প্রকাশিত:
২২ আগষ্ট ২০২৪, ১৪:১১
শেখ হাসিনার নামে করা মামলায় আসামি করা হয়েছে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী ও শিল্পগ্রুপ বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহানকে। অথচ ঘটনার সময় দেশেই ছিলেন না বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান।
এমন হয়রানিমূলক মামলায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ীরা।
দেশের বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা দেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবেন। ব্যবসায়ীদের ওপর দমন-নিপীড়ন করা হলে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কখনো ধরে রাখা যাবে না। দেশের বিনিয়োগ বাড়বে না। বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হবে না। যা অর্থনীতিকে চরম সংকটে ফেলবে। ব্যবসায়ীরাই দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তাদের কোনোভাবেই হয়রানি করা যাবে না। সরকারের এখন জরুরি ভিত্তিতে দরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা উন্নত করা। ব্যবসায়ীর নিরাপত্তা দেওয়া।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় রাজধানীর বাড্ডা থানায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। তিনটি মামলাতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরসহ মোট ৫৩৭ জনকে আসামি করা হয়।
জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতি চাপে রয়েছে। সরকারের কর্তব্য এখন এ সংকট উত্তরণের জন্য ব্যবসায়ীদের জ্বালানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দেওয়া। দেশের শিল্প কারখানায় লাখ লাখ মানুষ চাকরি করে। যদি ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, কারখানা চালু রাখতে না পারেন তাহলে অর্থনীতিতে সংকট বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা না করলে দেশের বিনিয়োগ বাড়বে না। উল্টো যদি আবারও ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হয়, ব্যবসায়ীদের ওপর দমন-নিপীড়নমূলক কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় সেটা দেশের জন্য আরও বড় সংকট তৈরি করবে। আমাদের আবেদন- সরকার এ মুহূর্তে ব্যবসায়ীদের কোনো ধরনের যেন হয়রানি না করে। ব্যবসায়ীরা যদি আতঙ্ক বোধ করেন তাতে দেশের বেশি ক্ষতি হবে। দেশের পরিবর্তন আনতে অর্থনীতি শক্তিশালী করতে হবে। আর অর্থনীতি শক্তিশালী করবেন ব্যবসায়ীরা।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান গণমাধ্যমকে বলেছেন, গণহারে মামলা হয়রানি করা যাবে না। বিশেষ করে যেসব ব্যবসায়ী নিরীহ নিরপরাধ, যাদের বিরুদ্ধে কোনো এলিগেশন নেই। তাদের কোনোভাবেই হয়রানি করা যাবে না। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক ক্ষতি হবে। বরং ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিকে সচল রাখতে হবে। অন্যথায় দেশে আরও বেশি বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও সরকার ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সেক্টরের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনা ঘটছে। এতে অপরাধী নন এমন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও মামলা হচ্ছে। আমি নিজেও কোনো দিন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নই। আমি এটাও চাই ব্যবসার সঙ্গে রাজনীতিকে মেলানো যাবে না। মেলানো ঠিকও হবে না। যারা প্রকৃত অর্থে অন্যায় করেছেন, টাকা পাচার করেছেন, দুর্নীতি করেছেন সেসব ব্যবসায়ী বা রাজনীতিকদের ধরে আইনের আওতায় আনলে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যারা দোষী নন, অন্যায় করেননি, অনিয়ম-দুর্নীতি করেননি তাদের যেন হয়রানি না করা হয়। নইলে কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি বাধার মুখে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে যারা নিরপরাধ ও নিরীহ ব্যবসায়ী তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়বেন। এজন্য মামলা করার ক্ষেত্রে আগে দেখতে হবে যার বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে তিনি আদৌ অপরাধী কি না। এতে তিনি হয়রানির শিকার হতে পারেন যা ব্যবসা-বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
দেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি আমিন হেলালী গণমাধ্যমকে বলেন, যারা লুটপাট করে টাকা নিয়ে পালিয়েছে তাদের আলাদা করে ব্যবস্থা নিন। যারা ব্যবসা করছেন তাদের ওপর লুটপাটের দায়ভার চলে এলে হয়রানি করলে ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারবেন না। যারা ব্যবসা করছেন তাদেরই পাওয়া যাচ্ছে, আর যারা লুট করেছেন তারা পালিয়েছেন। লুটপাটকারীদের চাপটা ব্যবসায়ীদের ওপর আসছে, এটা হতে পারে না। এতে ব্যবসায় প্রতিযোগিতা হারাবে। ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারবেন না। তখন ব্যবসা ছেড়ে দেবেন। ফলে অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। যদি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে লাভ লোকসান বিভিন্ন ধরনের ঘটনা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেগুলো ব্যবসায়িকভাবেই আমরা সমাধান করব। তাহলে ব্যবসায়ীদের ওপর লোড কম আসবে।
এফবিসিসিআইর সাবেক সহসভাপতি আবুল কাশেম হায়দার গণমাধ্যমকে বলেন, প্রকৃত ব্যবসায়ীদের নামে হয়রানিমূলক মামলা আমরা আশা করি না। যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে মামলা হোক এবং বিচার হোক। যারা ব্যাংক লুট করে টাকা বিদেশে পাচার করেছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা হোক। না হলে দুর্নীতি বন্ধ হবে না।
প্রসঙ্গত, বাড্ডা থানায় প্রথম মামলাটি দায়ের করা হয় মঙ্গলবার রাতে। মামলা নম্বর ৪। মাছুমা নামে এক নারীর দায়ের করা মামলায় শেখ হাসিনা, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরসহ ১৮০ জনের নাম রয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় মামলাটি দায়ের করা হয় একই থানায় (২১ আগষ্ট) বুধবার। আবু বকর সিকদার নামে আরেক ব্যক্তি ১৭৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। মামলা নম্বর ৬। অপর মামলার বাদী হলেন বিল্লাল। মামলা নম্বর ৭। মামলায় ১৭৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
মন্তব্য করুন: