শুক্রবার, ২রা মে ২০২৫, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় এমন চুক্তি না করার আহ্বান
  • সবার আগে বাংলাদেশ, এটিই হবে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য
  • হাসিনার বক্তব্যের ফরেনসিক প্রতিবেদন উপস্থাপন
  • ঢাকাসহ ৮ জেলায় বজ্রপাতের সতর্কতা জারি
  • শ্রমিকদের আগের অবস্থায় রেখে নতুন বাংলাদেশ সম্ভব নয়
  • শ্রমিকদের ৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ
  • ‘শ্রমিক-মালিকদের যৌথ প্রচেষ্টাই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারে’
  • মালিক-শ্রমিক এক কাতারে দাঁড়ালেই সমাজের চিত্র বদলে যাবে
  • জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেলো বরিশালের আমড়া
  • বায়ুদূষণে আজ শীর্ষে ঢাকা, বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’

নদী-খাল গুলোতে আড়াই হাজারের বেশি ‘অবৈধ’ বাঁধ

লক্ষ্মীপুরে বন‍্যার পানি কমছে ধীর গতিতে

তছলিমুর রহমান, লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত:
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬:৩৩

লক্ষ্মীপুরে বন্যার পানি কমছে ধীরেগতিতে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, জেলার অধিকাংশ নদী-খাল দখল হয়ে গেছে। বেশীরভাগ নদী ও খালে অপরিকল্পিতভাবে দেওয়া হয়েছে বাঁধ। এতে করে পানি নেমে যেতে পারছে না। তাই গত ১৫ দিনেরও বেশি সময় দরে জেলার লাখ-লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দি হয়ে আছেন। গত ৪-৫ দিনে জেলার কিছু স্থানে দুই থেকে আড়াই ফুট পানি নামলেও অনেক স্থানে এখনো হাটু, বুক ও কোমর পানি রয়ে গছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, দ্রুত পানি না নামলে জলাবদ্ধতায় এই অঞ্চলের মানুষকে ভুগতে হবে দীর্ঘদিন। তাই দ্রুত এসব অবৈধ বাঁধ অপসারণ করে পানি চলাচল স্বাভাবিক রাখার দাবি তাঁদের।

এদিকে বন্যার পানিতে এখনো তলিয়ে রয়েছে জেলার ৫৮টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকা। স্মরণকালের এ বন্যায় লক্ষ্মীপুর জেলার ৯০ শতাংশ এলাকাই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। প্রায় ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি ছিল। তবে তা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরে ছোট-বড় প্রায় ১১০টি নদী-খাল রয়েছে। এসব নদী-খালে প্রায় আড়াই হাজার বাঁধ রয়েছে। বেশির ভাগ বাঁধ অবৈধভাবে দিয়ে মাছ চাষ করেছেন একদল প্রভাবশালী। ফলে বন্যা বা জলাবদ্ধতার পানি চলাচল ব্যাহত হয়। বিশেষ করে ডাকাতিয়া ও ভূলুয়া নদী, রহমতখালী এবং বিরোন্দ্রখাল পানি নিষ্কাশনের অন্যতম পথ। প্রায় ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী বা খাল মিশেছে মেঘনা নদীতে। এই চারটি নদী ও খালের আশপাশের পানি কমছে দুই থেকে আড়াই ফুট। এ ছাড়া এখনো তলিয়ে আছে বেশির ভাগ রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি।

লক্ষ্মীপুর অংশের উপকূলীয় অঞ্চলকে বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে পাঁচ যুগ আগে মেঘনা নদীর পাশে নির্মাণ করা হয় ৩৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। এই বেড়িবাঁধের আশপাশে রয়েছে ঘরবাড়ি ও জেগে ওঠা কয়েক হাজার একর ফসলি জমি। গত চার দশকে সেই এলাকা দখল কিংবা ইজারা নিয়ে তৈরি করা হয় মাছের ঘের ও পুকুর। আর খালের ওপর বাঁধ তৈরি করে মাছ চাষ করছেন প্রভাবশালীরা। এতে বাঁধা হয়েছে পানি চলাচলের পথ।

মেঘনার জোয়ার, অতিবৃষ্টি ও বন্যার পানি নামতে না পারায় প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়ে ১০ লাখের বেশি মানুষ। গত কয়েক দিনের আকস্মিক বন্যায় জেলার ৫টি উপজেলার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে বাঁধের কারণে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে থাকা জেলার ৫টি উপজেলার ৫৮টি ইউনিয়ন ও ৪টি পৌরসভার প্রত্যেকটি এলাকার মানুষ এখনো পানিবন্দি।

এদিকে ৪-৫ দিন ধরে বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও তেমন উন্নতি হয়নি পরিস্থিতির। দুর্ভোগ কাটেনি বানভাসি মানুষের। পানিবন্দি মানুষের দিন কাটছে অর্ধহারে-অনাহারে। কবে নাগাদ বন্যার উন্নতি হয়ে স্বাভাবিক হবে জনজীবন, সেটাও নিশ্চিত নয় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সদর উপজেলার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির, তোফায়েল আহমেদ, বাহার উদ্দিন ও পৌর শহরের বাসিন্দা আবদুর রহমান, আলমগির, ইব্রাহিম বলেন, এবারের মতো বন্যা এর আগে দেখা যায়নি। বৃষ্টি না থাকলেও পানি নামছে ধীরগতিতে। এতে চরম দুর্ভোগে ভানবাসি মানুষ। দুই দিনে ৫-৬ ইঞ্চি পানি কমছে। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধভাবে প্রভাবশালীরা ডাকাতি ও রহমতখালী খালসহ বিভিন্ন খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার কারণে পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে মানুষের ভোগান্তি বাড়ে কয়েক গুন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, বন্যার শুরু থেকে অবৈধ বাঁধ অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। ইতিমধ্যে দুই শতাধিক স্থানে খালের ওপর বাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে বন্যার অবস্থা স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া অবৈধ বাঁধ অপসারণের তাঁদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডাকাতিয়া ও ভুলুয়া নদী, রহমতখালী এবং বিরোন্দ্রখাল জেলার পানি নিষ্কাশনের অন্যতম পথ। এই খালগুলো বর্তমানে দখল হয়েছে। কোথাও কোথাও হয়েছে দূষণ। খালের ওপর বাঁধ রয়েছে কোথাও কোথাও। এতে করে পানি নামতে পারছেনা। অবৈধভাবে প্রভাবশালীরা ডাকাতি, রহমতখালী খালসহ বিভিন্ন খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফলে দ্রুত পানি সরছে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান বলেন, বন্যার পানি কমছে। তবে ধীরগতিতে। জেলায় ১১০টি ছোট-বড় নদী-খাল রয়েছে। এইসব নদী-খালে প্রায় আড়াই হাজারের বেশি অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এ ছাড়া কয়েক হাজার বহুতল ভবন অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে। ভুলুয়া ও রহমতখালী নদীসহ খালগুলো দখলে সংকুচিত হয়ে গেছে। এ কারণে পানি নামতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৫০টি বাঁধ কেটে দেওয়া হয়। অবৈধভাবে দখল করা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হবে। দ্রুত পানি নেমে গেলে বন্যার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জানান, ভয়াবহ বন্যার কবলে ৫৮টি ইউনিয়নের লাখ লাখ মানুষ। অনেকে মেহনতি মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। যতই দিন যাচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তাঁদের চোখের সামনে ভেসে উঠছে। বানের পানিতে সর্বহারা এসব মানুষের ভরসা এখন সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ। পানিতে সবগুলো সড়কে বুকসমান পানি। ফলে সেসব এলাকায় ত্রাণ–সহায়তা দেওয়ার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌকা। ত্রাণ দেওয়ার জন্য কেউ গেলেই বুকসমান পানি ডিঙিয়ে সেখানে হুড়মুড়িয়ে ছোটেন নারী-পুরুষসহ সবাই।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর