প্রকাশিত:
২৯ মে ২০২৪, ১২:১১
‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’-জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই নীতি ও আদর্শ অনুসরণ করে পরিচালিত হয় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি। সেই আলোকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সুনামের সঙ্গে দীর্ঘ পথ চলা ও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখায় বাংলাদেশ আজ শান্তি ও সম্প্রীতির এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। জাতিসংঘের এই শান্তিরক্ষা মিশনে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান যার নেতৃত্বে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন শুরু হয়। আর ১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরানে সামরিক পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেওয়া শুরু। এরপর ৩৫ বছরে বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের এক গর্বিত অংশীদারে পরিণত হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে সর্বোচ্চসংখ্যক শান্তিরক্ষী পাঠানো ১২৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছিল শীর্ষ অবস্থানে। এর আগেও কখনো প্রথম, কখনো দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ।
গত ৩৫ বছরে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা শান্তিরক্ষায় বিশ্বের ৪০টি দেশ বা স্থানে ৬৩টি মিশন সম্পন্ন করেছেন। এতে বাংলাদেশের মোট এক লাখ ৮৮ হাজারের বেশি শান্তিরক্ষী প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন। এর মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক লাখ ৫১ হাজার ৯৩০ জন সদস্য। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়েই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তাদের সর্বোচ্চ পেশাদারীর পরিচয় দিয়ে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করে চলেছে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনের নেতৃত্ব তার সাক্ষ্য বহন করে। সদস্যদের কর্মস্পৃহা ও পেশাদারত্বে অভাবনীয় সাফল্যে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি অপরিহার্য প্রতিষ্ঠান। জাতিসংঘের মিশনে আরও রয়েছেন বিমানবাহিনীর আট হাজার ৬৪০ জন, নৌবাহিনীর ছয় হাজার ৭০৪ জন এবং পুলিশের ২১ হাজার ২৮৪ জন সদস্য।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর এই সদস্যরা যে সকল দেশে শান্তি মিশনে অংশগ্রহণ করেছেন এর মধ্যে রয়েছে, নামিবিয়া, কাম্বোডিয়া, সোমালিয়া, উগান্ডা, রুয়ান্ডা, মোজাম্বিক, প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়া, লাইবেরিয়া, হাইতি, তাজিকিস্তান, পশ্চিম সাহারা, সিয়েরা লিয়ন, কসোভো, জর্জিয়া, পূর্ব তিমুর, কঙ্গো, আইভরি ডি ইভয়ার এবং ইথিওপিয়া।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্য হওয়ার পর ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলায় ভাষণ দেন। সেই ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার সর্বাধিক গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সমর্থন ও দৃঢ় অবস্থানের কথা বলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর এই অবস্থানকে অনুসরণ করেই জাতিসংঘ পরিচালিত শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মিশনে অংশগ্রহণ বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের পরিচিতি ও সুনামও বেড়ে চলেছে।
মন্তব্য করুন: