প্রকাশিত:
৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:০৮
শর্টসার্কিট ঘিরে বিচ্ছিন্নভাবে আগুনের স্ফুলিঙ্গ, রাতে হঠাৎ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসা যেন এখন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) খালেদা জিয়া হলের নিয়মিত ঘটনা। ফলে রীতিমতো আতঙ্কে সময় পার করছেন হলের আবাসিক ছাত্রীরা। তাই এখন শিক্ষার্থীদের হলে অবস্থান করাটাও বিপদজনক মনে করছেন অনেকেই। ফলে প্রশ্ন উঠেছে হলের পুরাতন ব্লকটি পরিত্যক্ত নাকি সংস্কার করে পুনর্বাসন করা হবে!
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর আগে ২ লক্ষ টাকার সংস্কারমূলক কাজ করা হলেও মেলেনি উপযুক্ত সুরাহা।
সর্বশেষ গতকাল (৪ সেপ্টেম্বর) রাত ১১ টায় শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া হলে। ফলে অন্ধকার হয়ে পড়ে হলটি। এসময় আতঙ্কিত হয়ে সেন্স হারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২২-২৩ বর্ষের শিক্ষার্থী রুনা লায়লা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য।
এ বিষয়ে কর্মরত ডাক্তার মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই হলে এমন শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। আতঙ্কিত হয়ে প্যানিক অ্যাটাক হয়েছিলো। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আবার তাকে হলে পাঠিয়েছি। এখানে ভয়ের কিছু নেই।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের হলে প্রায়দিনই শর্টসার্কিট হচ্ছে। এর আগে ঈদের ছুটির পর আগুন লাগলো তারপরেও প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। প্রতিদিন প্রশাসনের কাছে যাওয়া হচ্ছে তারপরেও তাদের কোনো রেসপন্স পাওয়া যাচ্ছে না। হলে এতগুলো মেয়ে থাকে যদি কারো কিছু হয়ে যায় তাহলে এর দায়ভার কে নিবে? টেকসই সমাধান চান তারা।
হলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের দাবি, যতদিন পর্যন্ত এই ইলেক্ট্রিসিটির সমাধান না হবে ততদিন তাদের জন্য ডরমিটরিতে যেনো থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। তারা তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন প্রশাসনের নিকট।
আবাসিক শিক্ষার্থী জাকিয়া রিতু মন্তব্য করেন, গত ৭ জুলাই আনুমানিক রাত ১০টার পর থেকে এই সমস্যা দেখা দেয়, এর পর লাইন ঠিক করার নামে ৩-৪ দিন ইলেকট্রিশিয়ানদের দিয়ে আসলে কী ঠিক করা হয় জানিনা আমারা... এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে গেলে ধোঁয়াশাপূর্ণ তথ্য দেয় কর্তৃপক্ষ। দুঃখজনক বিষয় হলো, এই রকম পরিস্থিতিতেও মেয়েদেরকে হলে থাকতে হবে, গেট খোলা যাবেনা। ৮জুলাই সকালে ফের একই কাণ্ড ঘটলে, মেয়েরা আনসার কে বলে ইলেকট্রিশিয়ানকে খবর দেন বললে, “উনি বলেন যে আমার কাজ এইটা না।” গত ২ সেপ্টেম্বর একই ঘটনা ঘটে। আবার আজকে আনুমানিক ১১.২০ এরকম আতঙ্কের কারণে এখন মেয়েরা সেন্সলেস হয়ে যাচ্ছে।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) এ. কে. এম শরীফ উদ্দীন বলেন, খালেদা জিয়া হলে আমাদের সার্বক্ষণিক ইলেক্ট্রিশিয়ান নিয়োজিত ছিলো। গতকাল মেয়েরা হঠাৎ হট্টগোল করলে ইলেক্ট্রিশিয়ান পুরো ৫ তলা বিল্ডিং খোঁজাখুঁজি করে কোথাও কোনো সমস্যা বের করতে পারেনি। আতঙ্কিত হয়ে মেয়েরাই সার্কিট ব্রেকার অফ করে দিয়েছিলো।
তিনি আরও বলেন, এইটা অনেক পুরোনো একটি হল। এখানে যে সমস্যা হচ্ছে তার সমাধানের জন্য নতুন করে পুরো বিল্ডিং আবার ওয়ারিং করতে হবে। তবে এখন সাময়িক সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের সার্বক্ষণিক একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান রাখা আছে হলে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. আ ব ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী বলেন, গতকাল রাত্রের ঘটনাটি আমি অবগত। আমাদের একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান ওখানে ছিলো এবং হাউজ টিউটর উপস্থিত ছিলো। তবে কোনো ত্রুটি খোঁজে পাওয়া যায়নি। ভয়ের থেকে মেয়েরা অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলো।
ওয়ারিং এর বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, প্রকৌশল অফিস আমাদেরকে হিসাব করে ৪৮ লক্ষ টাকা লাগবে বলে জানিয়েছে। এখন আগামী শনিবারের আগে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না, যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ আছে। তবে আমি হাউজ টিউটর, ডিনস কমিটি সহ চীফ ইঞ্জিনিয়ার এবং নিয়োজিত ইলেক্ট্রিশিয়ানের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছি। যেকোনো সমস্যা হলে সাথে সাথে যেনো সমাধান করা যায়।
নারী শিক্ষার্থীদেরকে ডরমিটরিতে স্থানান্তর করা যায় কি না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ডরমিটরিতে যে কয়টা রুম রয়েছে তাতে হয়তো ৪০-৫০ জন মেয়েকে আমরা জায়গা দিতে পারবো। সেখানকার সকল মেয়েকে এখানে রাখা কষ্টকর হয়ে যাবে। আমরা আলোচনা করছি কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়। আগামী কার্যদিবসে আশাকরি সিদ্ধান্ত নিতে পারবো।
মন্তব্য করুন: