সোমবার, ২৫শে নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • সংঘর্ষে না জড়িয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের
  • যাত্রাবাড়ী-ডেমরায় ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
  • ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে অটোরিকশাচালকরা
  • ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন
  • ঢাকার ৫ এলাকার বাতাস আজ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’
  • রাজধানীর বেশির ভাগ ফুটপাত দখলে, যানজটের পাশাপাশি বাড়ছে দুর্ঘটনা
  • সম্পদের হিসাব দিতে আরও ১ মাস পাবেন সরকারি কর্মচারীরা
  • শপথ নিলেন নতুন সিইসি ও ৪ নির্বাচন কমিশনার
  • বঞ্চিত কর্মকর্তাদের গ্রেড-১ দেওয়া হবে
  • ৫ বিসিএসে ১৮ হাজার প্রার্থী নিয়োগ দেবে সরকার

কয়রায় সরকারি ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম

খুলনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত:
২৭ জুন ২০২৪, ১৩:৪৫

ঘূর্ণিঝড় রিমালের পরে খুলনার কয়রা উপজেলার অসংখ্য পরিবারের রোজগার না থাকায় অর্ধাহারে-অনাহারে কাটছে তাদের দিন। এসব হতদরিদ্রদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে সরকার।

তবে কিছু অসাধু মানুষের লোভে ত্রাণ পৌঁছাতে পারছে না অসহায় মানুষের ঘরে।
অভিযোগ রয়েছে, দরিদ্রদের হাতে ত্রাণ তুলে ফটোসেশন করে দায়সারা কিছু ত্রাণ বিতরণ করছেন কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান।

এদি‌কে খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা ‌থে‌কে উপ-বরা‌দ্দের চি‌ঠিতে গণমাধ‌্যমকর্মী‌দের অব‌হিত করার নি‌র্দেশনা থাক‌লেও তা পালন করা হয়‌নি। বরং কয়রা উপ‌জেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর থে‌কে বরাদ্দ ও বিতর‌ণের স‌ঠিক তথ‌্য পে‌তে গণমাধ‌্যমকর্মী‌দের ভোগা‌ন্তি‌ পোহা‌তে হ‌চ্ছে।

কয়রা উপ‌জেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর সূ‌ত্রে জানা যায়, খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা থে‌কে ঘূ‌র্ণিঝ‌ড়ে ক্ষ‌তিগ্রস্ত‌দের মান‌বিক সহায়তার জন‌্য রিমা‌লে আঘাত হানার আগ মুহূর্তে ও প‌রে ক‌য়েক দফায় ১৯০ মে‌ট্রিক টন জিআর চাল, ১০ লাখ নগদ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এছাড়া শিশু খা‌দ্যের জন‌্য তিন লাখ টাকা ও গো-খা‌দ্যের জন‌্য তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তন্মা‌ধ্যে গত মে মা‌সে উপ‌জেলা দু‌র্যোগ ব‌্যবস্থাপনা বিভাগ থে‌কে সাত ইউনিয়‌নে‌র চেয়ারম‌্যান‌দের অনুকূ‌লে ৭০ মে‌ট্রিক টন চালের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। আর জেলা থে‌কে ৬ জুন বরাদ্দ পাওয়া ১২০ মে‌ট্রিক টন চাল অ‌দ্যাব‌ধি ছাড়পত্র দেওয়া হয়‌নি। এছাড়া নগদ টাকা, শিশু খাদ‌্য ও গো খা‌দ্যের কোনো টাকা চেয়ারম‌্যান‌দের অনুকূ‌লে দেওয়া হয়‌নি।

মে মাসে ছাড়পত্র দেওয়া চা‌লের ম‌ধ্যে আমাদী ইউনিয়‌নে ৭ মে‌ট্রিক টন, বাগালী ইউনিয়‌নে ৭ মে‌ট্রিক টন, কয়রা সদর ইউনিয়‌নে ১১ মে‌ট্রিক টন, ম‌হেশ্বরীপুর ইউনিয়‌নে ১৩ মে‌ট্রিক টন, উত্তর বেদকা‌শি ইউনিয়‌নে ১২ মে‌ট্রিক টন, দ‌ক্ষিণ বেদকা‌শি ইউনিয়নে ১৩ মে‌ট্রিক টন ও মহারাজপুর ইউনিয়‌নে ৭ মে‌ট্রিক টন দেওয়া হয়।

অভি‌যোগ র‌য়ে‌ছে, ইউনিয়ন প‌র্যা‌য়ে বরাদ্দ দেওয়া চালের অধিকাংশই বিতরণ না ক‌রে বি‌ক্রি ক‌রে দেওয়া হ‌য়ে‌ছে। এছাড়া বিতরণকৃত চাল ক্ষ‌তিগ্রস্তদের প‌রিব‌র্তে চেয়ারম‌্যান‌দের অনুসা‌রীরা পে‌য়ে‌ছেন ব‌লেও অভি‌যোগ র‌য়ে‌ছে। ইউনিয়ন পর্যা‌য়ে বরাদ্দ ও বিতর‌ণের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম‌্যান, মেম্বার ও স‌চিব‌দের সঙ্গে কথা ব‌লে ভিন্ন ভিন্ন তথ‌্য পাওয়া গে‌ছে। ক‌য়েকজন চেয়ারম‌্যান বিতরণ সম্পন্ন ক‌রে‌ছেন জানা‌লেও মাস্টার রোল জমা দেননি। এমন‌কি বিতরণকৃত এলাকায় খোঁজ নি‌য়ে সত‌্যতা মে‌লে‌নি। এছাড়া ক‌য়েকজন ট‌্যাগ অফিসারের সঙ্গে কথা বল‌লেও ‌বিতর‌ণের বিষ‌য়ে তারা অবগত নয় ব‌লে জানান। তাছাড়া ঝ‌ড়ের সময় শুকনা খাবার, খিচুড়িসহ অন‌্যান‌্য কা‌জে ১২ থে‌কে ১৩ লাখ টাকা ব‌্যয় ও শিশু খাদ‌্য বিতর‌ণে‌র কথা জানা‌নো হ‌লেও বাস্ত‌বে মিল পাওয়া যায়‌নি।

বাগালী ইউনিয়‌নের হোগলা গ্রা‌মের বাসিন্দা মো. নূর ইসলাম (৭৭) ব‌লেন, ঝ‌ড়ে আমার ঘর সম্পূর্ণ ভে‌ঙে যায়। এখনও বাইরে থাক‌তে হ‌চ্ছে। এ পর্যন্ত ‌কোনো কিছুই পাইনি। শুধু ব‌য়োবৃদ্ধ নূর ইসলাম নয়, জেলার প্রতি‌টি ইউনিয়‌নের বেশ ক‌য়েকজন ক্ষ‌তিগ্রস্ত‌দের সঙ্গে কথা ব‌লে ত্রাণ সহায়তা পান‌নি ব‌লে জানা যায়। ত‌বে কেউ কেউ ১০ কে‌জি চাল পে‌য়ে‌ছেন ব‌লে জানান।

গত ১২ জুন কয়রা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মামুনার রশিদ ব‌লেন, ঘূ‌র্ণিঝড় রিমাল পূর্ব মুহূর্তে ও পরে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা হ‌তে কয়রা উপ‌জেলায় ৭০ মে‌ট্রিক টন জিআর চাল এসে‌ছে। চাল এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ১০ কেজি করে বিতরণের উদ্দেশ্যে চেয়ারম্যানদের অনুকূলে ডিও করে দিয়েছি। দুটি ইউনিয়ন বা‌দে বাকি সব ইউনিয়নের বিতরণ করা হয়েছে। তবে কোনো মাস্টাররোল এখনও পাইনি। এছাড়া ১২ থেকে ১৩ লাখ নগদ টাকা পেয়েছি। যা ইমারজেন্সি সময়ে ব্যয় করেছি। গো খাদ্যের জন্য চার লাখ টাকা পেয়েছি যেটা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে দেওয়া হবে। শিশু খাদ্যের জন্য বরাদ্দ পাওয়া দুই লাখ টাকা দুর্যোগের সময় ব্যয় করা হয়।

ত‌বে ওই সময় ইউনিয়ন প‌রিষ‌দের অধিকাংশ চেয়ারম‌্যানরা পিআইও অফিস থে‌কে দেওয়া তথ‌্য অনুযা‌য়ী বরাদ্দ পান‌নি ব‌লে জানালেও প‌রে তা‌দের ভাষ‌্য প‌রিবর্তন ক‌রেন। এদি‌কে ওই সময় উপ‌জেলা নির্বাহী কর্মক‌র্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. তা‌রিক উজ-জামানে‌র সঙ্গে কথা বল‌লে তি‌নি ৭০ মে‌ট্রিক টন চা‌ল ও ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ এসে‌ছে ব‌লে এ প্রতি‌বেদক‌কে জানান।

তথ্যে গড়‌মিল প‌াওয়ায় পরে খুলনা জেলা ত্রাণ শাখার শরণাপন্ন হ‌য়ে জান‌া যায়, কয়রায় ১৯০ মে‌ট্রিক টন জিআর চাল, ১০ লাখ টাকাসহ শিশু খা‌দ্যের জন‌্য তিন লাখ ও গো খা‌দ্যের জন‌্য তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

ভু‌ল তথ‌্য দেওয়া‌র বিষ‌য়, মাস্টার‌ রো‌লসহ চা‌ল ও টাকা ব‌্যয়ের অনিয়‌ম সম্প‌র্কে পিআইও মো. মামুনার রশিদ এর কা‌ছে জান‌তে চাইলে তি‌নি ব‌লেন, ১২০ মে‌ট্রিক টন চা‌ল বরা‌দ্দের চি‌ঠি দে‌রি‌তে হা‌তে পাই। এখনও কিছু টাকা ও চাল বিতরণ বা‌কি র‌য়ে‌ছে। দ্রুতই অনুষ্ঠা‌নের মাধ‌্যমে ক্ষ‌তিগ্রস্ত‌দের ম‌ধ্যে বিতরণ করা হ‌বে। কোনো চাল বি‌ক্রি করা হয়‌নি।

খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম জানান, ৩০ জু‌নের ম‌ধ্যে সব চাল ও টাকা উত্তোলন কর‌তে হ‌বে। জিআর এর চাল বি‌ক্রির কোনো সু‌যোগ নেই। অনিয়‌মের সু‌নির্দিষ্ট অভিযোগ পে‌লে তদন্ত সা‌পে‌ক্ষে ব‌্যবস্থা নেওয়া হ‌বে।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর