প্রকাশিত:
১৫ মে ২০২৪, ১১:২২
যাদের জীবন অধ্যয়ন ও চর্চা করে শতাব্দীর বাঙালি সমাজের ইতিহাসের বাঁক চেনা যায়, বাঙালি মুসলমানের সাহিত্যচর্চা ও আধুনিকতার দিকগুলো চিহ্নিত করা যায়, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান তাদের অন্যতম। ইতিহাসের পরিক্রমায় আনিসুজ্জামান হয়ে উঠেছেন একটি প্রক্রিয়া, হয়ে উঠেছে পথিকৃৎজন।
বাঙালির বুদ্ধিবৃত্তিক অনুশীলনের ইতিহাসেই শুধু নয়, সামাজিক এবং রাজনৈতিক ইতিহাসেও তার অবস্থান একদিকে স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে, অন্যদিকে বাঁক পরিবর্তনকারী হিসেবে।
বরেণ্য শিক্ষাবিদ জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী ছিল মঙ্গলবার (১৪ মে)।
‘আনিস স্যার’-এই ডাকেই তার ছাত্র-অছাত্র সবার কাছেই প্রিয় ও পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। এই মানুষটিকে নিয়েই বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে রাজধানীর ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্মরণসভা।
এদিন বিকেলে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। আলোচনা করেন এশিয়াটিক সোসাইটির সাবেক সভাপতি মাহফুজা খানম এবং কবি ও প্রাবন্ধিক পিয়াস মজিদ।
মাহফুজা খানম বলেন, চার বছর হলো স্যার চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক জায়গা, ভাষা আন্দোলন; সেখান থেকেই কিন্তু যাত্রা শুরু। এরপর যতগুলো বছর গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত; ১৯৬২ বলি, ১৯৬৯ বলি, এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের কথা বলি, সবকিছুতেই তার অবদান রয়েছে। এখানে বলা প্রয়োজন, তিনি বাম ঘরানার চিন্তা চেতনা ধারণ করেছেন। তিনি রাজনৈতিক কোনো দলে যুক্ত হননি, কিন্তু রাজনীতি ছাড়া যে জীবন নয়, রাজনীতি যে প্রধান নিয়ামক, সেটা তিনি সবসময় ধারণ করেছেন। এছাড়া দেশের জন্য কোথায় মঙ্গল কি হওয়া উচিত, সেটা সবসময় তিনি বলেছেন। সেগুলো তার লেখাতেও উঠে এসেছে। সেটা খুবই পরিমিতভাবে, পরিশীলিতভাবে তিনি বলেছেন। কখনো খুব উগ্রভাবে কথাগুলো বলেননি।
তিনি বলেন, আমাদের ওই মাপের জায়গায় দ্বিতীয় মানুষটি আমি খুঁজে পাই না। তাকে হারিয়ে আমাদের বিরাট রকমের একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এই শূন্যতা আগামীতে কবে পূরণ হবে বা কারা পূরণ করবে, সেটাও জানি না।
পিয়াস মজিদ বলেন, এক বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী আনিসুজ্জামান। তিনি জাতীয় দায়িত্ব যেমন পালন করেছেন, সাহিত্য ক্ষেত্রেও অনন্য অবদান রেখেছেন। তিনি নিজে গবেষণা কর্ম হাতে নিয়েছেন, জাতীয় পর্যায়ের মনীষীদের নিয়ে স্মারকগ্রন্থ করেছেন। এই মানুষটি সিরিয়াস কাজ যেমন করেছেন, তার রসবোধও ছিল চমৎকার। সব বয়সী মানুষের সঙ্গে খুব সহজেই মিশতে পারতেন তিনি। সবাই তাকে আপনজন মনে করতেন। জীবন নিয়ে একটি সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী ছিলেন তিনি।
তিনি ছোট বড় সব মানুষকে সম্মান দিয়েছেন। তাই সারাজীবন সম্মান পেয়েছেন। শিল্পের সৌন্দর্য হচ্ছে সরলতা। এই সরলতাও হচ্ছে আনিসুজ্জামানের জীবনের অন্যতম সৌন্দর্য।
মন্তব্য করুন: