প্রকাশিত:
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:৫৬
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের আবাসিক সিট নিয়ে ইঙ্গিতপূর্বক ফেসবুক পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে সিনিয়র জুনিয়র তর্কাতর্কি। এক পর্যায়ে প্যানিক অ্যাটাক হয়ে জ্ঞান হারায় জুনিয়র শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২ টায় শেখ হাসিনা হলে এ ঘটনাটি ঘটে।
ভুক্তভোগী ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগের ২০-২১ শিক্ষাবর্ষের রাইসা আমিন লস্কর এবং অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের রুখসানা খাতুন ইতি। উভয়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইবিয়ান পরিবার’ নামক ফেসবুক গ্রুপে হলের সিট কেন্দ্রিক একটি স্ট্যাটাস দেন ইতি। তাতে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সিনিয়র ছাত্রীরা যেখানে সিঙ্গেল সিট পায়নি সেখানে ২০-২১ এর জুনিয়র ছাত্রী কিভাবে সিঙ্গেল সিটে অবস্থান করে এ নিয়ে প্রশ্ন করে সে। এখানে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ উপায়ে নিজের সিটকে বৈধ করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী রাইসার বান্ধবীরা পোস্টটি তাকে দেখায়। সে পোস্ট দেখে আত্মসম্মানের ভয়ে পোস্ট ডিলিট করাতে তার রুমে যায়। এসময় কথা বলার এক পর্যায়ে তর্কাতর্কি হলে ১৯-২০ এর শিক্ষার্থীরা ঘিরে ধরলে জ্ঞান হারায় ভুক্তভোগী রাইসা।
প্রত্যক্ষদর্শী ইতির রুমমেট জানান, ১৯-২০ এর ইতি আপু আমার রুমমেট। তো রাইসা যেহেতু আমার ফ্রেন্ড তাই রুমে এসে আমার বেডে বসে। পরে আপুকে জিজ্ঞেস করে এই পোস্ট আপনি কেন করলেন। তখন আপু বললো যে তিনি কারো নাম মেনশন করে পোস্ট করেননি। আর ও ঘুম থেকে উঠে সাথে সাথে পোস্ট দেখার পর স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি। তারপর চেঁচামেচি এবং কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। পরে হলের অনেকে মেয়েরাই এখানে চলে আসে। তারপর আমরা পরিবেশটা স্বাভাবিক করে তারপর কথাবার্তা বলতে চাইছিলাম। কিন্তু এখানে ১৯-২০ এর অনেক আপুরা এসেও নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলে। এরপর সে প্যানিক হয়ে যায়। তারপর তাকে নিয়ে হাসপাতালে আসলাম।
ভুক্তভোগী রাইসা বিচার চেয়ে বলেন, তারা চাইলে আমাদের ৫-৬ জনকে ডেকে বুঝাইতে পারতো। ফেসবুকে না জানিয়ে মিউচুয়াল করা যেত। এভাবে সবাইকে পাবলিকলি বললে কিভাবে নিবো? এই মেন্টাল টর্চারের বিচার চাই। এভাবে একটা মেয়ে হিসেবে আমি হলে সিকিউরড না। আমরা চাচ্ছিলাম ১০ টা দিন অপেক্ষা করি, প্রভোস্ট স্যার আসুক। কিন্তু আমাদেরকে কোনো কথা বলার সুযোগ দেয়নি। কারো বিরুদ্ধে পোস্ট বা কমেন্ট করছি এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। কারণ অফিসের সিদ্ধান্তকে আমরা সম্মান করি।
তিনি আরও বলেন, হলে প্রভোস্ট নাই, কোনো কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন না থাকায় ২ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে হলের ফ্লোরে ফ্লোরে গিয়ে সবার সামনে বলে ‘নেমে যাও’। তাদের কথা হলো হলের ২০-২১ শিক্ষাবর্ষের কোনো বৈধ সিট হতে পারে না। যদিও অফিশিয়ালি বৈধ করে ওটাও অবৈধ। এই যে ১০ দিন বাড়িয়ে একটা সময় বেঁধে দিয়েছে অফিস থেকে। তো ১০ দিন পর আমরা নেমে যেতাম। এই যে দিনের মধ্যে ২টা দিন গেছে। তারা পার্সোনালি আমাকে অ্যাটাক করছে, এত পরিমাণ মানসিক টর্চারে রাখছে, এমনিতে ডাবলিং সীট নাই যে মানসিক চাপে আছি। আমি আপুকে অনুরোধ করতে যাওয়ার পর আমার সাথে যে ব্যবহার করা হয়েছে তা মানসিক র্যাগিংয়ের সমান।
অভিযুক্ত রুখসানা ইতি বলেন, আমি পোস্টে কারো নাম মেনশন করিনি। তাহলে হঠাৎ করে সে একজন জুনিয়র হয়ে আমার রুমে তেড়ে আসে। আমাকে পোস্টের বিষয়ে নানাভাবে শাসায়। আমি তাকে মানসিকভাবে র্যাগিং করিনি বরং সে নিজে অন্য ব্লক থেকে আমার রুমে এসে আমাকে মানসিকভাবে র্যাগিং করে। যেটা সত্য সেটা আমি লিখছি আমি কারো নাম উল্লেখ করিনি। তার সাথে আমার কখনো সাক্ষাৎ ও হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমি তাকে বুঝাইছি যে তুমি শান্ত থাকো। যদি পোস্টে তুমি মনে করো যে তুমি-ই সে, তাহলে আমি পোস্ট ডিলিট করে দিবো। তারপর আমি পোস্ট ডিলিটও করে দিয়েছি। এমনকি তার বয়ফ্রেন্ডও আমাকে নানাভাবে প্রশ্ন করে এই বিষয়ে শাসায়। এখন সে যদি ভিক্টিম রুল প্লে করে এবং আমাকে ভিলেন সাজাতে চেষ্টা করে তাতে আমার যায় আসেনা।
দায়িত্বরত চিকিৎসক জিহান আফরিন বলেন, আমরা কোন চিকিৎসা দেওয়ার আগেই তার জ্ঞান ফিরে আসে। জিগ্যেস করে জানতে পেরেছি কোন একটি ফেসবুক পোস্টের সূত্র ধরে কথা বলতে গেলে পোস্টদাতার সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। এসময় সে অস্থির হয়ে প্যানিক অ্যাটাক করে অজ্ঞান হয়ে যায়। আপাতত ভয়ের কিছু নেই। সে সকালে খাওয়া দাওয়া করেনি বলে জানিয়েছে। আমরা তাকে বিশ্রাম নিতে বলেছি এবং প্যানিক হয় এরকম কোন পরিস্থিতিতে না যেতে পরামর্শ দিয়েছি।
মন্তব্য করুন: