প্রকাশিত:
১৮ আগষ্ট ২০২৪, ১৮:৩০
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেনের পদত্যাগ রোধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনের হুমকি দিয়েছেন।
রোববার (১৮ আগস্ট) বিকেল ৫টার দিকে ভিসির পদত্যাগ ঠেকাতে প্রশাসনিক ভবনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শত শত শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে প্রশাসনিক ভবন ও উপাচার্যের কার্যালয় দখল করে রেখেছেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ভিসি স্যারের পদত্যাগ মানি না, মানব না/ভিসি স্যারের জন্য খুবি ধন্য/ভিসি স্যার পদত্যাগ করলে আমরণ অনশন’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
এক পর্যায়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য সময় নিয়েছেন। এর পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা খুবির প্রধান ফটক শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণে অবস্থান নেন।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ২ আগস্ট খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের শিক্ষার্থী ও জনতার বিশাল মিছিল পুলিশের বাধা উপক্ষো করে শিববাড়ি থেকে জিরোপয়েন্ট চলে আসে। এই মিছিল শহরমুখী হতে চাইলে শত শত সশস্ত্র পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশ সর্বশক্তি নিয়োগ করে। টিয়ারগ্যাস, লাঠিচার্জ, জলকামান, রাবার বুলেট ও গুলি ছুড়লে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মুহুর্মুহু শব্দে প্রকম্পিত হতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকা।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করে উদ্বিগ্ন সময় কাটিয়েছেন খুবি উপাচার্য। যেভাবে সংঘর্ষ মাত্র দুইশ গজ দূরের বাংলো থেকে দেখেছেন তাতে গভীরভাবে চিন্তিত হয়ে পড়েন শিক্ষার্থীদের জীবনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায়। একবার ক্যাম্পাসের বাংলোর ভেতর, একবার বাইরে পায়চারি করে অস্থির হয়ে পড়েন তিনি। এমন কঠিন অবস্থায় তার প্রধান চাওয়া ছিল যেন কোনো ছাত্র হতাহত না হয়।
উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন কোটা আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কঠিন অবস্থার মুখেও সাহসের সাথে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেননি কোনো পুলিশ, হতে দেননি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। ক্যাম্পাসে যাতে পুলিশ না ঢোকে সেজন্য সেই কঠিন চাপের মুখেও তিনি ছিলেন অনড়।
সেই সময় প্রফেসর মাহমুদ হোসেনের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়। তাতে দেখা যায় উপাচার্য প্রফেসর মাহমুদ হোসেন অফিসে বসার একটি ছবির সাথে লেখেন, ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো পুলিশ ঢুকবে না, এখানে আমিই প্রশাসন’। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মনোবল আরও চাঙ্গা করে। ওই দিনের পর পুলিশ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ খবর শোনার পরপরই উপাচার্য ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের দপ্তরকে থানায় পাঠান। নিজে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন। ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের দপ্তরের পরিচালক ও সহকারী পরিচালকদের নির্দেশনা দেন যতক্ষণ শিক্ষার্থীদের থানা থেকে ছেড়ে না দেওয়া হয় ততক্ষণ সেখানে থাকতে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি পদত্যাগের দাবি উঠলেও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগের দাবি তোলেননি কোনো শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা তাদের বিপদের সময় পাশে থাকা ভিসিকেই স্বপদে রাখতে চান।
যেখানে বাংলাদেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগ দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা, সেখানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে নিয়ে গর্ববোধ করছেন খুবি শিক্ষার্থীরা।
মন্তব্য করুন: