প্রকাশিত:
১ মে ২০২৪, ১৭:০৫
স্বামীর বাড়িতেই মেয়ে সুখে থাকুক - এ চাওয়া সব বাবা-মায়ের। সংসারে বিচ্ছেদ তো দূরের কথা ঝগড়া-বিবাদই আশা করেন না তারা।
ডিভোর্স হয়ে মেয়ে বাবার বাড়ি ফিরে আসুক চায় না কোনো অভিভাবকই।
কিন্তু ভারতের উত্তরপ্রদেশের কানপুর জেলায় দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। রীতিমতো ব্যান্ডপার্টির আয়োজন করে তালাকপ্রাপ্ত মেয়েকে স্বাগত জানালেন এক বাবা।
তালাক নিয়ে স্বামীর ঘর ছেড়ে আসা ওই মেয়ের নাম উরভি (৩৬), পেশায় একজন প্রকৌশলী। রাজধানী নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে চাকরি করেন তিনি। আর তার বাবা অনিল কুমার। তিনি ভারতের সরকারি টেলিযোগাযোগ কোম্পানি ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেডে (বিএসএনএল) চাকরি করেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, ২০১৬ সালে এক কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারকে বিয়ে করেন উরভি। বিয়ের পর স্বামী-শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে নয়াদিল্লিতেই থাকতেন। এই দম্পতির একটি মেয়েও রয়েছে। যৌতুকের দাবিতে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজনদের নির্যাতনের শিকার হতে হতে এক পর্যায়ে বিচ্ছেদ ঘটে উরভির।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি উরভির তালাক আবেদন মঞ্জুর করেন দিল্লির একটি পারিবারিক আদালত। তারপর থেকে এতদিন মেয়েকে নিয়ে দিল্লিতেই ছিলেন তিনি। সোমবার কানপুরে বাবার বাড়িতে আসেন। এ সময়ই ব্যান্ডপার্টির আয়োজন করেন বাবা অনিল।
ব্যান্ডপার্টি করে সবাইকে জানিয়ে তালাকপ্রাপ্ত মেয়েকে বরণের কারণ জানিয়েছেন উরভির বাবা অনিল কুমার।
তিনি বলেন, বিয়ের সময় মেয়েকে যেভাবে ধুমধাম করে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়েছিলাম, এখন আবার সেভাবেই তাকে বরণ করে নিয়েছি। এজন্যই এ আয়োজন। আমরা চাই, উরভি আবার নতুন করে তার জীবন শুরু করুক।
অবশ্য এমনটি করার মূল কারণ ভিন্ন।
অনিল কুমার জানান, আরও একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। এই ব্যান্ডপার্টির অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি সমাজকে এই বার্তা দিতে চাই যে, লোকজন যেন তাদের মেয়েদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়, দাম্পত্য জীবনে অসুখী বা তালাকপ্রাপ্ত মেয়েকে যেন বোঝা মনে না করে।
উরভির মা কুসুমলতা বলেন, আমার মেয়ে-নাতনি আমাদের সঙ্গেই থাকবে।
বিচ্ছেদের বিষয়ে উরভি জানিয়েছেন, দাম্পত্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম; কিন্তু টানা আট বছর ধরে স্বামী-শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজনদের নির্যাতন, প্রহার, অপমান, খোঁটা সহ্য করেছি; কিন্তু সবকিছুরই সীমা আছে। তারা সেই সীমা অতিক্রম করে গিয়েছিল।
দ্বিতীয়বার বিয়ে করবেন কিনা— প্রশ্নের জবাবে উরভি বলেন, এখন তো নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার সময়। সন্তান আছে আমার, তাই এ ব্যাপারে ভাবতে আমার কিছু সময় প্রয়োজন। তারপর সিদ্ধান্ত নেব কি করব।
এদিকে ডিভোর্সি মেয়েকে ধুমধামে বরণের ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে সাড়া ফেলেছে। অনেকে চমকে গেছেন, অনেকে আবার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। কেউ কেউ অভিভূত।
অনিল কুমারের প্রতিবেশী ইন্দ্রভান সিং বলেন, আমরা উরভির তালাকের খবর আগেই পেয়েছিলাম; গতকাল বাড়ির সামনে ব্যান্ডপার্টি দেখে ভেবেছিলাম যে সম্ভবত দ্বিতীয়বার উরভির বিয়ে হতে যাচ্ছে। যখন আমরা জানলাম যে অনিল মেয়ে স্বাগত জানানোর জন্য এ আয়োজন করেছে, রীতিমতো চমৎকৃত হয়েছি। এটা ছিল অসাধারণ অনুভূতি।
মন্তব্য করুন: