মঙ্গলবার, ২৬শে নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • ২৫ শহীদ পরিবারকে ৮ লাখ টাকা করে অনুদান প্রদান
  • রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ
  • গণমাধ্যমে হামলা-ভাঙচুর হলে ব্যবস্থা
  • কঠোর হতে চায় না সরকার, আমরা চাই শান্তিপ্রিয় সমাধান
  • বুড়িচংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত
  • নিম্নচাপে উত্তাল সাগর, ৪ সমুদ্রবন্দরে সতর্কসংকেত
  • ঢাকার যে ৫ এলাকায় আজ বেশি বায়ুদূষণ
  • সংঘর্ষে না জড়িয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের
  • যাত্রাবাড়ী-ডেমরায় ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
  • ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে অটোরিকশাচালকরা

আমরা কল্পনাও করিনি একই সাথে সুযোগ পাব, এটা সৃষ্টিকতার মিরাকল

রবিউল আলম , ইবি

প্রকাশিত:
১৩ মে ২০২৪, ১২:৫২

একই সাথে পথচলা, সার্কেল বন্ধু এবং একই বিভাগের তিন শিক্ষার্থী আমেরিকায় ফুল ফান্ডেড পিএইচডি অফার পেলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ‘আমরা কল্পনাও করিনি যে তিনজনের একসাথেই হয়ে যাবে। এটা মহান আল্লাহ তা'য়ালার মিরাকল ছিল। ভয় পাইনি, পথ ছাড়িনি এবং নিজেরা নিজেদেরকে মোটিভেশন দিতাম’ বলে জানান তারা।

তিন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলে ছিলেন দু'জন মো: মামুনুর রশিদ এবং মো: নাঈম হোসেন। অপর এক শিক্ষার্থী মো: সুমন আলী শহীদ জিয়াউর রহমান হলে থাকতেন।

মঙ্গলবার (১৩ মে) ওই তিন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হয় নাগরিক সংবাদ'র সাথে। একপর্যায়ে তাদের পথচলা থেকে শুরু করে অভাবনীয় ইতিকথা তোলে ধরেন,

“আমরা তিনজন খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু সেই প্রথম বর্ষ থেকেই। ২০১৬ সালে এডমিশন দিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হই। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে আমাদের ক্লাস শুরু হয়। শুরু হয় বন্ধুত্ব, শুরুতে অনেক বন্ধু এবং বান্ধবী হয়। কিন্তু পড়াশোনার করার জন্য আলাদা একটা বন্ধু সার্কেল মনে মনে খোঁজার চেষ্টা করতাম। প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা দেই খুব সম্ভবত ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে। কিছুদিন পর প্রথম সেমিস্টারের রেজাল্ট পাই সবাই। তখন থেকেই দেখতাম নাইম এবং সুমনের মধ্যে পড়াশোনার আগ্রহটা অনেক বেশি। আরও অনেকেই ছিল, কিন্তু দিনশেষে অনেকে বিসিএস এর দিকে ঝুকে যাওয়ায় আমরা তিনজনই ছিলাম ছেলেদের মধ্যে। দুই-তিনজন মেয়েও আছে আমাদের এই জার্নিতে। যাইহোক, তখন থেকেই আমাদের একসাথে পথচলা শুরু বিভিন্ন ধরনের পড়াশোনা, লেখালেখি, এক্সট্রা কারিলার একটিভিটিজ। আমরা বিভাগের পড়াশোনা এবং একাডেমিক কার্যক্রমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলাম। নিজেদের মধ্যে একটা মধুর প্রতিযোগিতা ছিল। তিনজন তিনজনের মধ্যে কোনো তথ্য গ্যাপ ছিল না। যে যে নোট বা পেপার রেডি করতো, সাথে সাথে আমাদের গ্রুপে এবং সবার সাথেই শেয়ার করতাম প্রায় ক্ষেত্রেই। আমাদের তিনজনেরই খুবই আগ্রহ ছিল একাডেমিক লাইনে থাকা। আমরা মনে করি, একাডেমিক লাইনে নিজেদের সর্বোচ্চ মেধাটা কার্যকর করা বিভিন্ন একাডেমিক গবেষণার মাধ্যমে। এরকম করতে করতে চতুর্থ বর্ষে উঠে যাই, তখন আমরা ভাবলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবো। আমরা একাডেমিক কনসেপ্টগুলা ভালোভাবে বুঝার ও শেখার চেষ্টা করতাম। যাইহোক, প্রথম বর্ষ থেকেই দেখতাম আমাদের বিভাগের ড. মো: বখতিয়ার হাসান স্যার গবেষণার কাজে যথেষ্ট সক্রিয়। তখন থেকেই আমরা তিনজন একসাথে স্যারের সাথে ভালো একটা সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেছিলাম গবেষণার বিষয়ে জানার জন্য। স্যার আমাদের আগ্রহ দেখে সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।


আমরা একটা ল্যাব গঠন করি, ল্যাবের নাম হচ্ছে "Hasan's Research Lab". ২০২০ সালে জানুয়ারি মাস থেকেই শুরু করি গবেষণার কাজ। কিন্তু সামনে চলে আসে করোনার মত মহামারি রোগ। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকেই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের গবেষণা বন্ধ হয়ে যায়নি। সকল প্রতিকূলতার মাঝেই আমরা গবেষণা কার্যক্রম চালাতে থাকি। বখতিয়ার হাসান স্যার শুরু থেকেই আমাদেরকে অনেক যত্নসহকারে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়েছেন। আমরা সপ্তাহে ২-৩ বার জুমে মিটিং করতাম। ২০২১ সালের জুনের দিকে আমাদের গবেষণাপত্র প্রথম পাবলিশ হয়। তখন আমরা আরও বেশি মোটিভেটেট হয়েছিলাম। এক প্রকার প্রচণ্ড আনন্দ নিয়ে কাজ করতাম দিনরাত। স্যার আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছেন যে তোমরা বিদেশে গিয়ে উচ্চ শিক্ষা নিবা, তারপর বিশ্বের নামি-দামি গবেষকের সাথে কাজ করবা। আমাদের নাম উজ্জ্বল করবা। মাঝে মাঝে ভেঙে পড়তাম, আবার মোটিভেট হইতাম স্যারের কথায়। যাইহোক, গবেষণা সফলতা কিছুটা পাবার পর আমরা আইয়েল্টস এবং জিআরই এর দিকে ফোকাস দেই। প্রথমে আমরা ঠিক করি আইয়েল্টস দিবো, ২০২২ সালের জুনের দিকে পরীক্ষা দেই, কারোই কাঙ্ক্ষিত ফল আসলো না। কিন্তু আমরা বিন্দুমাত্র থেমে যাইনি। আবার তিনজন একসাথে আবার প্রিপারেশন শুরু করি। আল্লাহর রহমতে আমরা পরবর্তীতে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাই। এরমধ্যে আমাদের বিবিএ জার্নি শেষ হয় জুন ২০২২ এর দিকে। আমরা তিনজনই একই রেজাল্ট করি বিবিএ তে। তারপর শুরু হলো এমবিএ জার্নি, তিনজন একসাথে উঠেপড়ে লাগছি আরও ভালো রেজাল্ট করতে হবে। তখন আমরা পুরোদমে জিআরই তে ফোকাস দিতে পারিনি। এমবিএ পরীক্ষা শেষ করি ২০২৩ সালেন জুন-জুলাইের দিকে। তারপর শুরু জিআরই এর জার্নি।


তিনজন তিন জায়গায় থাকলেও আমরা প্রতিদিন জুমে অথবা হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলতাম। কার কতটা প্রগ্রেস সব শেয়ার করতাম। বলে রাখা ভালো, জিআরই পরীক্ষায় ভালো করা করা খুবই কঠিন একটি কাজ। তারমধ্য আমরা তিনজনই পিউর বিজনেসের ছাত্র। আমরা এটাতে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। সময় বেশিদিন নাই। ২০২৪ সালের ফল সেশনে আবেদনের প্রায় সময় ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকে। আমরা নভেম্বর মাসে পরীক্ষায় বসি। দুঃখজনক ভাবে আমাদর তিনজনেরই খুব খারাপ স্কোর আসে। এতো খারাপ স্কোর দিয়ে আসলে আবেদন করে কোনো লাভ হবে না বুঝতে পেরেছিলাম। আমেরিকার বিজনেস পিএইচডি প্রোগ্রামগুলো খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ। তারমধ্যে ফাইন্যান্স প্রোগ্রাম আরও বেশি প্রতিযোগিতাপূর্ণ। মাত্র ২-৩ জন স্টুডেন্ট ভর্তি করায় প্রত্যেক বছরে। কিন্তু আমরা মনোবল নিয়ে সামনের দিকে এগিয়েছিলাম। ভয় পাইনি, পথ ছাড়িনি। নিজেরা নিজেদেরকে মোটিভেশন দিতাম। আমরা দৈনিক প্রায় মিনিমাম আধা ঘন্টা হলেও কথা বলতাম একে অপরের সাথে। যাইহোক, জিআরই পরীক্ষা ফি প্রায় ২৫০০০ টাকা। দ্বিতীয়বার পরীক্ষার টাকা ম্যানেজ করাও কঠিন ছিল তিনজনের জন্য। যাইহোক, আবার শুরু করি প্রিপারেশন। টার্গেট জানুয়ারির মধ্যে আমাদের স্কোর হাতে রাখতে হবে।


সুমন আলী পরীক্ষায় বসে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের ২৭ তারিখে। এইবার সে তার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেলো। সে ৩১৪ পায় জিআরই তে। আমি আর নাঈম খুবই মোটিভেশন পেলাম। সুমন যেহেতু পেরেছে। আমরাও পারবো। তারপর আমি পরীক্ষায় বসি ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের ১৬ তারিখে। আল্লাহর রহমতে আমিও কাঙ্ক্ষিত স্কোর পাই ৩০৬। যদিও এটা এতো বেশি না বিজনেস প্রোগ্রাম এর বিগতবছরের তথ্য অনুযায়ী। তবুও মনোবল হারাইনি। অন্যান্য ডকুমেন্টস রেডি করে অনলাইনে আবেদন শুরু করি আমি আর সুমন। দুঃখের বিষয় হলো, দ্বিতীয়বারেও নাঈম হোসেন কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পায়নি। সে কিছুটা ভেঙে পড়লেও আমরা সবসময় তাকে মোটিভেট করেছি, তাকে আবার দিতে বলি। সে প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলো। কিন্তু আমরা তাকে ছাড়তে দেয়নি। আমরা তিনজন তিনজনের জন্য দোয়া করতাম যাতে সবারই হয়ে যায় এই ফল সেশনে। তীব্র মনোবল নিয়ে নাঈম আবার প্রিপারেশন শুরু করে। ফেব্রুয়ারীর শেষের দিকে নাইম তৃতীয়বারে মত পরীক্ষা দেয়। এইবার নাঈমের স্কোর আসলো ৩০৭। বেশকিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের ডেডলাইন ছিলো। আমরা তিনজন আবেদন করে ফেলি। তারপর ফেব্রুয়ারির শেষের দিক থেকে আমাদের ইন্টারভিউ এবং ফুলফান্ডিং অফার আসতেই থাকে। আমরা কল্পনাও করিনি যে তিনজনের একসাথেই হয়ে যাবে। এটা মহান আল্লাহ তাআলার মিরাকল ছিল। একসাথে তিনজন আমেরিকার ফিন্যান্সের পিএইচডি তে চান্স, তাও আবার একই বিশ্ববিদ্যালয়, একই ব্যাচ থেকে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এরকম দৃষ্টান্ত নাই আমাদের জানামতে, বিশেষকরে ফ্যাইন্যান্স বিভাগ থেকে।


আমরা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার পাই। অবশেষে মোঃ মামুনুর রসিদ University of Texas at San Antonio (PhD in Finance) মোঃ নাঈম হোসেন: University of New Orleans (PhD in Financial Economics) মো: সুমন আলী: University of Texas at El Paso (PhD in Finance) পিএইচডি করার সুযোগ পায়।

তারা আরও জানান, বাংলাদেশ থেকে খুব কম শিক্ষার্থীই আছেন, যারা সরাসরি আমেরিকার ফাইন্যান্সের পিএইচডি তে ইনরোল করেন। ফাইন্যান্সের পিএইচডি প্রোগ্রামগুলো খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়, সেখানে একই বিশ্ববিদ্যালয়, একই বিভাগ এবং তিন বন্ধু একসাথে পিএইচডিতে সুযোগ পাওয়া অনেক গর্বের। এখানে আমাদের তিনজনের সুপারভাইজার ড. বখতিয়ার হাসান স্যারের অবদান বলে শেষ করা যাবে না। যাইহোক, মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ তাআলার প্রতি অশেষ শুকরিয়া যে আমরা এই চ্যালেঞ্জিং জার্নিতে সফল হয়েছি। তবে এটাই শেষ না। যেতে হবে বহুদুর।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর