প্রকাশিত:
১২ মে ২০২৪, ১২:২১
গোপালগঞ্জে দেশের একমাত্র ভ্যাকসিন তৈরির কারখানা স্থাপনের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। নিজস্ব টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জনে তিন হাজার ১২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ভ্যাকসিন প্লান্টটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এই কারখানায় ১৫ ধরনের টিকা উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে দীর্ঘ এক যুগেও শেষ হয়নি ‘গোপালগঞ্জ এসেনশিয়াল ড্রাগস কম্পানি লিমিটেডের তৃতীয় শাখা কারখানা স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের বাস্তবায়নকাজ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্কর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গত মাসে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রতিবেদনটি নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনাকালে কমিটির সদস্যরা পাঁচ দফা মেয়াদ বৃদ্ধির পরও তিন বছরের প্রকল্পটির কাজ ১২ বছরেও শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওষুধ কারখানা নির্মাণের কাজ দ্রুত শেষ করতে কমিটির পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সংসদীয় কমিটি সূত্র জানায়, দেশের সর্বজনীন টিকা কার্যক্রম (ইপিআই) শক্তিশালী করতে গোপালগঞ্জে এসেনশিয়াল বায়োটেক অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার নামের ভ্যাকসিন প্লান্ট স্থাপন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে রাষ্ট্রায়ত্ত ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কম্পানি লিমিটেড। সরকার ও এডিবির অর্থায়নে এই প্রকল্পের মধ্যে সরকার ৪২০ কোটি টাকা অর্থায়ন করছে এবং এডিবি ঋণ দিচ্ছে দুই হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে গবেষণার নতুন সুযোগ তৈরি হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবনার তথ্য মতে, রিসার্চ সেন্টারে তিনটি মূল ইউনিট স্থাপন করা হবে।
এর মধ্যে আছে ভ্যাকসিন, থেরাপিউটিকস অ্যান্ড ডায়াগনস্টিকসের পূর্ণাঙ্গ সুবিধাসংবলিত একটি ইউনিট, একটি ভ্যাকসিন উৎপাদন ইউনিট এবং একটি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা ও ডেভেলপমেন্ট ইউনিট। গোপালগঞ্জ সদরে প্রায় ৯ একর জায়গায় এটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্লান্টের নির্মাণকাজ শেষ হলে ২০২৮ সাল নাগাদ ছয়টি টিকা উৎপাদন করা যাবে, যার মধ্যে রয়েছে—এইচপিভি, টিসিভি, এমসিভি, ফ্লু ভ্যাকসিন, অ্যান্টি র্যাবিস ভ্যাকসিন এবং জাপানিজ এনকেফালাইটিস। আর ২০২৯ সালে টিকার কাঁচামাল উৎপাদন করে টিকার সম্পূর্ণ নিজস্ব ম্যানুফ্যাকচারিং হবে। এ পর্যায়ে আইপিভি, পেন্টা, টিটি, পিসিভি-১০ এবং কভিড ও ডেঙ্গুর টিকা উৎপাদন করা হবে।
এরই মধ্যে পাঁচ কর্মকর্তা দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ভ্যাকসিন তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। দক্ষ জনবল তৈরির জন্য পর্যায়ক্রমে অন্যরাও বিদেশে প্রশিক্ষণে যাবেন।
সূত্র জানায়, বৈশ্বিক মহামারি করোনার ভ্যাকসিন সারা বিশ্বে দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠায় দেশে পূর্ণাঙ্গ ভ্যাকসিন ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট ও ইনস্টিটিউট স্থাপনে একটি পরিপূর্ণ প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করে সংসদীয় কমিটি। এ ক্ষেত্রে শুধু করোনা নয়, সব ধরনের রোগের প্রতিষেধক টিকা উৎপাদন উপযোগী কারখানা স্থাপনের সুপারিশ করা হয়।
এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘এই কারখানায় সব ধরনের ভ্যাকসিন তৈরি করা হবে। জমি অধিগ্রহণের পর এখন অবকাঠামো নির্মাণকাজ চলছে। দেশে প্রতিবছর ৩০ লাখ থেকে ৪০ লাখ টিকার প্রয়োজন হয়। শুধু জলাতঙ্কের জন্যই লাগে তিন-চার লাখ টিকা। দেশে টিকা উৎপাদিত হলে সরকারের বড় অঙ্কের অর্থ সাশ্রয় হবে।’
সংসদীয় কমিটির তথ্য মতে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর জীবন রক্ষাকারী ওষুধ উৎপাদনে গোপালগঞ্জে একটি কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল এসেনশিয়াল ড্রাগস কম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)। ২০১১ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত ওই প্রকল্পের বাস্তবায়নকাজ ২০১৫ সালে শুরু হয়। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটিতে চারটি ইউনিট থাকছে। যার একটিতে তৈরি হবে পেনিসিলিন এবং অন্যটিতে হরমোন ইনজেকশন ও জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি। তৃতীয়টিতে স্যালাইন এবং চতুর্থটিতে আয়রন ট্যাবলেট। প্রকল্পটি চালু হলে আনুমানিক ৭৭৮ জন লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হেলথ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে শতভাগ ওষুধ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
সংসদীয় কমিটির তথ্য মতে, এই প্রকল্পের মেয়াদ চারবার বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়। এর পরও কাজ শেষ না হওয়ায় একনেক সভায় সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের মাধ্যমে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু এখনো সেই কাজ শেষ হয়নি।
এদিকে ওষুধ কারখানার প্রকল্প মূল্যায়নে অসন্তুষ্টি জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। তারা বলছে, প্রকল্পটি শুরুর আগে যথাযথ ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়নি। ফলে জমি অধিগ্রহণ, ভৌত কাজ, যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও স্থাপনের ধীরগতিতে প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বেড়েছে।
মন্তব্য করুন: