প্রকাশিত:
১৯ মে ২০২৪, ১৩:৪৫
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে দায়িত্ব পালনে অবহেলা, গাফিলতি ও দুর্নীতির দায়ে গত ৪ বছরে বিভিন্ন স্তরের ৩৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। আজ রবিবার (১৯ মে) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলন এ তথ্য জানান তিনি।
শেখ তাপসের দায়িত্বভার গ্রহণের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত "উন্নত ঢাকার উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ৪ বছর" শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ডিএসসিসি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শেখ তাপস বলেন, দায়িত্বভার গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই করপোরেশনের সব স্তরেরকর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাফিলতি, অনিয়ম, দুর্নীতি দূর করারমাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমি শূন্য সহনশীলতানীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছি।
প্রশাসনিক সংস্কারের আওতায় এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।
তিনি বলেন, দায়িত্ব পালনে অবহেলা, গাফিলতি ও দুর্নীতির দায়ে বিগত ৪ বছরে বিভিন্নস্তরের ৩৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। একইসঙ্গে কর্পোরেশনের প্রাত্যহিক কার্যক্রম সম্পাদনেজনবলের যে তীব্র সংকট ছিল তা উত্তরণে বিগত ৪ বছরেভারী গাড়ির ১৪৩ জন চালক, ৬৬ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী, ৭৭ জন হিসাব সহকারী, ২৭ জন রেভিনিউ সুপারভাইজার, ৩১ জন পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক, ২০ জন স্প্রেম্যান সুপারভাইজারসহ বিভিন্ন বিভাগে সর্বমোট ৮৭৯ জন জনবলনিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং ২১৭ জনের নিয়োগ কার্যক্রমচলমান রয়েছে।
শেখ তাপস বলেন, মেয়র নির্বাচনের প্রাক্কালে আমি ঢাকাবাসীর ওপর কোনো রকমের করের বোঝা না চাপিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছিলাম।
সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিগত ৪ বছরে আমরা কোন খাতে কোন কর বৃদ্ধি করিনি। বরং এ সময়ে ২৫টি নতুন খাত সৃষ্টি করা হয়েছে এবং ১৪টি নতুন খাত হতে আমরা রাজস্ব আদায় শুরু করেছি। ফলে করোনা মহামারীর মতো বৈশ্বিক সংকটের মাঝেও রাজস্ব আদায়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ইতিহাস সৃষ্টি করে চলেছে, যা অদ্যবদি অগ্রসরমান।
তিনি জানান, ২০১৯-২০ অর্থবছরে করপোরেশন রাজস্ব আদায় ছিল মাত্র ৫১৩.৯৬ কোটি টাকা, যা ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে যথাক্রমে ৭০৩.৩১ কোটি, ৮৭৯.৬৫ কোটি ও ১০৩১.৯৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত যে রাজস্ব আদায় হয়েছে তা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৫৪ কোটি টাকা বেশি। ফলে চলমান অর্থবছরে আমরা পূর্বেকার মাইলফলক অতিক্রম করতে পারব বলে আশাবাদী।
তিনি বলেন, দায়িত্বভার গ্রহণের পর মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ঢেলে সাজাতে আমরা সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেই। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে ২০২০ সালের ৬ জুন আমরা বছরব্যাপী সমন্বিত মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু করি। বর্তমানে সূচি অনুযায়ী সারাবছরই আমরা এই কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছি।
শুধু তাই নয়, মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বেগবান করতে আমরা নতুন মশককর্মী নিয়োগ দিয়েছি। পূর্বে ৪২৪ জন মশককর্মী এই কার্যক্রম পরিচালনা করতো। বর্তমানে ১ হাজার ৫০ মশককর্মী ও মশক সুপারভাইজার নিয়মিতভাবে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। একইসাথে আমরা প্রয়োজনীয় যান-যন্ত্রপাতিও বৃদ্ধি করেছি।
আমার দায়িত্বভার গ্রহণের পূর্বে ৫৫১টি ফগার মেশিন, ৪৩১টি হস্তচালিত মেশিন ও ১৭টি হুইলব্যারো মেশিন দিয়ে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। বিগত ৪ বছরে আমরা নতুন আরো ৫৩৫টি ফগার মেশিন, ৬০০টি হস্তচালিত মেশিন ও ২৯টি হুইলব্যারো মেশিন ক্রয় করেছি।
এছাড়াও বার্ষিক কর্মপরিকল্পনার আলোকে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনদের সাথে নিয়মিত মতবিনিময়, কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (১,০৮৬টি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা), মসজিদ-মন্দির, থানা ও পুলিশ ফাঁড়িসহ সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে বিশেষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিয়ন্ত্রণ অভিযান পরিচালনা, কোন ওয়ার্ডে সপ্তাহে ১০ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হলে সে ওয়ার্ডকে লাল চিহ্নিত এলাকা (রেড জোন) ঘোষণা করে চিরুনি অভিযান পরিচালনা, কর্পোরেশনের ১০টি অঞ্চলেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে।
মেয়র বলেন, একটি বিষয় সকলের কাছে পরিষ্কার করতে চাই। আমাদের কাছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ডেঙ্গু রোগীর প্রাত্যহিক যে তথ্য সরবরাহ করা হয়, কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে আমাদের সম্মানিত কাউন্সিলরবৃন্দ, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাগণ ও মশকর্মীরা সে ঠিকানা পরিদর্শন করে এবং ডেঙ্গু রোগীর বাসস্থল ও চারপাশের ৩০০ গজ এলাকায় বিশেষ চিরুনি অভিযান পরিচালনা করে থাকে।
কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সরবরাহকৃত তথ্যে নানাবিধ অসংগতি থাকে। ফলে এডিস মশার প্রজননস্থল নিধন কার্যক্রমে আমাদের সময়ক্ষেপণ হয় এবং প্রকৃত রোগী খুঁজে বের করতে আমাদের বেশ বেগ পেতে হয়। তারপরও আমাদের গভীর তদারকির ফলে আমরা সকল রোগীর বাসাবাড়ি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকি। এমন একজন রোগীও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যার বাসাবাড়িতে আমরা যাইনি এবং এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা হয়নি।
এভাবে যাচাই-বাছাই শেষে গত বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত আমরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৯ হাজার ৭৬৪ জন ডেঙ্গু রোগী পেয়েছি (তখন সারাদেশে রোগী ছিল ২ লক্ষ ৭১ হাজার ১৭৫ জন) যা, সারাদেশের মোট রোগীর মাত্র ৩.৬০ শতাংশ। ফলে সফলতার সাথে আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি।
মন্তব্য করুন: