সারাদেশে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। প্রায় শতাধিক জীবন প্রদীপ নিবে যাওয়ায় আতঙ্কিত পুরো দেশবাসী। সারা দেশের মত ডেঙ্গুর প্রকোপে আতঙ্কে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষও। ফলে মশক নিধনের চেষ্টায় অভিযান জোড়দারসহ বিভিন্ন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেছে কালিয়াকৈর পৌরসভা। অপরদিকে স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখার নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।
উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পৌরসভা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত বছর সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬২হাজারেরও বেশি রোগী। কিন্তু এ বছর ইতিমধ্যেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শুধু হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন ২০হাজারের উপরে রোগী। এর মধ্যে জীবন প্রদীপ নিবে গেছে প্রায় শতাধিক জনের। এছাড়াও দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। যে ভাবে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তাতে এ বছর দেশে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু ঢাকা, গাজীপুর নয়, ঢাকা ও গাজীপুরের বাইরেও সব জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু।
ঢাকার সন্নিকটে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় লাখ লাখ মানুষের বসবাস। গত কয়েক দিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪/৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তবে মঙ্গলবার এ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্তের কোনো রোগী ভর্তি হয়নি। অনেকেই আবার ডেঙ্গু আক্রান্তের কথা শুনে ওই হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বাইরে থেকেই চলে যায়। হয়তো তারা অন্য কোনো হাসতালে ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা নিচ্ছেন বলেও ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অপরদিকে কালিয়াকৈর পৌর এলাকা শিল্পাঞ্চল হওয়া এখানে সবচেয়ে বেশি মানুষ বসবাস করে। ফলে নাগরিকদের কথা বিবেচনা করে পৌর মেয়র মজিবুর রহমান তার পৌর এলাকায় মশক নিধন অভিযান জোড়দারসহ বিভিন্ন প্রদক্ষেপ নিয়েছেন। এর মধ্যে মশক নিধন অভিযান জোড়দার, নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা অপসারনের পাশা-পাশি ঝোপঝাড় পরিস্কার, ছোট ছোট পাত্র বা জারে জমে থাকা পানি ফেলে দেয়াসহ বিভিন্ন কার্যক্রম রয়েছে।
পৌর মেয়রের নির্দেশনা ও পরামর্শে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল আলম তালুকাদারের তদারকিতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শুধু পৌরসভা নয়, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নাগরিকদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন। তবে সকলে মিলে ডেঙ্গু প্রতিরোধে পৌরসভা এবং সরকারকে সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়েছেন পৌর কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখার নির্দেশসহ বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) নাজমুন নাহার জানান, কয়েকজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। তারা চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন। এছাড়া প্রতিদিনই কিছু রোগী জ্বর নিয়ে হাসপাতালে আসেন। কিন্তু ডেঙ্গুর কথা শুনে তারা চলে যায়, এ হাসপাতালে ভর্তি হয় না। হয়তো অন্য কোনো হাসপাতালে সে সব রোগীরা চিকিৎসা নেন। তবে শুধু ডেঙ্গু নয়, সব ধরণের রোগীদের এ হাসপাতালে গুরুত্বসহকারে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, প্রতিদিনই দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ কারণে পৌর নাগরিকদের কথা বিবেচনা করে পৌরসভার পক্ষ থেকে মশক নিধন অভিযান জোড়দারসহ বিভিন্ন কাযক্রম চালানো হচ্ছে। শুধু পৌরসভা নয়, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নাগরিকদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন। তবে আমাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ে উপজেলা পরিষদেও আলোচনা করা হয়েছে। আমরা স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার-পরিছন্নতার নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিয়েছি। এছাড়াও উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে মশক নিধনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
মন্তব্য করুন: