প্রকাশিত:
৮ আগষ্ট ২০২৪, ১৭:০৫
যশোরে সাধারণ পুলিশ সদস্যরা নানা রকম দাবি নিয়ে বিক্ষোভ করেছে। পুলিশ সদস্যরা ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নে নানা ধরণের শ্লোগানে তারা যশোরের পুলিশ লাইন উত্তাল করে রাখেন। বিসিএস ক্যাডারভুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেন সাধারণ পুলিশ সদস্যরা। বুধবার (৭ আগস্ট) বিকেলে এ নজিরবিহীন এই ঘটনা ঘটে যশোর পুলিশ লাইনের সামনে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সফলতার পর সারা দেশের মতো যশোরের পুলিশও কর্মবিরতি পালন করছে। দায়িত্ব পালনের সময় নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তারা কর্ম বিরতি পালন করছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ পালন করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে দাবি করেন সাধারণ পুলিশ কর্মকর্তারা। এমন পরিস্থিতিতে ‘পুলিশ সংস্কার আন্দোলন’ নামে তারা বিকেলে পুলিশ লাইনের গেটের সামনে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
পুলিশের ১১ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, পুলিশ বাহিনীকে সংস্কার করে দলীয় প্রভাবমুক্ত করে জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত করতে হবে। যে পোশাক পরে পুলিশ কলঙ্কিত হলো সেই পোশাক বদলে কনস্টেবল থেকে শুরু করে আইজি পর্যন্ত একই পোশাকের ব্যবস্থা করতে হবে। পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যে সকল দালাল পুলিশের কারণে ছাত্র জনতার মৃত্যু হয়েছে তাদের চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে। তাদের অর্জিত অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে পুলিশের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে। সহিংসতায় যে সকল পুলিশ সদস্য আহত বা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যান্য সংস্থার মতো পুলিশ সদস্যদের জন্য শ্রম আইন মেনে ৮ ঘন্টার ডিউটি পালনের ব্যবস্থা নিতে হবে। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে অতিরিক্ত শ্রম দিলে ওভারটাইম হিসাবে গণ্য করতে হবে। প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের আবাসনসহ পর্যায়ক্রমে পদায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের প্রতি বছর ২০ দিন নৈমিত্তিক ছুটির বিপরীতে ৬০ দিন অর্জিত ছুটি ভোগ করার ব্যবস্থা করতে হবে। ওসি হিসাবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিগত ১৫ বছরে ধারা সুবিধা বঞ্চিত হয়েছেন তাদের দায়িত্ব দিতে হবে এবং ওসি হিসাবে ২ বারের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না এবং স্বাধীনতা পরবর্তী থেকে এই পর্যন্ত সীমাবদ্ধতা তুলে নিতে হবে। অধিঃস্তন পুলিশ সদস্যদের সাথে পিআরবি অনুসারে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করতে হবে এবং ব্যক্তিগত কাজে কোনো সময় ব্যবহার করা যাবে না। একই সাথে কনস্টেবল থেকে সকল পর্যায়ের অফিসারদের পোস্টিং বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়ওা আরো অনেক শর্ত রয়েছে তাদের দাবিতে। এই দাবি না মানলে তাদের আন্দোলন চলবে বলে জানানো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ কনস্টেবলরা বলেছেন, পুলিশের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দুর্নীতির সাথে জড়িত। তাদের নির্দেশে কনস্টেবলরা বিভিন্ন দুর্নীতিতে সহযোগিতা করেন। আর বদনাম হয় সাধারণ পুলিশ সদস্যদের। আন্দোলন সংগ্রামের সময় বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তারা এসি গাড়িতে করে মাঠে গিয়ে গুলি চালানো, বিক্ষোভ দমনে লাঠিচার্জের নির্দেশ ও যাকে খুশি তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। আবার এসি গাড়িতে করে ফিরে এসি রুমের মধ্যে বসে লেবুর শরবত পান করেন। তাদের কিছুই হয়না। যত ক্ষতির সম্মুখিত হন পুলিশ কনস্টেবলরা। অথচ তাদের ঝুঁকি ভাতা সামান্য তাই ঝুঁকি ভাতা বৃদ্ধি করার দাবি ও জানান।
পুলিশ সদস্যদের বিক্ষোভের সংবাদ শুনে সেখানে ছুটে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন, জুয়েল ইমরান ও ফিরোজ কবিরসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। তারা তাদের বিক্ষোভ থামানোর চেষ্টা করে বক্তব্য রাখেন। পরে পুলিশ সুপার মাসুদ আলম সেখানে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলেন। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের চাপের মুখে পড়ে তাদের সাথে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন।
পুলিশ সুপার বলেছেন, সব গুলো দাবি যৌক্তিক। কিন্ত এগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য পুলিশ হেড কোয়ার্টার ব্যবস্থা নেবে। নতুন মহাপরিদর্শক নিয়োগ পেয়েছেন। তার কাছে প্রস্তাবগুলো পাঠানো হবে। তিনি নিশ্চই পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর জন্য উদ্যোগী হবেন। তিনি সকল সদস্যকে ডিউটিতে যোগদানের প্রস্তুতি নিতে বলেন।
মন্তব্য করুন: