প্রকাশিত:
১৩ জুন ২০২৪, ১৬:৩৭
ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এখন ভারতে হত্যাকাণ্ড হলেও ধরে ফেলে। এটা নতুন মেরুকরণ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, ‘আমরা নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে যখন মোটরসাইকেল, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ চোরদের গ্রেফতার করি- তখন ওরা বলে স্যার, আপনাদের ভয়ে আমরা তো ঢাকার বাইরে থাকি। সেখান থেকে আপনারা ধরে ফেলেন। তাহলে চুরিটা করবো কোথায়? তাদের ধারণাটা হলো—ঢাকার ডিবি মানে ঢাকার মধ্যেই শুধু কাজ করবে। এখন যে ঢাকার ডিবি ভারতে হত্যাকাণ্ড হলেও ধরে ফেলে, ওমানে পালিয়ে গেলেও ধরে নিয়ে আসে; এটা পুলিশ প্রশাসনে নতুন মেরুকরণ।’
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ‘দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদনে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি)।
অবৈধ মোবাইল ফোনের রমরমা বাণিজ্য ঠেকাতে ডিবি কাজ করতে আগ্রহী জানিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘দেশে অবৈধ মোবাইল ফোন ছড়িয়ে দেয় যারা তাদের বিরুদ্ধেও ডিবি সারাদেশে কাজ করতে আগ্রহী। যদি সংশ্লিষ্ট খাত থেকে আমাদের সহযোগিতা করা হয়, তাহলে সেটা ঢাকার মধ্যে হোক কিংবা বাইরে- আমরা অপরাধীদের ধরবোই। অপরাধ করে কেউ কক্সবাজার যাক, আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাক, সেটা কোনো ব্যাপার না। আমাদের তথ্য দেবেন, আমরা কাজ করবো।’
ডিবিপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের একটা অভ্যাস আছে। যার একটু আর্থিক অবস্থা ভালো, তিনি দেশি পণ্য ব্যবহার করতে চান না। বিদেশি জিনিস কেনার দিকে ঝুঁকে পড়েন। আমরা প্রায়ই যেটা দেখি বিমানবন্দরে লাগেজ পার্টির মাধ্যমে লাখ লাখ মোবাইল ফোন দেশে ঢুকে পড়ে। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কম দামে সেগুলো ভিন্নপথে দেশে আনা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘মোতালেব প্লাজা, যমুনা ফিউচার পার্কসহ বিভিন্ন জায়গায় দেশে উৎপাদিত বৈধ মোবাইল ফোনের চেয়ে বিদেশ থেকে অবৈধভাবে আনা মোবাইল ফোন বেশি বিক্রি হয়। মোতালেব প্লাজায় যাবেন, দেখবেন সেখানে একটা আইএমইআই দিয়ে ৫০টা মোবাইল ফোন তৈরি করছে। এতে দেশের উৎপাদিত মোবাইল ফোন মার্কেটে জায়গা পাচ্ছে না। আমাদের বাজার ধরে রাখতে হবে। বাজারটা যদি হাতছাড়া হয়ে যায়, তাহলে আমরা সব দিক থেকে পিছিয়ে পড়বো। এজন্য বলছি, আপনারা আমাদের সুনির্দিষ্ট তথ্য দেবেন, আমরা অভিযান চালিয়ে তাদের ধরে আনবো।’
দেশেও ভালো মোবাইল ফোন উৎপাদন হয়, এটা নিয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে উল্লেখ করে ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, ‘সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করত হবে। তাদের জানাতে হবে বিদেশি মোবাইল ফোনে যে কোয়ালিটি, দেশে উৎপাদিত মোবাইলটাও তেমনই। দামও একই হবে। এটার রেজিস্ট্রেশন থাকতে হবে। তাহলে কেউ অপরাধ করলেও তাকে সহজে ধরা যাবে।’
গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। টিআরএনবির সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান প্রমুখ।
বৈঠকের শুরুতে দেশের মোবাইল ফোনের উৎপাদন, বাজার পরিস্থিতি, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমআইওবি) সভাপতি জাকারিয়া শহীদ। এছাড়া মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহার, খরচসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম।
গোলটেবিল বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল, টিআরএনবির সাধারণ সম্পাদক এস এম মাসুদুজ্জামান রবিন, কোষাধ্যক্ষ ফারুক হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমীন দেওয়ান প্রমুখ।
মন্তব্য করুন: