প্রকাশিত:
১৪ মে ২০২৪, ১৪:৩৩
‘এমন দিনে তারে বলা যায়/ এমন ঘন ঘোর বরিষায়…’ কবিগুরুর এই লাইন দু'টি মনে করিয়ে দেয় বৃষ্টির দিনের আবেদনময়ী রূপ। গ্রীষ্মের প্রখরতা ও তীব্র দাবদাহে জনজীবন যখন অতিষ্ঠ, তখন স্বস্তির পরশ হয়ে আকাশের বুক বেয়ে নেমে এলো বৃষ্টি। কাল বৈশাখীর অঝোর ধারার বৃষ্টি পিঠে করে নিয়ে আসে প্রকৃতির বিশুদ্ধতা ও সজীব কোমলতা। বৃষ্টির দিনকে কবি-সাহিত্যিকরা সাহিত্য রচনার রসদ বলে মনে করেন।
কালবৈশাখী ঝড়ে সেজেগুজে নতুন রূপ নিচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বৃষ্টি হলেই যেন ১৭৫ একরের এই ভূমিতে ছড়িয়ে যায় একরাশ মুগ্ধতা জড়ানো মায়া আর ভালোবাসা। ঝুম বৃষ্টির দিনে টাপুর টুপুর শব্দে হাজার হাজার বৃক্ষের যাদু ঘরে যেন নৈসর্গিক দৃশ্যে ফুটে ওঠে। বৃষ্টিতে ক্যাম্পাসের চারিদিক যেন ভরে যায় নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে। বৃষ্টি শেষে স্নিগ্ধ আকাশ যেন সবুজের উপর ঢেলে দেয় এক গুচ্ছ সাদা মেঘ। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে প্রতিটি বৃষ্টির ফোটা শিহরিত করে মন। সারি সারি গাছের পাতা থেকে টিপটিপ করে বৃষ্টি কণা মাথার উপর জেকে বসে। বৃষ্টির কণার আলতো ছোঁয়া মনকে পুলকিত করে এক অন্য রকম অনুভূতি দেয়।
সেজেগুজে তৈরি হয় প্রেমমোহিত বৃষ্টি বাদলার দিনে প্যারাডাইস রোড, ডায়না চত্ত্বর, বটতলা, আমবাগান, মেয়েদের হলের সামনের সড়ক, বিভিন্ন অনুষদের সামনের রাস্তাগুলো, বঙ্গবন্ধু হলের সম্মুখ, গগন-চুম্বী দালানগুলো, স্বাধীনতা স্তম্ভ, শহীদ মিনার, সততা ফোয়ারা। প্রকৃতির রং-বেরঙের ফুল- কৃষ্ণচূড়া, জারুল, সোনালু, হাসনাহেনা, কাঠগোলাপ, বেলী, নয়নতারা, লতা-পাতা, ইত্যাদি। এ যেন সবুজের অলংকারে আবৃত এক রূপকথার মায়াপুরী।
বিশ্ববিদ্যালয়টির অডিটোরিয়াম, খালেদা জিয়া হল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সম্মুখে রয়েছে রক্তিম লাল রঙের ফুলবিশিষ্ট কৃষ্ণচূড়া গাছ। এক পশলা বৃষ্টি ক্যাম্পাসের কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য দ্বিগুণ রূপে ফুটিয়ে তোলে। বৃষ্টির ছোঁয়ায় যেন সেই রক্তিম আভা আরো গাঢ় হয়ে উঠে। জারুলের বেগুনি রঙের আভা, সোনালুর রং আর বৃষ্টি শেষে নীলাভ আকাশ মিশে একাকার হয়ে যায়। এ যেন দুটি হৃদয়ের এক আসাধারণ মেলবন্ধন।
এখানকার শিক্ষার্থীদের কাছে ছয়টি ঋতু ছয় রকম আর্শীবাদ নিয়ে আসে। একেক সময় ক্যাম্পাসের বৈচিত্র্য দেখা দেয় একেক রকম। বৃষ্টির এই দিনগুলি তার মধ্যে অন্যতম। গ্রীষ্মের তীব্র গরমে এই বৃষ্টি শিক্ষার্থীদের কাছে এক আনন্দের মহামিলন ও স্বস্তির কারণ। এছাড়াও কর্মব্যস্ত সারাদিন ক্লাস, পরীক্ষা, টিউটোরিয়াল, অ্যাসাইমেন্ট, প্রেজেন্টেশন, সাক্ষাৎকারের মতো বিভিন্ন রকম ধরাবাধা একাডেমিক কাজ থেকে হাফ ছেড়ে বাচঁতে শিক্ষার্থীরা বোধ হয় একটু বৃষ্টির দিনের অপেক্ষায় থাকে।
বৃষ্টি এসেছে তো ক্লাসে মন বসানো দায়। ক্লাস শেষ হতে না হতেই শিক্ষার্থীরা সহপাঠীদের সাথে রাস্তায়, বিভিন্ন চত্ত্বরে, শহীদ মিনারে ছুটে যায় বৃষ্টি উপভোগ করতে। অঝোর বৃষ্টির দিন যেন আড্ডা বা খোশ গল্পে মেতে ওঠার উপযুক্ত সময়। তাছাড়া কখনো চলে গানের আসর, কখনো বা খিচুড়ি রান্না। অনেকে জানালার পাশে হাত ভেজায়, বিভাগ, হলের বারান্দা বা বেলকনিতে বসে বৃষ্টি দেখে আর শৈশবকালের মধুর স্মৃতি মনে করে। কেউ চা হাতে নিয়ে জানালার ধারে বসে আকাশের কান্না দেখে, কেউ বা প্রিয় মানুষের হাত ধরে উপভোগ করে বৃষ্টির স্নিগ্ধতা।
অনেকে প্রিয়জনকে মনে করে চিঠি লিখে, কিন্তু সেই চিঠি আর ফেলা হয় না ডাকবাক্সে। হঠাৎ পিছন থেকে সহপাঠী এসে দেখে নেয় প্রিয়জনকে লিখতে থাকা চিঠির কয়েকটি মাধুরি মাখা শব্দ। আর সেই নিয়ে চলে হাসাহাসি, খুনসুটি। আবার অনেকেই প্রিয় বই নিয়ে হারিয়ে যায় অজানা রাজ্যে। ফুটবলপ্রেমী শিক্ষার্থীরা বৃষ্টি উপভোগ করতে মাঠে নামে ফুটবল নিয়ে। শিক্ষার্থীদের ক্লাস, পরীক্ষা, এসাইনমেন্টের এক ঘেয়েমিতে বৃষ্টি মুখর সময়টি হয়ে ওঠে অনাবিল আনন্দের। এসব কিছু চোখের সামনে আসতেই ফিরে যায় শৈশবের কল্পনার রাজ্যে। শৈশবের পল্লীর কাদা মাটি ডিঙিয়ে চলার স্মৃতি রোমন্থন হয় বারংবার। বৃষ্টির অবিরল ধারা ব্যথিত হৃদয়ে চির সৌন্দর্যলোকের আভাস দেয়।
বৃষ্টির দিনে হঠাৎ করেই মন খারাপ হয়ে যায়। মনে হয় আকাশের মন খারাপের সঙ্গে পাল্লা দিতে চায় মন। হয়তো কেউ আবেগী চিত্তে বসে স্মৃতিচারণ করে সেই মুহূর্তের; যা অনেক আগেই হারিয়ে গেছে তার জীবন থেকে। কাঠফাঁটা রোদ্দুরের পর এক পশলা বৃষ্টি দেখলে আনন্দে ভরে উঠে মন। প্রকৃতি ফিরে পায় নতুন প্রাণ। আর ইবি ক্যাম্পাস ভরে উঠে সজীবতায়। আর তাই বৃষ্টির পরশে নবরূপে সেজে উঠেছে প্রকৃতিকন্যার বিশাল ক্যাম্পাস। প্রকৃতিপ্রেমী যেকোনো মানুষই বৃষ্টিস্নাত ইবি ক্যাম্পাসের প্রেমে পড়তে বাধ্য।
মন্তব্য করুন: