প্রকাশিত:
১৭ জুলাই ২০২৪, ১২:০৫
ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অপসারিত সদস্য মো. মতিউর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দের (ক্রোক ও অবরুদ্ধ) আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত এই আদেশ দেন।
তৃতীয় দফায় স্থাবর সম্পদের মধ্যে গাজীপুরে মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলীর একক নামে এবং এম এ কাইয়ুম হাওলাদারের সঙ্গে যৌথ নামে ১৩৭.২৮ শতক জমি, ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে রাজধানীর অভিজাত এলাকায় আট হাজার ৭০ স্কয়ার ফুট কমার্শিয়াল স্পেস জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ১৯টি কম্পানির তিন কোটি ৭৮ লাখ ৪৬ হাজার ৫১৭টি শেয়ারও অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
দুদকের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুদকের আবেদন ও আদালতের আদেশ
দুদক অনুসন্ধান দলের প্রধান (উপপরিচালক) মো. আনোয়ার হোসেন গতকাল আদালতে মতিউর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা স্থাবর সম্পদ ক্রোক (অ্যাটাচমেন্ট) ও অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধের (ফ্রিজ) আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, এনবিআরের সদস্য (শুল্ক ও আবগারি) মো. মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া হুন্ডি, আন্ডারইনভয়েসিং ও ওভারইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচার করে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনেরও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মতিউর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাঁদের মালিকানাধীন স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এটি করতে পারলে এই অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় মামলা, আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল, বিচার শেষে সাজার অংশ হিসেবে অপরাধলব্ধ আয় থেকে অর্জিত সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করাসহ সব উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। তাই এই অনুসন্ধান শেষে মামলা ও তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের পর আদালত বিচার শেষে সরকারের অনুকূলে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের সুবিধার জন্য তাঁদের স্থাবর সম্পত্তিগুলো ক্রোক ও অস্থাবর সম্পদগুলো অবরুদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন।
তৃতীয় দফায় জব্দ করা সম্পদ
তৃতীয় দফায় স্থাবর সম্পদের মধ্যে গাজীপুরে মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলীর একক নামে এবং এম এ কাইয়ুম হাওলাদারের সঙ্গে যৌথ নামে ১৩৭.২৮ শতাংশ জমি এবং ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে রাজধানীর অভিজাত এলাকায় আট হাজার ৭০ স্কয়ার ফুট কমার্শিয়াল স্পেস ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ১৯টি কম্পানির তিন কোটি ৭৮ লাখ ৪৬ হাজার ৫১৭টি শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব শেয়ারের শেয়ারহোল্ডার মতিউর রহমান, লালয়া কানিজ, শাম্মী আখতার শিবলী, ফারজানা রহমান ইস্পিতা ও আহমেদ তৌফিকুর রহমান।
সপরিবারে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ
এদিকে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়ায় ২ জুলাই মতিউর রহমান ও তাঁর দুই স্ত্রী এবং তিন সন্তানকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের পৃথক নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা
দুদকের অনুসন্ধান টিম জানতে পারে, অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরুর পরই মতিউর সপরিবারে দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। এমন পরিস্থিতিতে গত ২৪ জুন দুদকের অনুসন্ধান টিম আদালতে মতিউর রহমান, তাঁর প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ ও ছেলে আহমদ তৌফিকুর রহমানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার আবেদন করে। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
বিদেশে সম্পদের খোঁজে বিএফআইইউতে চিঠি
মতিউর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগও রয়েছে। ১০ জুলাই মতিউর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে বিদেশে কোনো সম্পদ আছে কি না তা জানার জন্য নির্ধারিত ফরমে বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) দুদক থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
পঞ্চমবারের অনুসন্ধান শুরু যেভাবে
ঈদুল আজহার সময় মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে মুশফিকুর রহমান ১৫ লাখ টাকা দামের ছাগল কিনতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনায় আসেন। ছেলের বিলাসী জীবনযাপনের সূত্র ধরেই মতিউরের সম্পদের বিষয়টি ফের নজরে আসে। গত ৪ জুন কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অভিযোগ অনুসন্ধানে গত ২৩ জুন তিন সদস্যের টিম গঠন করা হয়। টিমের সদস্যরা হলেন উপপরিচালক (টিম লিডার) মো. আনোয়ার হোসেন, সহকারী পরিচালক (সদস্য) মাহমুদুল হাসান ও উপসহকারী পরিচালক (সদস্য) সাবিকুন নাহার।
এরও আগে গত দুই যুগে মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে চারবার অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগ পৃথকভাবে অনুসন্ধানও করে দুদক। প্রতিবারই তিনি দুদক থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন।
মন্তব্য করুন: