বৃহঃস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর ২০২৪, ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • আমরা এক পরিবার, কেউ কারো শত্রু হবো না
  • শিখা অনির্বাণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা
  • আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা উদ্যোক্তা নয় চাকরিপ্রার্থী তৈরি করে
  • নির্বাচনকালে পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা চায় ইসি
  • রাজনৈতিক দলগুলো যদি সংস্কার না চায় তাহলে এখনই নির্বাচন দেওয়া হবে
  • বুধবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে ইসি অনুসন্ধান কমিটি
  • ঢাকার যে ৫ স্থানে আজ সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ
  • রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ
  • কোনো কলেজকে রাতারাতি বিশ্ববিদ্যালয় করা সম্ভব না
  • টাঙ্গাইলে বাস-পিকআপভ্যান সংঘর্ষে চারজন নিহত

৯০ শতাংশ গ্লুকোমা রোগী চিকিৎসার বাইরে গ্লুকোমায়

চিকিৎসা পায় ১০ শতাংশ রোগী, বাকিরা অন্ধত্বের ঝুঁকিতে

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত:
১১ জুলাই ২০২৪, ১২:৪২

দেশের ৯০ শতাংশ গ্লুকোমা রোগী চিকিৎসাসেবার বাইরে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, দেশে গ্লুকোমা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ। আক্রান্ত এসব রোগীর মধ্যে চিকিৎসাসেবার আওতায় আছেন মাত্র ২ লাখ। বাকি ১৮ লাখ রোগীই চিকিৎসার বাইরে। যারা অন্ধত্বের ঝুঁকিতে আছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্লুকোমা চোখের নীরব ঘাতক। এটি চোখের এমন একটি রোগ, যাতে চোখের চাপ বেড়ে গিয়ে, চোখের পেছনের স্নায়ু অকার্যকর হয়ে ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টি কমে যায়। গ্লুকোমা বাংলাদেশসহ পৃথিবীতে অনিবারযোগ্য অন্ধত্বের অন্যতম কারণ। যে কোনো বয়সে এ রোগ হতে পারে। তবে বেশির ভাগ গ্লুকোমা হয় ৪০ বছর বয়সের পর।


আক্রান্ত কারা হয় : যাদের পারিবারিকভাবে এ রোগের ইতিহাস আছে, যারা মাইনাস পাওয়ারের চশমা পরেন, যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ আছে, তাদের মধ্যে এ রোগের আশঙ্কা বেশি। বয়সজনিত চোখের গঠনে পরিবর্তন, জন্মগত গঠনের ত্রুটি, আঘাত, চোখ লাল হওয়া, ডায়াবেটিসজনিত চোখের রক্তহীনতা। এছাড়া হরমোন থেরাপি থেকেও গ্লুকোমা হতে পারে।


গ্লুকোমা কী: মানুষের শরীরের ব্লাড প্রেশারের মতো, চোখেরও প্রেশার আছে। এক জন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের ব্লাড প্রেশার যেমন থাকে ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি, তেমনি সাধারণত চোখের ভেতরের প্রেশার ১০ থেকে ২১ মিলিমিটার অব মার্কারি। এ প্রেশার যখন ২১ মিলিমিটারের ওপরে চলে যায়, তখন চোখের ভেতরে একধরনের চাপ সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত চাপ যখন চোখের ভেতরের অপটিক নার্ভে চাপ দেয়, তখন তা ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। ফলে চোখে কম দেখা শুরু হয়। প্রেশারের কারণে অপটিক নার্ভ যত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, মানুষের ধীরে ধীরে তত অন্ধত্বের ঝুঁকি বাড়ে। এ সমস্যার নাম—‘গ্লুকোমা’।

লক্ষণ ও চিকিৎসা: হঠাৎ করেই গ্লুকোমার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। চোখে কম দেখা, চোখ হঠাত্ করে লাল হয়ে যাওয়া, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, চোখ ব্যথা, চোখে পানি পড়া, ঝাপসা দেখা, বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া। এসব লক্ষণ থাকলে দ্রুত চক্ষু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। গ্লুকোমার তিন ধরনের চিকিৎসা হয়। এর মধ্যে—চোখের ড্রপ, লেজার সার্জারি ও সার্জারি। প্রথমে চোখের ড্রপ দিয়ে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা শুরু হয়। এতে চোখের প্রেশার নিয়ন্ত্রণে না এলে লেজার সার্জারি প্রয়োজনে সার্জারি করতে হবে। চিকিৎসকরা জানান, চিকিৎসায় গ্লুকোমা প্রতিরোধ করা যায় না। তবে অপটিক স্নায়ু যাতে আরও খারাপ না হয়, সেটি নিশ্চিত করা যায়।


গ্লুকোমা প্রতিরোধে

গ্লুকোমা প্রতিরোধে গ্লুকোমা সম্পর্কে জানতে হবে এবং সচেতনতা বাড়াতে হবে। গ্লুকোমা প্রতিরোধে ৪০ বছর বয়সের পর সবাইকে বছরে একবার করে চোখের পরীক্ষা করাতে হবে। যত দ্রুত গ্লুকোমা শনাক্ত হবে, তত ভালো। দেরিতে শনাক্ত হলে অপটিক নার্ভের ক্ষতির পরিমাণ বেশি হবে এবং দৃষ্টি হারানোর ঝুঁকি বাড়বে। চোখের ভেতরে তরল পদার্থের সার্কুলেশনের কারণে চোখের প্রেশার বাড়ে। সার্কুলেশন যখন শরীরের ভেতরে যেতে না পেরে চোখের ভেতর জমে যায় বা জমতে থাকে, তখন চোখের ভেতরে চাপ বাড়ে।

হারুন আই ফাউন্ডেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও গু্লকোমা সোসাইটির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. শেখ এম এ মান্নাফ বলেন, ২০২১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৬৫টি উপজেলায় ১৭ হাজার মানুষের মধ্যে আমরা একটি সার্ভে করেছি। এতে ৩.২ শতাংশ মানুষের মধ্যে গ্লুকোমা রোগ পাওয়া যায়, যা মোট জনসংখ্যা বিবেচনায় প্রায় ২০ লাখের মতো। তিনি বলেন, আশঙ্কাজনক বিষয় হলো ২০ লাখ মানুষ গ্লুকোমায় আক্রান্ত হলেও রোগীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২ লাখ মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছেন। অর্থাৎ চিকিৎসার বাইরে এখনো ১৮ লাখ গ্লুকোমা রোগী। জরিপে আমরা দেখেছি, শহরাঞ্চলে গ্লুকোমা রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক একটু বেশি। ছেলেমেয়েদের মধ্যে দুই লিঙ্গেরই গ্লুকোমা হতে পারে। তবে প্রকারভেদে আক্রান্তের হার ভিন্ন রকম পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসক আরও বলেন, গ্লুকোমার দুটি বিস্তৃত প্রকার আছে। একটি হলো ওপেন-অ্যাংগেল গ্লুকোমা, যার অগ্রগতি বেশ ধীর। অন্যটি হলো তীব্র অ্যাংগেল ক্লোজার গ্লুকোমা, যা দ্রুত অগ্রসর হয়। এর মধ্যে ওপেন অ্যাংগেল গ্লুকোমা ছেলেদের ৪ শতাংশ আর মেয়েদের ২.৫ শতাংশ। আর অ্যাংগেল ক্লোজার গ্লুকোমা মেয়েদের ৬ শতাংশ, ছেলেদের ১.৫ শতাংশ। এর বাইরেও আরও ১০ শতাংশ মানুষ পেয়েছি, যাদের গ্লুকোমা হতে পারে এমন প্রবণতা আছে।

বাংলাদেশ গ্লুকোমা সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গ্লুকোমা হলো এমন একটি রোগ, যার ফলে মানুষ নীরবেই অন্ধত্বের দিকে এগোতে থাকে। মানুষ বুঝতেই পারে না। সাধারণত চোখে ছানি পড়লে তা অপারেশনের মাধ্যমে ভালো হয়। কিন্তু কারো গ্লুকোমা হয়ে গেলে তা আর পুরোপুরি ভালো হয় না। তিনি বলেন, বিশ্বে ৭.৭ মিলিয়ন মানুষ গ্লুকোমায় আক্রান্ত। চোখে প্রেশারে প্রথমে নার্ভ নষ্ট হয়। প্রেশার যদি যাওয়ার পথে বাধাগ্রস্ত হয়, তখনই নার্ভগুলো ভিন্ন কোনো পথ খোঁজে। একটা সময় মানুষ অন্ধ হয়ে যায়। এ চিকিত্সক বলেন, গ্লুকোমা হলে সাধারণত মানুষ শুরুর দিকে বুঝতে পারে না। ফলে চিকিৎসাও নিতে আসে না। আর যখন অন্ধত্বের কাছাকাছি চলে যায়, তখন চিকিৎসা নিতেও ভয় পায়। মানুষ চিকিৎসা না নেওয়ার আরেকটি কারণ হলো, গ্লুকোমা হলে চোখে কোনো ধরনের ব্যথা থাকে না। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটি ধরাও পড়ে না। ডা. সিদ্দিকুর রহমান চিকিৎসা প্রসঙ্গে বলেন, গ্লুকোমা রোগী এলে চিকিৎসকরা মূলত চোখের প্রেশার কমান। এক্ষেত্রে কিশু আই ড্রপ ব্যবহার করা হয়। প্রয়োজনে লেজার করানো হয়। সর্বশেষ অপারেশন করা হয়। প্রেশার কমানো গেলে চোখের নার্ভগুলো ভালো রাখা যায়।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর