প্রকাশিত:
২ জুন ২০২৪, ১২:২৪
চার দিকে পানি থৈ থৈ করছে। পানিবন্দি রয়েছি।
খাবার নেই। নেই খাবার পানিও। আমাদের এই সীমাহীন কষ্টে কেউ পাশে নেই। এমন অভিযোগ খুলনার দাকোপ উপজেলার তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের কামিনী বাসিয়া গ্রামের যুবক দিপ্ত সরকারের।
শনিবার (১ জুন) বিকেলে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত এ গ্রামের মানুষ কোনো সরকারি ত্রাণ পায়নি। কামিনী বাসিয়াদের কান্না কেউ শোনে না।
অঞ্জনা সরকার নামের এক গৃহবধূ বলেন, ‘আমরা যে কি কষ্টের ভিতর আছি আমাগের বাড়ি ঘরের পানি সরতিছেনা। বাচ্চাগাচ্চা গুলো বাইরে জাতি পারতিছেনা। গরু ছাগল হাঁস মুরগি নিয়ে কতডা কষ্টের ভিতর আছি সে আপনাগে বলে বুঝাতে পারবনা। আজকে যদি চেয়ারম্যান এলাকার রাস্তাডা করতো আমরা তালে এভাবে ভাসতাম না। আমরা শনিবার থেকে কোনদিন এক সাক খাচ্ছি আর কোনদিন খাচ্ছি না। খেয়ে না খেয়ে যাচ্ছে আমাগের দিন। পুরুষের কোন কাজ নেই আমাগের মহিলাগের কোন কাজ নেই। আমাগে কাপড় চোপড় গুলো আমরা মেলাতেই পারতেছি না। কোথায় মেলবো মেলার কোন জায়গা নেই। রান্না করে খাব কি কইরে কাঠ কুটো গুলো সব ভিজে গেছে। রান্না করে খেতে পারছিনা। ঘর ভেঙে গেছে রাতি ঘুমাতে পারতিছিনা। ’
অর্চনা মন্ডল নামের অপর এক গৃহবধূ বলেন, আমাগে বাড়িটা জলাবদ্ধতায় ভরা। দুটো ছোট ছোট বাচ্চা বাড়ির ভিতরে তারা উঠানে নামতে পারছে না। তারা তো সাঁতার জানে না। তার জন্য সংকটের ভিতর আছি। জোয়ারের সময় ডুবে থাহি। ভাটায় একটু পোনি কমে। ঘর গুলো খুব নোংরায় আছে। খুব সাপ কুকুরের ভয়ে আছি। উনুনে জল উঠে গেছে। তাতে করে খুব ভয়ের ভিতর আছি।
নিজেদের দুরস্থার কথা বর্ণনা করে সুমন গাইন বলেন, ‘এটা আমাদের কামিনীবাসিয়া ৫ নাম্বার ওয়ার্ড। এখানে যে রাস্তাটি দেখছেন তার পাশে আমার বাড়ি। রাত দুইটে বাজে রাস্তা থেকে এক দের হাত উপর দিয়ে পানি যাচ্ছে। তখন এই সম্পূর্ণটা ভেঙ্গে গেছে। সামনেও ভেঙ্গে গেছে। আমরা কি করি কহন কি করব আসলে কিছু বুঝতে পারতেছিলাম না। তখন রাত দুইটার সময় যে যার মত বাচ্চা-গাচ্চা নিয়ে গেছে সাইক্লোনে। পাশেই আমার জেঠিমার দোকান এই যে এখানে আইসে দেখি এইখানে ভাঙ্গা ওইখানে ভাঙ্গা। পানির যে চাপ আমরা ঢুকতে পারতিছিনা। এহন আমাদের বাচাই দুষ্কর বিষয়। আমাদের আইলার পর থেকে এই যে রাস্তাডা দেখছেন এখনো পর্যন্ত এই রাস্তায় কখনো মাটি দেওয়া হয়নি। আমরা কোন ত্রাণ চাই না। আমাদের বাঁচতে হলে টেকসই বেড়িবাঁধ লাগবে। ’
সুবোল গাইন বলেন, ‘আইলার আঘাতের পরে হলো বিশাল বেগে এই ঝড়ডা। আমাদের হলো নদীর কূলে বাড়ি তো এইজন্য বেশি ভাঙ্গে। রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে যায় । রাস্তার পরে চাপ আসে। আমাদের রাস্তারই দরকার আমরা চাই রাস্তা। আমরা কিভাবে বাঁচব। বেড়ি বাঁধ উঁচু করে দিলে হয়। আমাদের ত্রাণ দরকার নেই রাস্তা চাই। ’
সরেজমিনে কামিনী বাসিয়া গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বাড়ি ঘর ঝড়ের তোড়ে ভেঙে গেছে। বেড়িবাঁধের রাস্তা ক্ষত বিক্ষত। অনেক বাঁধ শিবসা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দুর্গত এলাকার বাড়িতে বাড়িতে এখনো কোথাও হাঁটু কিংবা কোমর পর্যন্ত পানি। পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে রাস্তা-ঘাট, নলকূপ, টয়লেট। তীব্র লবন পানির কারণে ঠিকমতো গোসল করতে পারছেন না গ্রামবাসী। গবাদিপশু পালন নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন তারা। অনেকে স্বল্প দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন গরু, ছাগল, ভেড়া ও হাঁস-মুরগি। এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রায় সপ্তাহ হতে যাচ্ছে এখনও পানিবন্দি জীবন যাপন করছেন প্রায় ৩ হাজার মানুষ। কিন্তু কেউ তাদের খোঁজ-খবর নেয়নি। পাননি কোনো ত্রাণ সহযোগিতা।
তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জালাল উদ্দীন গাজী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে তিলডাঙ্গা ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কামিনী বাসিয়া গ্রামের মানুষ। ওই এলাকায় প্রায় দেড় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। যা এখনো সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। দুর্গত এলাকায় সরকারিভাবে কিছু চাল দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন: