প্রকাশিত:
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫১
কর্মকর্তাদের বিক্ষোভের মুখে নতুন নিযুক্ত ৫৯ জন ডিসির মধ্যে ৯ জনের নিয়োগ বাতিল করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বিতর্কিত এই কর্মকর্তারা ডিসি ফিটলিস্টে কিভাবে যুক্ত হলেন, তা নিয়ে প্রশাসন ও অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে চলছে পর্যালোচনা। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পদোন্নতি পাওয়া তিন সচিব মূল ভূমিকায় থেকে নতুন ফিটলিস্ট তৈরি করায় এই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মেধাবী ও বঞ্চিত কর্মকর্তাদের প্রাধান্য দিয়ে ডিসি ফিটলিস্ট তৈরির জন্য অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ সরকার আমলের ফিটলিস্ট বাতিল করে।
এরপর গত ২৪ আগস্ট থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম, ২৫তম ও ২৭তম ব্যাচের ৬১৭ জন উপসচিবের সাক্ষাৎকার নেয় ডিসি ফিটলিস্ট প্রণয়ন কমিটি। সাক্ষাৎকার শেষে নতুন ডিসি ফিটলিস্টে যুক্ত করা হয়েছে ১০৬ জন কর্মকর্তাকে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার আমলের সুবিধাভোগী কর্মকর্তার সংখ্যা ৮১। আর বঞ্চিত কর্মকর্তা রয়েছেন মাত্র ২৫ জন।
ফলে নতুন নিযুক্ত ডিসিদের বাদ দিয়ে আবারও নতুন ডিসি নিয়োগ করা হলে সুবিধাভোগীরাই ফের বেশি নিয়োগ পেতে পারেন। এ জন্য বঞ্চিত কর্মকর্তারা নতুন ফিটলিস্ট বাতিলের দাবি জানিয়ে বলেছেন, বঞ্চিত, মেধা ও যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন ডিসি নিয়োগ করতে হবে। কারণ নতুন নিযুক্ত ৫৯ জন ডিসির মধ্যে মাত্র একজন বঞ্চিত সুযোগ পেয়েছেন।
মূল ভূমিকায় আওয়ামী লীগ সরকার আমলের তিন সচিব
জানা যায়, নতুন ডিসি ফিটলিস্ট তৈরি করেছেন মন্ত্রিপরিষদসচিব মাহবুব হোসেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, ভূমিসচিব খলিলুর রহমান এবং জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
এর মধ্যে ফিটলিস্ট প্রণয়ন কমিটির সভাপতি ছিলেন মন্ত্রিপরিষদসচিব মাহবুব হোসেন, সদস্যসচিব ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। এই চারজন সচিবের মধ্যে প্রথম তিনজন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী ও সুবিধাভোগী সচিব ছিলেন।
বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাড়ে ১৫ বছর তাঁদের পদোন্নতি দেওয়া হয়নি, সচিবালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এখন শেখ হাসিনা আমলের ওই সচিবরাই ডিসি ফিটলিস্টের পরীক্ষায় ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁদের ফেল করে দিয়েছেন। এই প্রক্রিয়ায় মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনেরও অভিযোগ আছে।
জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগপ্রত্যাশী উপসচিবদের সমন্বয়ক নূরুল করিম ভূইয়া বলেন, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ডিসি নিয়েগের প্রজ্ঞাপন দুটি বাতিল করবেন বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। আমাদের দাবি ছিল, প্রশাসনের সর্বস্তরে বিগত দিনে যাঁরা সুবিধাভোগী, যাঁরা ছাত্র-জনতা হত্যার সঙ্গে জড়িত, খুন, লুটপাট ও রাষ্ট্র সংস্কারে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, ওই কর্তাদের বিদায় দিতে হবে।’
নতুন নিযুক্ত ৯ ডিসির নিয়োগ বাতিল
সদ্য নিয়োগ পাওয়ার পর আট জেলা প্রশাসকের (ডিসি) নিয়োগের আদেশ বাতিল করেছে সরকার। বুধবার(১১ সেপ্টেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। যে জেলার ডিসিদের নিয়োগ বাতিল হয়েছে সেগুলো হলো : লক্ষ্মীপুর, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, শরীয়তপুর, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী ও দিনাজপুর। এর আগে গত মঙ্গলবার সিলেট জেলার ডিসির নিয়োগ বাতিল করা হয়। আরো প্রায় ২৫ জন ডিসির নামে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান বলেন, নতুন নিয়োগ দেওয়া ডিসির মধ্যে ৫১ জন আপাতত দায়িত্ব পালন করবেন। বাকিরা যেখানে ছিলেন সেখানেই দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া চার জেলা প্রশাসককে রদবদল করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। মোখলেস উর রহমান বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োগ দেওয়ার জন্য যোগ্য কর্মকর্তা পাওয়া অনেক কঠিন।
এক সদস্যের তদন্ত কমিটি
এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদের নেতৃত্বে এক সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
বুধবার(১১ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জ্যেষ্ঠ সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ বলেছেন, সচিবালয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) হতে ইচ্ছুকদের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি শোভন হয়নি। কম করে হলেও এক হাজার ডেপুটি সেক্রেটারি থেকে মাত্র ৬৪ জন ডিসি হন। বর্তমান সরকার পাঁচজন বাদে ৫৯ জনকে পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। রেকর্ড আছে, একজন ডিসিকে দ্বিতীয় দিনেই প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাঁদের সবাই স্বৈরাচার সরকারের উপকারভোগী ছিলেন।
মন্তব্য করুন: