প্রকাশিত:
১১ আগষ্ট ২০২৪, ১৬:৪২
দীর্ঘদিন যাবত লোক চক্ষুর আড়ালে এমনটাই করে আসছেন ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নের কানুনিয়া গ্রামের মনিরুজ্জামান মনির (৫০)। পিতা মৃত: নুরুল ইসলাম হাওলাদারে সর্বকনিষ্ঠ সন্তান। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। অনেকদিন যাবত গাজিপুর জেলার সাইনবোর্ড এলাকায় বসবাস করে আসছেন তিনি।
সেখানে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। অবৈধ টাকা দিয়ে কিনেছেন ১৬ কাঠা জমিতে করা দুটি বাড়ি। এছাড়াও দূর্নীতি ও চোরাকারবারির মাধ্যমে আরো অনেক সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি। জানা গেছে শ্রীপুর ও ময়মনসিংহেও সম্পত্তি আছে নিজ স্ত্রী (উম্মে হাবিবা সাবানা)'র নামে। পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে অবৈধ টাকা জমা করা ৬ টি ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংক একাউন্ট।
সাম্প্রতিক নিজ ভাড়াটিয়ার সাথে পরকিয়া এবং অপর দিকে মেয়ে (আশা) ও স্ত্রীকে নিয়ে এলাকায় নানা চারিত্রিক কেলেংকারীর ঘটনা সাইনবোর্ড এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। যার কারনে এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিগন ও কাউন্সিলর কর্তৃক বিচার সালিশের সিদ্ধান্তে এলাকা থেকে বিতারিত হয়ে ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে নিজ গ্রামের বাড়ি কানুনিয়াতে আশ্রয় নেয়।
মূলত বাধ্য হয়েই এবং তার সংঠিত অপরাধকর্ম গুলো থেকে নিজেকে আড়ালের উদ্দেশ্যেই তিনি ঢাকা ছাড়েন। গাজীপুরের গাছা থানায় তার নামে একাধিক চুরি,টাকা আত্নসাতের সহ জালিয়াতি মামলা রয়েছে। এর আগেও সে ১৯৯৮ সালের জাল টাকা ও জাল ষ্ট্যাম্পের রাষ্ট্রদ্রোহি মামলায় জেল খেটেছেন কয়েক বার এবং জামিনে মুক্তি নিয়ে পারিবারিক সহায়তায় আমেরিকায় পালিয়ে গিয়েছিলো ২০০৫ সালে। ৩ বছর কাটানোর পর নিজ অপরাধ প্রবন মন এবং দূর্নীতির অর্থ, ক্ষমতার লালসায় আবার দেশ ফিরে আসেন ২০০৮ সালে। এরপর থেকে পুনরায় শুরু হয় তার পূর্বের অপরাধকর্ম ও নতুন কলা-কৌশল। যোগ দেন গাজিপুর মহানগর আ:লীগে। সেই সাথে আইনি ফাক ফোকড়ের মধ্য দিয়ে এবং রাজনৈতিক ছত্র ছায়ায় থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে মামলার নিস্পত্তি করান।
এরপর শুরু করেন একের পর এক অপরাধ কর্ম ও দূর্নীতি। যার থেকে বাদ যায়নি নিজ আত্নীয়-স্বজনদের ভূমি দখল, টাকা আত্নসাত,স্বর্ন অলংকার চুরি সহ ঐ এলাকার বাসিন্দাদের উপর নানাবিধ হয়রানি মূলক কর্মকান্ড। চারিত্রিক ভাবেও অনেক দুষ্কর্ম্মের প্রমান রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব ঘৃনিত কর্মকাণ্ড ও নিকৃষ্ট আচরনের জের ধরে পারিবারিক ভাবেও সকলের থেকে বর্তমানে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন তিনি।
স্থানীয় গোপন সূত্রে আরো জানা গেছে- বর্তমানে সে নিজ গ্রামে অবৈধ অর্থের জোরে আধিপত্য বিস্তার লাভের চেষ্টা করছে এবং বড় আকারে মাদক চোরাচালানীদের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গ্যাং তৈরি করছে। সেই সাথে নিজেও একজন নিয়মিত মাদকসেবী। যার কারনে প্রতিরাতে তার গ্রামের করা নতুন বাড়ির ছাদে বসায় মাদকের আড্ডা।
স্থানীয় বাসীন্দাদের মতে-
গত ৩ মাসে প্রায় ৪০০-৫০০ কেজি গাজা ও বিপুল পরিমাণ ইয়াবার চালান গ্রামে বসে পাচার করেছেন তিনি ও তার চ্যালারা। যার একটি ছোট চালান কিছুদিন আগে স্থানীয় ডিবি পুলিশ কর্তৃক জব্দ করা হয়। যেখানে প্রায় ৪৮ কেজি গাজা ধরা পড়ে তারই বাড়ির পাশের এক ভাংগা পুরানো মন্দিরের ভিতর থেকে। ধারনা করা হয় ১০-১২ লাখ টাকা মূল্যের মাদকের চালান ছিলো এটি। প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মাদক চালানের যোগান দাতা তিনি একাই। যা থেকে গ্রামে বসেই আয় করেছেন প্রায় কোটি টাকা।
গ্রামটিতে প্রবেশের রাস্তাঘাট কিছুটা সংকীর্ণ ও বেশ ভাংগা হওয়ায় এলাকাটি অনেকটা দূর্গম এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পৌছানো সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজ গ্রামকে বানিয়েছে মাদকের অভয়ারণ্যে। গড়ে তুলেছেন বিশাল নেটওয়ার্ক।
শুধু তাই নয় নিজের প্রভাবকে আরো প্রসারিত করার উদ্দেশ্যে নিজের অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে আয়েশা (১৪) কে কোনো রকম বৈধ কাবিন বা রেজিষ্ট্রি ছাড়াই জাল জন্ম সনদ বানিয়ে কথিত বাল্যবিবাহ দিয়েছেন ঐ একই এলাকার আরেক বড় মাদক চোরাকারবারি (আনোয়ার মল্লিক) পরিবারের ছোট ছেলের (শাওন মল্লিক) সাথে। যারা দীর্ঘদিন যাবত লোক সমাজের আড়ালে এলাকায় আগে থেকেই মাদক ব্যাবসার সাথে জড়িত ছিলো এবং বিশাল বড় বড় চালান পাচার করে আসছে একচেটিয়া ভাবে। যেটা এলাকাবাসী স্পষ্টভাবে জানলেও কেউ ভয়ে মুখ খুলতো না এতদিন।
এ ব্যাপারে থানায় অনেকবার অভিযোগ জানানো হলেও পুলিশ তদন্তে গেলে তাদেরকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়ে প্রতিবার বিষয় গুলো ধামাচাপা দিয়ে আসছে এবং পুলিশও এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
সম্প্রতি দেশে ছাত্র আন্দোলনে জয় লাভের পর মনিরুজ্জামান পার্শ্ববর্তী এলাকার কিছু বিএনপি সমর্থিত পাতি নেতার সাথে যোগ দিয়ে নানা অপকর্মের সাথে যুক্ত হয়ে ভাংচুর, লুট সহ নানা বিশৃঙ্খলার চেষ্টা ও পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে। সেই সাথে এখন নিজেকে বিএনপি কর্মী বলে দাবী করছে এবং নিরীহ জনতাকে নানা হুমকি-ধামকি দিয়ে ত্রাশের সৃষ্টি করছে।
বর্তমানে তার এই ভয়ংকর ত্রাশের রাজত্বে এলাকাবাসী এক রকম জিম্মি ও আতংকে দিন পার করছে।
তবে এলাকাবাসীর দাবী সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে তাকে ও তার অধিস্থ চ্যালাদের বিচারের আওতায় আনা হোক নতুবা সেনাবাহিনীর হাতে সোপর্দ করা হোক। যাতে ভবিষ্যতে এলাকাবাসী তাদের এই ভয়ংকর রুক্ষ সন্ত্রাসী আচরন ও মাদকের ছোবল থেকে মুক্তি পায়। সেই সাথে গ্রামের যুব সমাজ এবং ধংস হয়ে যাওয়া পরিবার গুলো নিস্তার লাভ করে।
দেশে নতুন আইনসভা গঠিত হওয়ায় জনমনে নতুন আশা সঞ্চার হয়েছে তাই এ ব্যাপারে সুষ্ঠ ও ন্যায় বিচার লাভের জোর দাবী জানিয়েছে শুক্তাগড় ইউনিয়নের এলাকাবাসী।
মন্তব্য করুন: