প্রকাশিত:
৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:৪৫
রাজধানী বেইলী রোডে অবস্থিত সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়টিতে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। বৈষম্য বিরাধী ছাত্র জনতার সফল গণঅভ্যুত্থ্যানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পরই আত্মগোপনে চলে যায় স্কুল গভর্নিং কমিটির চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা রইসুল ইসলাম ময়না। কিন্তু স্কুলে রয়ে গেছে তার ব্যক্তিগত ও আওয়ামীলীগের দলীয় ক্যাডার খ্যাত চেয়ারম্যানের লুটপাটের দোসর শিক্ষক নামধারী কয়েকজন লেডি ক্যাডার। পারিবারিকভাইে যারা আওয়ামীগের রাজনীতিতে সক্রিয়।
সূত্র বলছে আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক পরিচয়ে স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে ক্ষমতায় জেকে বসা রইসুল ইসলাম ময়না দীর্ঘ সময় ধরে স্কুলটিকে নিজের ও পরিবারের লুন্ঠনের রাজ্যে পরিনত করেন। সে সময় প্রতিটি কাজের প্রকাশ্য সহযোগি হিসেবে প্রাপ্যতার বাইরে মাত্রাতিরিক্ত সুযোগ নিয়েছে এইসব লেডিক্যাডাররা। চেয়ারম্যান আত্মগোপনে যাওয়ার পর সম্রাজ্য রক্ষায় মরিয়া এসব লেডি ক্যাডাররা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, প্রকাশ্যে তারা স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করছে না। এমনি একটি ঘটনা ঘটে গত ২২ আগষ্ট। সে দিন স্কুলের সার্বিক শিক্ষাক্রম স্বাভাবিক করতে করনীয় নির্ধারণে স্কুলের সিনিয়র কিছু শিক্ষকের সমন্বয়ে একটি সভা আহবান করা হয়। সে সভা শুরুর প্রথম দিকেই স্কুলের সিনিয়র সহকারি শিক্ষক মোস্তফা কামালের উপর হামলা করে বসে লেডিক্যাডারদের গ্রুপটি।
এ হামলায় নেতৃত্ব দেন চেয়ারম্যানের দোসর ও আওয়ামীলীগের ক্যাডার খ্যাত, নাসরিন আক্তার সূমি । তার স্বামী নাসির উদ্দিন আওয়ামীলীগের সম্মুখ সারির নেতা যিনি কুমিল্লা মেঘনা উপজেলা থেকে আওয়ামীলীগের হয়ে উপজেলা নির্বাচন করেন, ছিলেন কুমিল্লা জেলা পরিষদের সদস্য। মীর লাইজু হোসেন, যিনি নিজেকে আওয়ামীলীগ নেতা আমীর হোসেন আমুর ভাতিজা বউ হিসেবে পরিচয় দিয়ে চলত। শ্রমিক লীগের নেতা, অনামিকা আশরাফ, নাসরিন সরকার, ফারহান আহমেদ, লিমা ইয়াসমিন,শায়লা শারমিন । এ ঘটনায় ৩১/০৮/২০২৪ রমনা থানায় একটি সাধারণ ডাইরি করেন মোস্তফা কামাল। সাধারণ ডাইরি নং ১৪৪৮। তারিখ ৩১/০৮/২০২৪।
জানা যায়, গর্ভনিং বডির চেয়ারম্যানের লাগামহীন দূর্নীতিকে নির্লজ্জভাবে সমর্থন দিয়ে গেছে স্কুলের দুই সহকারি প্রধান শিক্ষক বাংলা মিডিয়ামের দেলোয়ার হোসেন এবং ইংরেজি ভার্সনের শায়লা শারমিন (শ্যামা)। বাংলা মিডিয়ামের সহকারি শিক্ষক হয়েও তিনি চেয়ারম্যানের আর্শিবাদে হয়ে যান ইংলিশ ভার্ষনের সহকারি প্রধান শিক্ষক। বাংলা মাধ্যমের একজন সহকারি শিক্ষক কী ভাবে ইংলিশ ভার্সনের দায়িত্বে থাকতে পারেন এ প্রশ্নের জবাব মিলছে না।
জানা গেছে, সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগে তার বেলায় কোন নিয়মই মানা হয়নি। দুই সহকারি প্রধান শিক্ষকের স্কুল থেকে উত্তোলনের আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে। এরা প্রাপ্যতার কয়েকগুন বেশী আর্থিক অবৈধ সুযোগ নিয়েছেন। সেই সাথে চেয়ারম্যানকে সন্তুষ্টি রাখতে স্কুলে নিয়োগ দিয়ে কয়েকজন আয়াকে পাঠানো হয়েছে চেয়ারম্যানের বাসার কাজের লোক হিসেবে। এরা চাকুরি করেছে চেয়ারম্যানের বাসায় কিন্তু বেতন নিয়েছে স্কুল থেকে।
চেয়ারম্যানের গাড়ীর ড্রাইভারের বেতনও বছরের পর বছর দেয়া হয়েছে স্কুলের ফান্ড থেকে। সেই সাথে চেয়ারম্যানের ছেলেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেখিয়ে মাসের পর মাস বেতন দেয়া হয়েছে স্কুল ফান্ড থেকে। অথচ বছরের পর বছর অনেক শিক্ষককে রাখা হয়েছে সব সুবিধার বাইরে। চেয়ারম্যানকে দূর্নীতির সুযোগ করে দিয়ে স্কুলে নিয়োগ দেখিয়ে নিজেদের বাসায় কাজের মেয়ে হিসেবে বছরের পর বছর কাজ করিয়েছেন সহকারি দুই প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন ও শায়লা শারমিন (শ্যামা)। এর বাইরে স্কুল ফান্ডের বড় তসরুপের আরো ঘটনা রয়েছে গণমাধ্যমের হাতে।
এসব বিষয়ে জানতে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বললে তিনি জানান, অনিয়ম বা দূর্নীতি হয়নি এ কথা বলার সুযোগ নেই। যা হয়েছে সব রাজনৈতিক বিবেচনায় কমিটির মাধ্যমে হয়েছে। আমরা অসহায় ছিলাম। অনেক কিছু জেনেও বলতে পারিনাই। তিনি বলেন, চাকুরি জীবনের শেষ প্রান্তে আছি। এখন সম্মান নিয়ে বিদায় নিতে পারলেই খুশি থাকবো। স্কুলের কয়েকজন লেডি আওয়ামী ক্যাডার একজন শিক্ষকের উপর আক্রমন করেছে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জেনেছি। এখন কমিটি নেই। তাই কিছু করা যাচ্ছে না। এডহক কমিটি হওয়ার পর কমিটির সামনে সবকিছু তুলে ধরা হবে। তারা নিশ্চিতভাবেই সব ঘটনার ন্যায় বিচার করবেন বলে তিনি আশা করেন। তিনি বলেন, একজন শিক্ষক হিসেবে এটা বলতে দ্বিধা নেই যা ঘটেছে তা কোন ভাবেই কাঙ্খিত নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রমনা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মারুফ বলেন, সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অস্থিরতা সম্পর্কে আমাদের কাছে তথ্য আছে। বিভিন্ন শিক্ষক সোস্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানাতে চাচ্ছেন। আমরা এসব লক্ষ্য রাখছি। দূর্নীতি, স্বজন প্রীতি , গুন্ডামি, স্কুল আঙ্গিনায় অনাকাঙ্খিত কোন ঘটনাই তদন্তের বাইরে থাকবে না। তিনি এ বিষয়ে সঠিক ভেতরের তথ্য তুলে ধরতে গণমাধ্যমের প্রতি আহবান জানান। দূর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা অডিট বিভাগ বলতে পারবে। এমন হলে অবশ্যই তদন্ত হবে।
মন্তব্য করুন: