প্রকাশিত:
১৫ জুলাই ২০২৪, ১১:১২
কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার ভেলাকোপা গ্রামের বাসিন্দা মোমিনুল ইসলাম। এবার তিনি দুই একরের কিছু বেশি জমিতে পটোল, মরিচ, কুমড়া আবাদ করেছিলেন। কয়েক দিনের মধ্যে তিনি এসব ফসল ঘরে তোলার আশায় ছিলেন। কিন্তু উত্তরাঞ্চলের চলমান বন্যায় তাঁর প্রায় দুই একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মোমিন বলেন, ‘একবার বন্যা হইল তাতে কিছু নষ্ট করিল, এবার একেবারে সোগ শ্যাষ। তোমরা লেখি নিয়া যায়া কী করেন, হামরা তো কিছু পাই না।’ তিনি চান সরকারের সহযোগিতা। সদর উপজেলার চরহরিকেশের বাসিন্দা মোহাইমিনুল হক মুরাদ পাঁচ একরের পুকুরে রুই, কাতলা, মৃগেল ও সিলভার কার্প মাছ চাষ করেছিলেন।
দ্বিতীয় দফার বন্যায় ভেসে গেছে তাঁর দুটি পুকুরের মাছ। একটি পুকুরের মাছ কোনোভাবে জাল দিয়ে কিছুটা রক্ষা করতে পেরেছেন তিনি।
মুরাদ বলেন, ‘এবার বন্যায় আমার দুটি পুকুরে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মাছের ক্ষতি হতে পারে। এখন চাই সরকারের প্রণোদনা আর সহযোগিতা, সেটা হতে পারে অর্থ বা মাছ দিয়ে।
আমার ১০০ কেজি ধানের বীজতলা তলিয়ে গেছে। ধান হলে সেখান থেকে পেতাম প্রায় তিন লাখ টাকার ধান। আমার সব শেষ হয়ে গেল।’
সরকারি হিসাবে চলমান বন্যায় ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও তিস্তা নদীর অববাহিকার কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার পাঁচ হাজার ১৯.৩১ হেক্টর কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে কৃষকের উৎপাদন কমবে ২০ হাজার ২৮৩ টন।
আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলায়ই ক্ষতির শিকার চার হাজার ৯৮৯.৩১ হেক্টর ফসলি জমি। আর পাশের লালমনিরহাটে সবজি ও বীজতলা ৩০ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জেলা দুটির মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, কুড়িগ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত খামারের সংখ্যা তিন হাজার ৮৭। ক্ষতির পরিমাণ চার কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আর লালমনিরহাটে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৯৫টি পুকুর। এতে জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেছে এক কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৫টি মুরগির খামার। এতে খামারির ক্ষতি এক কোটি ২০ লাখ টাকা।
কুড়িগ্রাম জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বন্যায় লালমনিরহাট ও গাইবান্ধার তুলনায় কুড়িগ্রাম জেলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আতঙ্কের কারণ নেই। কারণ বীজতলায় থাকা বীজ দিয়ে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। আর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আগামী রবি মৌসুমে পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় সহায়তা পাবেন।’
প্রতিবেদন বলছে, বন্যায় কুড়িগ্রামে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পাটক্ষেতের। জেলার ২১ হাজার ৩৪৬ জন কৃষক পাট চাষ করেছেন। তাঁদের প্রায় দুই হাজার ৮৮৪ হেক্টর জমির পাট নষ্ট হয়েছে, যার আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৫৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। জেলায় ৮৮৭ হেক্টর জমির আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার আর্থিক ক্ষতি ১১ কোটি ৭১ লাখ টাকা। শাক-সবজির ক্ষতি হয়েছে ৫৫৭ হেক্টর জমির। এতে কৃষকের ক্ষতি ২৫ কোটি আট লাখ ৩৯ টাকা। কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় দুই দফা বন্যায় তিন হাজার ৮৭টি পুকুর, দিঘি বা খামার (৪৬৪.৬১ হেক্টর) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আর্থিক ক্ষতি প্রায় চার কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
লালমনিরহাট জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, জেলার ৩৯৫টি পুকুর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ হতে পারে প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, বন্যায় জেলার ৬৫টি মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার আর্থিক ক্ষতি প্রায় এক কোটি ২০ লাখ টাকা।
নদী রক্ষা বিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের পরিচালক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, এবারের বন্যা অবহেলাজনিত। আর যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করা সম্ভব হবে না। এসব জায়গায় অনেকেই একাধিকবার ফসল লাগিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে।
মন্তব্য করুন: