প্রকাশিত:
৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২০
চলমান বন্যায় দেশের ২৪টি জেলার প্রায় তিন লাখ হেক্টর জমির আউশ ও আমন আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার এই নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে দেশের চাল উৎপাদনে। এবার আউশ মৌসুমে তিন লাখ টন এবং আমন মৌসুমে চার লাখ টন চালের উৎপাদন কমতে পারে। সব মিলিয়ে এই দুই মৌসুমে চালের উৎপাদন কম হতে পারে সাত লাখ টন।
এতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় পাঁচ লাখ টন চাল আমদানি করতে হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক কৃষিসেবা বিভাগের ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) চলতি মাসের গ্লোবাল অ্যাগ্রিকালচারাল ইনফরমেশন নেটওয়ার্কের (গেইন) ‘গ্রেইন অ্যান্ড আপডেট’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গত মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।
ইউএসডিএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমন ধান উৎপাদনে বড় বিপর্যয়ের কারণে চলতি বছর চাল উৎপাদনে ভাটা পড়তে পারে।
গত অর্থবছরে এক কোটি ৪৬ লাখ টন আমন চাল উৎপাদন হলেও চলতি অর্থবছরে তা এক কোটি ৪২ লাখ টনে নেমে আসতে পারে। এ ছাড়া আউশের উৎপাদন ২৪ লাখ টন থেকে ২১ লাখ টনে নামতে পারে। সব মিলিয়ে এ দুই মৌসুমে চালের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তবে সুখবর থাকবে আগামী বোরো মৌসুমে।
বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন পাঁচ লাখ টন বাড়তে পারে। এ মৌসুমে মোট চালের উৎপাদন দুই কোটি টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দুই কোটি পাঁচ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে। সব মিলয়ে আগামী মৌসুমে চালের উৎপাদন হতে পারে তিন কোটি ৬৮ লাখ টন; গত অর্থবছরে যা ছিল তিন কোটি ৭০ লাখ টন। ফলে তিন মৌসুম মিলিয়ে দেশে চালের উৎপাদন কমতে পারে দুই লাখ টন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, বন্যার কারণে ২৪টি জেলার কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এসব জেলায় ১৭ লাখ ৭২ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে ফসল আবাদ করা ছিল। এসব ফসলের মধ্যে তিন লাখ ৪৪ হাজার ৬৭৬ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব জেলার প্রায় ২০ শতাংশ ফসলি জমি বন্যায় আক্রান্ত। ক্ষতির শিকার হওয়া ফসলের মধ্যে রয়েছে আউশ ধান ৭০ হাজার ৬১৯ হেক্টর, আমন দুই লাখ ২০ হাজার ৬৩৪ হেক্টর, বোনা আমন চার হাজার ৩৫১ হেক্টর এবং রোপা আমন বীজতলা ১৯ হাজার ৭৭৫ হেক্টর।
এ ছাড়া অনান্য কৃষি ফসল তো আছেই। সব মিলিয়ে কৃষিতে এরই মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্যার কারণে আবাদি ধানের ক্ষতি হওয়ায় আগামী আউশ ও আমন মৌসুমে চালের উৎপাদন বেশ ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। এ জন্য বিকল্প সব ধরনের উদ্যোগ এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের চালের উৎপাদনের তথ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যগত কিছু পার্থক্য রয়েছে। মার্কিন কৃষি বিভাগ চালের উৎপাদনের তথ্যে সাধারণত মাড়াই করা চালকে বুঝিয়ে থাকে। অন্যদিকে বিবিএসের হিসাবে উৎপাদন পর্যায়ের তথ্যকে বিবেচনায় নিয়ে চালের তথ্য বের করা হয়। এর ফলে বিবিএসের তথ্যে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে চালের উৎপাদন দেখানো হয়েছিল তিন কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার টন। গত অর্থবছরের চালের চূড়ান্ত হিসাব এখনো বিবিএস করতে পারেনি।
মন্তব্য করুন: