মঙ্গলবার, ২৬শে নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • গণমাধ্যমে হামলা-ভাঙচুর হলে ব্যবস্থা
  • কঠোর হতে চায় না সরকার, আমরা চাই শান্তিপ্রিয় সমাধান
  • বুড়িচংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত
  • নিম্নচাপে উত্তাল সাগর, ৪ সমুদ্রবন্দরে সতর্কসংকেত
  • ঢাকার যে ৫ এলাকায় আজ বেশি বায়ুদূষণ
  • সংঘর্ষে না জড়িয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের
  • যাত্রাবাড়ী-ডেমরায় ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
  • ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে অটোরিকশাচালকরা
  • ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন
  • ঢাকার ৫ এলাকার বাতাস আজ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’

গত ১২ বছরে ৬.৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে চীন

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত:
১২ মে ২০২৪, ১২:১০

চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরের পর থেকে গত কয়েক বছরে বাড়তে শুরু করেছে চীনের ঋণ। যেখানে স্বাধীনতার পর থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত মাত্র ২৭০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ দিয়েছিল দেশটি। সেখানে গত ১২ বছরে ৬.৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। এ ছাড়া ১০.২৯ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি।


পদ্মা রেল সেতু, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ের মতো বড় বড় প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে দেশটি। গত তিন বছরে দ্বিগুণ হয়েছে ঋণ ছাড়ের পরিমাণ। অনেকেই চীনা ঋণকে ফাঁদ হিসেবে উল্লেখ করলেও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা ও অর্থনৈতিক আউটপুট বিবেচনা করে প্রকল্পে ঋণ নিলে সেটা সমস্যা নয়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্যে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে চীন বাংলাদেশকে যে পরিমাণ ঋণ দিয়েছে তার ৯৫ শতাংশই এসেছে গত ১২ বছরে।


আর যার ৮৫ শতাংশই এসেছে সর্বশেষ ছয় বছরে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে দ্বিগুণ হয়েছে দেশটির ঋণ ছাড়। অর্থাৎ ২০১৩ সালে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা বিআরআই (এক অঞ্চল, এক পথ) চালুর পর থেকেই বড় আকারে ঋণ দেওয়া শুরু করে।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় ২৭টি প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়।


এসব প্রকল্পে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয় চীন। যার মধ্যে ইতিমধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার ঋণের চুক্তি হয়েছে। এবং তিন বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। আর গত ১০ বছরে ছাড় হয়েছে ছয় বিলিয়ন ডলারের বেশি।
বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আসার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণত অর্থ ছাড়ও বাড়ে।


তাই ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসে চীনের অর্থ ছাড় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল। ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে চীনের ছাড় করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৯৫ মিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে হয় ১.১৩২ মিলিয়ন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে ছাড় হয়েছিল ৮৮৭ মিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ঋণ ছাড়ে বিলিয়ন ডলারের ক্লাবে প্রবেশ করে চীন।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের তথ্য তুলে ধরে দ্য হংকং পোস্ট এক প্রতিবেদনে বলেছে, চীনের কঠোর অর্থনৈতিক কৌশলের ফাঁদে পড়েছে এশিয়ার উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো। শেষ অবলম্বন হিসেবে চীনের ঋণ-ফাঁদে নিজ থেকে ধরা দিয়েছে দেশগুলো। দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও মধ্য এশিয়াসহ মহাদেশটির সব অঞ্চলই চীনের ঋণ ও অর্থায়নের প্রলোভনের শিকার হয়েছে। চীনের ঋণকৌশলের মধ্যে আছে উচ্চ সুদের হার ও কঠোর শর্তারোপ, যা দেশগুলোকে গুরুতর আর্থিক দুর্দশার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

চীনের দেওয়া ঋণের বিশ্বব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সাল পর্যন্ত চীন থেকে সবচেয়ে বেশি ২৬.৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে পাকিস্তান। দেশটি বর্তমানে অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। এরপর এঙ্গোলা চীন থেকে ঋণ নিয়েছে ২১ বিলিয়ন ডলার। তার পরের অবস্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। তারা ৮.৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে ফাঁদে পড়েছিল। তাদের পর ইথিওপিয়া ৬.৮ বিলিয়ন, কেনিয়া ৬.৭ বিলিয়ন, জাম্বিয়া ৬.১ বিলিয়ন ও বাংলাদেশ ৬.১ বিলিয়ন ঋণ নিয়েছে বলে বিশ্বব্যাংকের তথ্যে উঠে এসেছে। এ ছাড়া লাওস, ইজিপ্ট পাঁচ বিলিয়ন করে, নাইজেরিয়া, ইকুয়েডর, কম্বোডিয়া চার বিলিয়ন এবং অন্যান্য দেশ তিন বিলিয়ন বা তার কম ঋণ নিয়েছে চীন থেকে। চীনা ঋণ হুমকির দিকে যাচ্ছে কি না এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ঋণ নিয়ে কোথায় ব্যবহার করছি সেটা বড় বিষয়। প্রয়োজনীয় ও জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নিলে কোনো সমস্যা নেই। অনেক সময় কম ব্যয়ের প্রকল্পে বেশি ব্যয় ধরে আমরাই ফাঁদ তৈরি করি। তাহলে তো সমস্যা হবেই। তাই প্রকল্প সিলেকশনের ব্যাপারে সাবধান হলে, কোনো ভুল প্রকল্প না নিলে কোনো ঋণই সমস্যা না।’

একই কথা বলেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি  বলেন, ‘কোন দেশ ঋণ দিচ্ছে সেটা বিষয় নয়। প্রয়োজনীয় প্রকল্পে ঋণ নিলে কোনো দেশের ঋণই সমস্যা নয়। ঋণের প্রয়োজনে প্রকল্প নিলে হবে না, প্রকল্পের প্রয়োজনে ঋণ নিতে হবে। সবার আগে প্রকল্পে প্রয়োজন দেখতে হবে। এরপর সেই প্রকল্প অর্থনৈতিকভাবে কতটা লাভজনক সেটাও বিবেচনা করতে হবে।’

ইআরডির তথ্য মতে, গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বহুপক্ষীয় এবং দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন অংশীদারদের কাছে বাংলাদেশের মোট ঋণের স্থিতি ছিল ৬২.৩১ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে চীনের অংশ ৫.৩৭ বিলিয়ন ডলার, যা মোট ঋণের ৮.৬২ শতাংশ। বাংলাদেশের ঋণের স্থিতিতে চীনের অবস্থান চতুর্থ। চীন সরকার সাধারণত দুই ধরনের ঋণ দেয়, এর একটি হলো মার্কিন ডলারে প্রেফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট (পিবিসি) এবং অপরটি হলো চীনের নিজস্ব মুদ্রায় গভর্নমেন্ট কনসেশনাল লোন (জিসিএল) বা সরকারিভাবে দেওয়া রেয়াতি ঋণ।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর