প্রকাশিত:
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:২২
ভয়াবহ বন্যার কবলে রয়েছে লক্ষ্মীপুরের ৫ উপজেলার বাসিন্দারা। দীর্ঘদিন ধরে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তীত থাকায় পানিবন্দি বাসিন্দাদের মাঝে দেখা দিচ্ছে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি ও চর্মরোগসহ বিভিন্ন পানি বাহিত রোগের প্রকপ। এতে হাসপাতাল গুলোতে বেড়েছে রোগীর চাপ। শর্য্যা সংকটে মেঝেতে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন অনেক রোগী। আক্রান্তদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে কলেরা স্যালাইন, সিরাপ সালফুটামল, হিসটাসিন ও ডায়রিয়া এনটিভয়োটিকসহ ওষধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে বাহিরে থেকে স্যালাইনসহ ওষধ কিনতে হচ্ছে এসব সরকারি হাসপাতালের রোগীদের।
সরেজমিনে ১০০ শর্য্যার লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপে তিল দারণের জায়গা নেই। এক একটি বেডে গাদাগাদি করে তিন-চার জন করে রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেক রোগীই বেডে জায়গা না পাওয়ায় মেঝেতেই বিছানা পেতে সারিবদ্ধ ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নার্স সংকটে রোগী ও তাদের স্বজনদের ভীড় ঠেলে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ব্রাদার নোমান হোসেন বলেন, ১০ বেডের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বর্তমানে ভর্তি রোগীই আছে ৯৫ জন। এক দুজন নার্স দিয়ে এতো গুলো রোগীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা খুবই কষ্ট কর। একজনের স্যালাইন লাগাতে গেলে-দশ জন ডাকে ওষধ দিতে। তার উপরে স্যারাইন ও ডায়রিয়া এন্টিভায়টিক ওষধ সংকট। এখন রোগীর স্বজনরা বাহির থেকে কিনে আনলে তাদিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে নিচ্ছি।
দুই দিন ধরে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে একই বেড ভাগ করে আরো দুই রোগীর সাথে ৭ মাসের শিশু মিরাজকে নিয়ে ভর্তি আছেন মান্দারি ইউনিয়নের বাসিন্দা তাসলিমা আক্তার। তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, গত ১০দিন ধরে বাড়িতে কোমড় সমান পানিবন্দি আছি। টয়লেট ও ডোবার নোংরা ময়লা বন্যার পানিতে একাকার। এতে আমার ৭ মাসের ছেলের জর আর ডায়রিয়ায় খুব খারাপ অবস্থা। সরকারি হাসপাতেল এসে আরো বিপদে পড়েছি। শত-শত মানুষের মধ্যে থেকে সন্তানের সাথে আমরাও অসুস্থ হয়ে পড়েছি।
একই কথা বলেন পৌর শহরের থেকে শিশু কন্যা তাসুকে নিয়ে ভর্তি দিনমুজুর খোকন। তিনি বলেন বন্যার পানি পচে চারদিকে ডায়রিয়াসহ নানান অসুখ দেখা দিয়েছে। আমার ১০ বছরের মেয়ের ডায়রিয়ায় খুব খারাপ অবস্থা। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েও স্যারাইনসহ সব ওষধই বাহিরের ফার্মেসী থেকে কিনতে হচ্ছে। কিছু বললে নার্সরা বলে ওষধ নাই কোথা থেকে দিবো?
চর লরেন্স থেকে আসা সামছুন নাহার, সদরের চৌধুরী বাজার এলাকা থেকে আসা ইমনসহ কয়েকজন রোগীর স্বজনরা জানান, জায়গাই পাচ্ছেন না তারা। তবুও চলাচলের স্থানে বিছানা পেতে আছে, ময়লা দূর্গন্ধ আর রোগী ভীড়ে খুই খারাপ অবস্থা। চিকিৎসা সেবা নেই বলেই চলে। সরকারি হাসপাতেলর এমন অবস্থা আগে কখনো দেখেন নি তারা।।
ডায়রিয়া বিভাগের ইনচার্জ লিলু রানী দাস বলেন, গত তিন দিনে ৩ শতাধিক ডায়রিয়া ও জ্বর নিয়ে রোগী ভর্তি হয়েছে। যেভাবে রোগী ভর্তি হচ্ছে তারা সবই বন্যাক্রান্ত এলাকার। গত তিন দিনে গণ হারে ডায়রিয়া, জ্বর নিয়ে রোগী ভর্তি হচ্ছে। ১০ জনের বেড তো খালি নেই। মেঝেতেও হাটার জায়গা নেই। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
জানতে চাইলে তিনি আরো জানান, হাসপাতালে, কলেরা স্যালাইন, সিরাপ সালফুটামল, হিসটাসিন ও ডায়রিয়া এনটিভয়োটিকসহ ওষধের তীব্র সংকট। যেতুটু ছিলো সব রোগিদের সমহারে বন্টন হচ্ছে। রোগীরা এখন বাহির থেকে ওষধ কিনতেচ্ছে। উধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এদিকে জেলার ৫টি উপজেলার আশ্রয় কেন্দ্রে গুলোতে ডায়রিয়া, জ্বরসহ পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মেডিকেল টিমের কর্মীরা চিকিৎসা সেবা দিলেও তা অপর্যাপ্ত। এতে মাবেতর জীবনযাপন করছেন আশ্রয়ন কেন্দ্রের বাসিন্দাসহ স্থানিয়রা।
লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা. আহাম্মদ কবীর বলেন, বন্যার কারণে ডায়রিয়াসহ চারদিকে পানি বাহিত রোগের প্রকপ দেখা দিচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে শুরু থেকে আশ্রয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন এলাকায় ৬৪টি মেডিকেল টিমের সদস্যরা চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে হাসপাতালগুলোতে রোগী বাড়ায় কলেরার স্যারাইনসহ ওষধের সংকট দেখা দিয়েছে। বিষয়টি উধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দু-তিন দিনের মধ্য স্যালাইনসহ ওষধ সরবরাহ করা হলে সংকট নিরসন হবে বলেও জানান তিনি।
মন্তব্য করুন: