প্রকাশিত:
১০ জুলাই ২০২৪, ১১:২৬
বিদায়ী জুন মাসে দেশে ৫৫৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮০১ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৩ হাজার ২৬৭ জন। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেশি। ২১৭টি মোটরসাইকের দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ২২২ জনের।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ পথের দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং এর পাশাপাশি জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) সড়ক দুঘটনায় আহত ২১৩৯ জন আহত রোগীর তথ্য নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুনে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৬১২টি দুর্ঘটনায় ৮৫৫ জন নিহত ও ৩ হাজার ২৮৩ জন আহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে রেলপথে ৪৬টি দুর্ঘটনায় ৪২ জন নিহত ও ৯ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ৯টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ৭ জন আহত হয়েছেন। আর নিখোঁজ রয়েছেন নয়জন। এ সময়ে ২১৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২২২ জন নিহত হয়েছেন।
আহত হয়েছেন ১ হাজার ৯৩ জন, যা মোট দুর্ঘটনার ৩৮.৯৫ শতাংশ, নিহতের ৩৮.০১ শতাংশ ও আহতের ৩৩.৪৫ শতাংশ।
দুর্ঘটনার বিভাগ ওয়ারি পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। ১৩৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় এই বিভাগে নিহত হয়েছেন ১৩৯ জন। আহত হয়েছেন ২১৪ জন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে সিলেট বিভাগে।
এই বিভাগে ২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩ জন নিহত ও ৪৭ জন আহত হয়েছেন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বিদায়ী জুন মাসে সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যমতে, ৫৫৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৮৪ জন নিহত ও ১ হাজার ১২৮ জন আহত হয়েছেন। অপরদিকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, এ মাসে ২ হাজার ১৩৯ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী ভর্তি হয়েছে। যার মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাত বা পা ভেঙে ভর্তি রোগী ৯২২ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব বলছে, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীর ১৫ শতাংশ হাসপাতালে অথবা বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সেই হিসাবে বিদায়ী জুন মাসে ৮০১ জন নিহত ও ৩ হাজার ২৬৭ জন আহত হয়েছেন।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, দেশের সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচল, জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ ঈদে যাতায়াতকারী ব্যক্তিগত যানের চালকদের রাতে এসব জাতীয় সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালানো, জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টানিং চিহ্ন না থাকার ফলে নতুন চালকের এসব সড়কে দুঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা, উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাদাঁবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন ও অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং একজন চালক অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানো ঘটছে এসব দুর্ঘটনা।
দুর্ঘটনা রোধে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে সংগঠনটি।
জরুরি ভিত্তিতে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতের বেলায় অবাধে চলাচলের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, যানবাহনের ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিটনেস প্রদান, ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা, সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা, মহাসড়কে ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা রাখা, রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা, সড়ক পরিবহন আইন যথাযথভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা, উন্নতমানের আধুনিক বাস নেটওর্য়াক গড়ে তোলা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেইফটি অডিট করা, মেয়াদোর্ত্তীণ গণপরিবহন ও দীর্ঘদিন যাবৎ ফিটনেসহীন যানবাহন স্ক্যাপ করার উদ্যোগ নেওয়া।
মন্তব্য করুন: