জি. টি. এম. শামসুল আরেফিন (প্রিন্স)

প্রকাশিত:
২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:১৮

গরমকালে আমাদের দেশে যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে তাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ইলেক্ট্রিক্যাল শর্ট সার্কিটে অগ্নিকাণ্ডের সুত্রপাত। আর এই ইলেকট্রিক্যাল শর্ট সার্কিটের অন্যতম উৎস এসি(এয়ার কন্ডিশনার)। যতবার অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছুদিন হা-হুতাশ করি, দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করি, মানববন্ধন করি। এরপর যা তাই! অবশ্য আমরা কোন আগুনকেই তোয়াক্কা করি না! না দুনিয়ার আগুন, না জাহান্নামের আগুন! আমাদের দেশে এসি বিস্ফোরণ নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসি বিস্ফোরণের ফলে অগ্নিকাণ্ড, ভবন ধ্বস, অর্থনৈতিক ক্ষতি, বিকলাঙ্গ থেকে শুরু করে মানুষের প্রাণহানি পর্যন্ত ঘটছে অহরহ। অনেকদিন থেকেই ভাবছি এটা নিয়ে কিছু লেখা দরকার।

এসি বিস্ফোরণের অন্যতম কারণগুলো হলোঃ

*অনেক পুরনো বা নিম্নমানের এসির ব্যবহার।

*রুমের আকার অনুযায়ী সঠিক ক্ষমতার এসি ব্যবহার না করা।

*এসির পাওয়ার ক্যাবল সঠিক স্পেকের না হলে দুর্ঘটনা ঘটে।

*কনডেনসারে যদি ময়লা থাকে তাহলে কম্প্রেসারে টেম্পারেচার ও প্রেশার দুটোই উচ্চমাত্রায় তৈরি হয়।

*এসির ভেতরের পাইপের কোথাও যদি ব্লকেজ থাকে তাহলেও উচ্চমাত্রায় প্রেশার হয়ে কম্প্রেসার ব্লাস্ট
হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

*এক ব্রান্ডের আউটডোর/ইনডোর এর সাথে অন্য ব্রান্ডের ইনডোর/আউটডোর ব্যবহার করা।

*রুমের মধ্যে এয়ার লিকেজ থাকা।

*এসির ভ্যাকুয়াম সঠিকভাবে না করলে বিস্ফোরণের সম্ভাবনা বাড়ে।

*রুমের দরজা-জানালা খোলা রেখে এসি চালালে, এসি অনবরত চলতেই থাকে, কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আর ঠাণ্ডা করতে
পারে না। বিয়ারিংয়ের অনবরত ঘূর্ণনে উত্তপ্ত হয়ে বিয়ারিং গলে যায় বা ফেইল করে। ধাতব তলে ঘষা খেয়ে জ্বলে
উঠে স্ফুলিঙ্গ। একই ঘটনা গাড়ির ইঞ্জিনে কুলিং সিস্টেম ফেল করলেও হতে পারে, ইঞ্জিন ব্লকে অতিরিক্ত
উত্তপ্ত পিস্টন গলে আটকে গিয়ে ইঞ্জিন বসে যায়। যাই হোক, ঐ স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়ে দেয় দাহ্য ফ্রেয়ন বা
কুল্যান্ট, বিস্ফোরিত হয় গোটা এসি, ছড়িয়ে পড়ে আগুন।

*কম্প্রেসরের ভেতরে ময়লা আটকে জ্যাম তৈরি হওয়া।

*এসি থেকে গ্যাস লিক হওয়া এবং সেটি রুমে বা এসি'র ভেতরে জমে থাকা।

*দীর্ঘক্ষণ টানা এসি চালানো, যার ফলে এসির প্রেশার বেড়ে যায় এবং সেটিকে গরম করে তোলে।

*এসির ভেতরের বা বাইরের বৈদ্যুতিক তার নড়বড়ে হয়ে থাকা, যা শর্ট সার্কিট তৈরি করতে পারে।

*বৈদ্যুতিক হাই ভোল্টেজের কারণে ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রের ওপর চাপ তৈরি হওয়া।

*কম্প্রেসরে সঠিক পদ্ধতিতে রেফ্রিজারেন্ট চার্জ না করলে কম্প্রেসরে হাই প্রেশার তৈরি হয়ে।

*ইদানীং বাইরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বাইরের তাপমাত্রা এত বেশি হলে যে ফ্রেয়ন
আমরা সচারাচর ব্যবহার করি, তা আর তাপ ছেড়ে প্রয়োজনীয় আয়তনের তরলে পরিণত হতে পারছে না। ফলে
এটির ঠাণ্ডা করার বা তাপ শোষণ করার ক্যাপাসিটি কমে যাচ্ছে, রুমও ঠাণ্ডা হচ্ছে না, ফলে চলতেই থাকছে এসি,
এসময় গরম হয়ে ঘটাচ্ছে বিস্ফোরণ।

*কম্প্রেসরের লিমিটের চেয়ে বেশি রেফ্রিজারেন্ট চার্জ করলে হাই প্রেশার তৈরি হবার কারণে।

*কম্প্রেসরে প্রয়োজনীয় পরিমাণ রেফ্রিজারেন্ট না থাকলে ভেতরের তাপমাত্রা লিমিটের চেয়ে বেড়ে গিয়ে।

*শীতকালে সাধারণত এসি চলে না, এই সময় আউটডোর এবং ইনডোর ইউনিটে ময়লা জমে যায়। গরমকালে এসি
পরিস্কার বা সার্ভিসিং ছাড়াই এসি চালু করার কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা।

*এসির আউটডোর ইউনিটে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা না রাখা।

*রুটিন মাফিক দক্ষ টেকনিশিয়ান দিয়ে এসির সার্ভিসিং না করানো।

 

এসির দুর্ঘটনা ঠেকাতে হলে আমাদের করণীয়ঃ

*নিয়মিত কন্ডেন্সার পরিস্কার করা।

*আউটডোর ইউনিটের সামনে কোন ব্যারিয়ার তৈরি না করা।

*রুমের লিকেজ লস কমাতে হবে। দরজায় ডোর ক্লোজার, ডোরের গ্যাপ ফিলাপ গ্যাসকেড ব্যবহার করতে হবে।

*জানালায় ভারী পর্দা দিতে হবে যেন সূর্যের আলো বেশি না ঢুকতে পারে।

*এসি চলাকালীন অপ্রয়োজনে দরজা, জানালা খোলা থেকে বিরত থাকতে হবে।

*ভালো ব্র্যান্ডের এবং সঠিক বিটিইউ (ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) এসি ব্যবহার করা।

*পেশাদার টেকনিশিয়ানের মাধ্যমে নিয়মিত সার্ভিসিং করানো।

*দীর্ঘসময় একটানা এসি না চালিয়ে মাঝে মাঝে বিরতি দেয়া।

*দক্ষ টেকনিশিয়ান দিয়ে বৈদ্যুতিক সংযোগ, সকেট, ফিল্টার নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করা।

*হাই ভোল্টেজ এড়াতে সঠিক মানের সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা।

*ভালোমানের এবং সঠিক পরিমাণের, সঠিক প্রেশারের রেফ্রিজারেন্ট (গ্যাস) ব্যবহার করা।

*প্রয়োজনের অতিরিক্ত এসি না চালু রাখা।

*সঠিক মানের ক্যাবল এবং সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা।

*কম্প্রেসরে সঠিক টেম্পারেচার এবং সঠিক প্রেশার দক্ষ টেকনিশিয়ান দিয়ে পরিমাপ করানো।

*পাইপের কোথাও ব্লক থাকলে সেটা দ্রুত মেরামত করা।

*সঠিক ভাবে ভ্যাকুয়াম করা।

*মাসে অন্তত একবার এয়ার ফিল্টার পরিস্কার করা।

প্রতিটি জিনিসের ভালো-মন্দ দিক আছে। আমাদের সমস্যা হলো আমরা কোন সুবিধা পেলে সেটার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে ফেলি। কোন কিছুই মাত্রাতিরিক্ত ভালো নয়। এই গরমে আমার আপনার যেমন কষ্ট হচ্ছে বলে আমরা এসিতে বসেও হা-হুতাশ করছি। একটু ভাবুন তো আজ যারা তপ্ত রোদে মাঠের ফসল উৎপাদন করছে, নির্মান কাজ করছে, পায়ে টানা রিক্সা চালাচ্ছে, জীবিকার তাগিদে পথে পথে ঘুরছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাকে আপনাকে তাদের থেকে কতটা ভালো রেখেছেন। তাই এসিতে থাকলেও যথা সম্ভব তাপমাত্রা ২৫/২৬ ডিগ্রিতে এ রাখুন। অনবরত এসি চালানো থেকে বিরত থাকুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন, নিরাপদে রাখুন।

 


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর