প্রকাশিত:
৩ আগষ্ট ২০২৪, ১০:৫৭
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নাফ নদী হয়ে দালালদের মাধ্যমে সীমান্ত অতিক্রম করে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। এসব রোহিঙ্গা উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ জুলাই নতুন করে আটজন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। ওপার থেকে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে দুটি পরিবার এপারে পাড়ি জমায়। পরে পরিবার দুটি উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ২-ইস্ট ই ব্লকে তাদের স্বজনদের বসতবাড়িতে আশ্রয় নেয়।
এ ব্যাপারে ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক ও ডিআইজি আমির জাফর বলেন, এ ধরনের কোনো তথ্য জানা নাই। খোঁজ-খবর নিয়ে বলতে হবে।
নতুন করে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে আছেন কালা মিয়ার মেয়ে ফাতেমা (৬০), সোলেমানের মেয়ে রেহেনা (৩০), করিমুল্লাহর মেয়ে নুর সাদিয়া (৮) ও ছেলে মোস্তাক (০৫)। এই পরিবার সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পের ই-৩ ব্লকে তাদের স্বজন নূর নাহারের বাসায় আশ্রয় নেয়।
একই ক্যাম্পের ই ব্লকের আছমা বেগমের বাসায় আশ্রয় নেয় অপর পরিবার। তারা হলেন রোহিঙ্গা নেছার (৭০), স্ত্রী হালেমা খাতুন (৬০), ছেলে এনাম (৩০) ও রশিদ (১৮)। প্রাণ বাঁচাতে তারা বাংলাদেশে আশ্রিত স্বজনদের কাছে চলে এসেছে বলে জানিয়েছে। দালালদের টাকা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কৌশলে ফাঁকি দিয়ে বর্ডার পার হয় তারা।
এর আগেও বেশ কিছু রোহিঙ্গা কয়েক দফায় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। কিছু রোহিঙ্গাকে পুশব্যাক করা হয়েছে। কিছু রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফে অবস্থিত শরণার্থী শিবিরে তাদের স্বজনদের বাসায় আশ্রয় নিয়েছে। রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর চলমান অস্থিরতার মধ্যে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করেছে রোহিঙ্গারা।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মতে, রাখাইনে দুই পক্ষের যুদ্ধে ৭০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা আটকা পড়েছে। এখনো সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য রোহিঙ্গারা অপেক্ষারত আছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
মূলত এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পারাপারের দালাল চক্র মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গাদের পার করাচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, কড়া নজরদারি এড়িয়ে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সুযোগ নেই। অনুপ্রবেশের চেষ্টা করা রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করা হচ্ছে।
নতুন করে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে জানতে চাইলে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মো. ইকবাল বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। তবে এ পর্যন্ত নতুন করে কত জন রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনই দেওয়া যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন বলেন, সম্প্রতি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের খবর এসেছে। নতুন করে কয়েকটি রোহিঙ্গা পরিবার বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। এ ব্যাপারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত রয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় দালাল চক্রের ব্যাপারে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হোসেন বলেন, সীমান্তে গড়ে ওঠা বাংলাদেশি দালাল চক্রে যুক্তদের চিহ্নিত করা হবে। চক্রের সদস্যদের তালিকা তৈরি করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
সূত্র জানিয়েছে, রাখাইন থেকে প্রথমে হেঁটে নাফ নদীর ওপারের তীরে আসে রোহিঙ্গারা। ঐ নদীতীরে নৌকা নিয়ে বসে থাকে দালাল চক্র। এপারেও একইভাবে বাংলাদেশের টেকনাফ সীমান্তে প্রতীক্ষায় থাকে দালালেরা। গভীর রাতে দুই পক্ষের দালালেরা টাকা নিয়ে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ করায় বাংলাদেশে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দালালেরা ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার বিনিময়ে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তে রাতের আঁধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে এই অবৈধ পাচারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এসব কাজে সীমান্তের অন্তত ২০ জনের বেশি নাম পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন টেকনাফের বদি আলম, হেলাল উদ্দিন, মো. রহিম বাদশা, মো. বলি, নূর মোহাম্মদ, মোহাম্মদ শালমান, মো. শামসুল আলম, মো. জাবেদ, ইমান হোসেন ইউচুপ, মো. ইউনুছ, মো. সিরাজ, আজিজ উল্লাহ, জাফর আলম, মো. জিয়াবুল, মো. শফিক, মুহাম্মদ মান্নান, করিম উল্লাহ, নজির আহমেদ, মো. শফিক, মো. ফারুক, মো. জয়নাল, নুর হোসেন ও মো. সাদ্দাম প্রমুখ। পুলিশের মানব পাচার তালিকায়ও এদের নাম রয়েছে। আছে অনেকের নামে মানব পাচার আইনে মামলাও।
মন্তব্য করুন: