প্রকাশিত:
২ জুন ২০২৪, ১৪:০৫
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ল এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের (২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে জমকালো আয়োজনে বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন বিভাগটি। আয়োজনের অংশ হিসেবে বিদায়ী শিক্ষার্থীদের স্মৃতিপটে রাখতে প্রদর্শন করা হয় এক ফ্রেমে ৮২ জন বিদায়ী শিক্ষার্থীর ছবি।
কিন্তু গতবছর (৮ আগস্ট, ২০২৩) বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী নওরীন নুসরাত এবং দু'বছর আগে (২ জানুয়ারি, ২০২১) একই ব্যাচের ফাবিহা সুহার অকাল মৃত্যুতে এক ফ্রেমে বন্দি করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। এতে আনন্দ আর শোক দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায় পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে।
শনিবার (১ জুন) বিভাগের গোলচত্বরে আয়োজিত এই বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিদায়ী শিক্ষার্থীদের ছবি প্রদর্শনীর পাশাপাশি নওরীন এবং সুহার স্মরণে ‘এতো আনন্দ আয়োজন সবই বৃথা আমায় ছাড়া’ নামে বিশেষ কর্ণারের ব্যবস্থাও করা হয়। দেখতে যেন মনে হয় অনুষ্ঠানের আমেজকে বাধা দিচ্ছে তারা। বেঁচে থাকলে ঠিকই ৮২ জনের লিস্টে আবদ্ধ হতে পারতো। সব শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ দেখা দিলেও তাদের হারানো বেদনা অনুষ্ঠানের আমেজকে করেছে কিছুা অম্লান।
রওজা নামের এক বান্ধবীর লেখায় ছিলো, ‘নওরীন তুমি আমার প্রথমদিনের বন্ধু। তোমায় খুব মিস করি। আল্লাহ তোমাকে মাফ করে দিক।’ উর্মি নামের আরেজন লিখেন, ‘এমন কোনো দিন নেই যেদিন তোদেরকে মনে করিনা আমরা। তোরা ছাড়া নন্দিনী অপূর্ণ। অনেক অনেক দোয়া সোহা এবং নওরীনের জন্য।’
এছাড়াও অজ্ঞাত তাদের সহপাঠী, জুনিয়ররা ক্ষুদ্র চিরকুট লাগিয়ে তাদের স্মৃতিচারণ করেছেন। কথাগুলো ছিলো এমন, ‘হৃদয়ের কাতারে ওঠে ব্যথা, খুঁজে বেড়ায় নওরীন আপুর আভা’, ‘ওপারে ভালো থাকুন আপনারা’, ‘আপনারা এখানে থাকলে পরিবেশটা ভিন্ন হতো’, ‘আপু আপনি ফিনিক্স পাখি হতে চেয়েছিলেন, উড়ে গেলেন দিগন্তে’। এমন আরও অনেক কথায় তাদের স্মরণ করে বিভাগের সকল শিক্ষার্থীরা।
বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: মেহেদী হাসান তাদের স্মৃতিস্মারণ করে বলেন, প্রথম ব্যাচের সকলকে যদি পাপড়ি বলি তাহলে এই পাপড়ি থেকে দু'টো পদ্মফুল আমরা হারাইছি। বিভাগের প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির হিসেব মিলাতে গেলেই তাদের কথা স্মরণ করি। দু'জন ওপারে ভালো থাকুক।
বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক সাহিদা আখতার বলেন, আজকে যদি আমার মেয়েগুলো থাকতো তাহলে সবার আগে মঞ্চে এসে জমানো স্মৃতিগুলো সবার সাথে শেয়ার করতো। আমি ছাত্রজীবনে যেভাবে ডিবেট করতাম তার চেয়ে বহুগুণ পারদর্শী ছিল আমার মেয়ে নওরীন। তারাও অনুষ্ঠানের ভাগিদার হোক সেই প্রসঙ্গটা মাথায় রেখে তাদের জন্য আলাদা স্মৃতিচারণ কর্ণার তৈরি করেছি।
প্রসঙ্গত, ২ জানুয়ারি, ২০২১ সালে মায়ের উপর অভিমান করে সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঝিনাইদহের আদর্শপাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দেন ফাবিহা সুহা। পরে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়াও গতবছর স্বামীর সাথে মনোমালিন্যের জেরে বিয়ের ১৯ দিনের মাথায় সাভারের আশুলিয়ায় নওরীন নুসরাত ছয় তালা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে জানা যায়।
মন্তব্য করুন: