রবিবার, ২৪শে নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • সম্পদের হিসাব দিতে আরও ১ মাস পাবেন সরকারি কর্মচারীরা
  • শপথ নিলেন নতুন সিইসি ও ৪ নির্বাচন কমিশনার
  • বঞ্চিত কর্মকর্তাদের গ্রেড-১ দেওয়া হবে
  • ৫ বিসিএসে ১৮ হাজার প্রার্থী নিয়োগ দেবে সরকার
  • সিইসিসহ নতুন নির্বাচন কমিশনারদের শপথ দুপুরে
  • ঢাকার বাতাস আজ ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’, দূষণের শীর্ষে লাহোর
  • বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটেনের রাজা-রানি
  • প্রয়োজনে ভেঙে ফেলা হবে হাওরের সড়ক
  • পলাতক পুলিশ সদস্যদের বেতন বন্ধ, মামলার প্রস্তুতি
  • ৩ মাসে জ্বালানি খাতে ৩৭০ কোটি টাকা সাশ্রয়

পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ

লক্ষ্মীপুরে চারিদিকে অথৈ পানি

তছলিমুর রহমান, লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত:
২৫ আগষ্ট ২০২৪, ১৬:৪০

লক্ষ্মীপুরে যে দিকে চোখ যায়, সে দিকে শুধু অথৈ পানি। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার লাখ লাখ মানুষ। শুক্রবার বিকেল থেকে নোয়াখালীর পানি ঢুকে পড়ায় লক্ষ্মীপুরে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড় আগে থেকে যে সব এলাকায় পানি ছিল সেই এলাকা গুলোতে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে ২ থেকে ৩ ফুট।


জানা যায়, টানা ভারী বর্ষণে লক্ষ্মীপুরের সর্বত্র জলাবদ্ধতায় পানিবন্দি হয়ে পড়েন প্রায় ৭ লাখ মানুষ। এরমধ্যে পানি কমতেও শুরু করেছিল জেলা শহরসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ইউনিয়নগুলোতে। কিন্তু শুক্রবার থেকে নোয়াখালীর বন্যার পানি রহমতখালীসহ বিভিন্নভাবে ঢুকে লক্ষ্মীপুরে। এতে লক্ষ্মীপুর পৌরসভা ও পূর্বাঞ্চলের ইউনিয়নগুলোর অধিকাংশ এলাকার মানুষ নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।


এদিকে শনিবার সকাল থেকে বন্যার পানির চাপ বেড়ে গিয়ে নতুন করে আরও কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে।
পানিবন্দি এলাকা ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের পৌরসভা গুলো ও প্রতিটি ইউনিয়নের প্রায় ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি। এতোদিন বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে মানুষের ঘরবাড়ি ডুবে ছিল। গত দুইদিন ধরে নোয়াখালীর বন্যার পানি রহমতখালী খাল হয়ে লক্ষ্মীপুরে ঢুকে পড়ছে।

এতে সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের চন্দ্রগঞ্জ, চরশাহী, দিঘলী, মান্দারী, বাঙ্গাখাঁ, উত্তর জয়পুর, লাহারকান্দি ইউনিয়নসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কোথাও কোথাও প্রায় ৫-৬ ফুট পানিতে ডুবে আছে জনপদ। রামগতি ও কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা-হাজীগঞ্জ বেড়ির পশ্চিম পাশে ভুলুয়া নদীতে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে প্রায় ২৬ দিন ধরে পানিতে ডুবে আছে বিস্তীর্ণ জনপদ। রামগতি-কমলনগর ও নোয়াখালীর আন্ডারচর ও চরমটুয়া গ্রামের ৩ লক্ষাধিক মানুষ এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। জলাবদ্ধতার এ পানি কোথাও সরছে না।

শনিবার দিনব্যাপী লক্ষ্মীপুরের আকাশে সূর্যের হাসি থাকলেও মানুষের চেহারায় ছিল বিষাদেট চিহ্ন। তবে রাতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে।
জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভারি বর্ষণ ও জোয়ারের কারণে এখন পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রায় ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩৯৫ ম্যাট্রিক টন চাল ও ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।


বন্যার্তদের জন্য জেলার ১৮৬টি স্থায়ী এবং ৬০টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষজন আশ্রয় নিয়েছে। সবাইকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নোয়াখালীর পানির চাপে চন্দ্রগঞ্জ, চরশাহী, দিঘলী, হাজীরপাড়া, দত্তপাড়া, মান্দারী, কুশাখালী, তেওয়ারীগঞ্জসহ কয়েকটি ইউনিয়নে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এসব এলাকায় ভারি বর্ষণের পানি সঙ্গে যোগ হচ্ছে নোয়াখালী থেকে আসা পানি। অনেক এলাকায় কোমর সমান পানি রয়েছে। ঘর-বাড়ির ভিতরেও পানি। লক্ষ্মীপুর সদরের রহমতখালী খাল, রামগতি, কমলনগরের ভুলুয়া নদী, রামগঞ্জের ওয়াপদা, বিরেন্দ্র খাল, রায়পুরের ডাকাতিয়া নদীসহ বিভিন্নস্থানে নদী-খাল দখল করে মাছ চাষ, সেতু-কালভার্ট-রাস্তা, দোকানপাটসহ স্থাপনা নির্মাণ করার কারণে ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।


লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন সড়কের বেশির ভাগ অংশ এখন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। উঁচু সড়ক গুলো তলিয়ে যাওয়ায় সড়কের দুইপাশের বাসিন্দারা ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে।


এসব এলাকায় প্রায় সবগুলো বসতবাড়িই পানির নিচে। যাদের বসতভিটা নীচু, তাদের ঘরে হাঁটুপানি।
বাড়ির উঠোনে কোমর পানি। পানিতে নিমজ্জিত টিউবওয়েল এবং শৌচাগার। ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। সেইসঙ্গে বিশুদ্ধ পানির অভাব। এক দুর্বিষহ জীবন পার করতে দেখা গেছে ওইসব এলাকার বাসিন্দাদের।


যাদের বসতঘরে থাকার মতো পরিস্থিতি নেই, তারা উপায়ন্তর না পেয়ে উঠেছেন পার্শ্ববর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে। আবার কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।


লাহারকান্দি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বৃদ্ধ কাশেম ও রৌশন দম্পতি। সড়কের পাশেই তাদের বসতবাড়ি। তাদের ঘরের ভেতরে হাঁটু পানি। বাড়ির উঠোনে কোমর পানি। ঘরের দরজার সামনে বসেই কাপড়চোপড় ধোঁয়া, হাঁড়ি পাতিল পরিষ্কারের কাজ করতে পারেন। বৃদ্ধা কাশেম জানান, ঘরে আট জন সদস্য তাদের। এদের মধ্যে চারজনই শিশু। ঘরের মেঝেতে পানি, তাই শিশুদের নিয়ে ভয় কাজ করে।


দত্তপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) মামুনুর রশিদ বলেন, বৃষ্টি নেই, এরপরও হঠাৎ করে আমাদের এলাকায় পানি বাড়ছে। এগুলো নোয়াখালী থেকে আসা পানি। এতে মানুষের দুর্ভোগ-কষ্ট বাড়ছে।
চরশাহী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম রাজু বলেন, আমার ইউনিয়নের পাশেই নোয়াখালী। এতে সেখানকার পানির চাপ আমার এলাকায় এসেছে। ঘরবাড়ি-রাস্তাঘাটে এখন ৩-৪ ফুট পানি। এতে সাইক্লোন সেল্টারসহ ১৬টি স্থানে কিছু লোক আশ্রয় নিয়েছেন। তাদেরকে সরকারি-বেসরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।


লক্ষ্মীপুরের বন্যার সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হয় জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইউনুস মিয়ার সঙ্গে।
তিনি বলেন, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চলে পানি বেড়েছে। নোয়াখালীর বন্যার পানি বেগমগঞ্জ হয়ে এসব এলাকায় ঢুকে পড়ছে। ভাটার সময় স্লুইস গেট দিয়ে পানি বের হচ্ছে। আশাকরি পানি নামতে থাকলে পরিস্থিতি উন্নতি হবে।
তিনি জানান, বন্যার্তদের জন্য জেলার ১৮৬টি স্থায়ী এবং ৬০টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে।

এসব আশ্রয়কেন্দ্রে রবিবার পর্যন্ত প্রায় দশ হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, জেলার পাঁচ উপজেলার প্রায় ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দুর্গত মানুষদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর