প্রকাশিত:
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৩
দেশ পুনর্গঠন, রাষ্ট্রসংস্কার, ঐক্য প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও ক্যাম্পাস দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের সাথে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত ১০ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল টিভি রুমে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা বিভাগীয় ছাত্র জনতা মৈত্রী সফরের প্রতিনিধি মোঃ ওয়াহিদ উজ্জামান, আকরাম হোসাইন রাজু, আশরেফা খাতুন, আবু বকর খান, ফারহানা ফারিনা, মইনুল ইসলাম, বিশ্বজিৎ দত্ত, তৌহিদ ইসলাম শুভ, মোঃ বাবু খান প্রমুখ সমন্বয়ক উপস্থিত ছিলেন।
কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক প্রতিনিধি দল শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মতামত নেন এবং নানান প্রশ্নের উত্তর দেন। এভাবে কয়েকঘণ্টা জুড়ে ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব। এসময় বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের ব্যাপারে আমরা ঐক্যমত হবো। রাষ্ট্রের কিছু কিছু সংস্কার খুবই প্রয়োজন। রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য আমরা জনগণ ও শিক্ষার্থীদের কাছে এসেছি। আপনাদের কী কী পরামর্শ, আপনারা কী কী বলতে চান, সেটা শোনার জন্য, জানার জন্য এসেছি। আমরা আমাদের বক্তব্য শোনাতে আসিনি। হয়ত আপনাদের কিছু প্রশ্নের উত্তর আমরা দিয়ে যাবো।
শিক্ষার্থী: আপনারা কেমন আগামীর ভবিষ্যৎ চাচ্ছেন?
সমন্বয়ক: কেউ যদি প্রশ্ন করতো আমরা এখানে কেন আসলাম, তাহলে খুশি হতাম। আমরা কেমন চাচ্ছি তার থেকে বড় কথা আপনারা কেমন চাচ্ছেন। শুরু থেকে শিক্ষার্থী ও জনমতের ভিত্তিতে আমরা আন্দোলন করে আসছি। আগামীর বাংলাদেশ হবে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা। আপনি আমি স্বাধীনভাবে প্রশ্ন করতে পারতেছি এবং বাক স্বাধীনতা ফিরে পাচ্ছি সেটাই আমাদের চাওয়া। যে বাংলাদেশে ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত কোনো ধরনের বৈষম্যের শিকার হতে না হয় সেরকম দেশ সবার প্রত্যাশা।
শিক্ষার্থী: ছাত্র রাজনীতি নিয়ে আপনাদের বার্তা কী?
সমন্বয়ক: লেজুড়বৃত্তিক ও দখলদারিত্ব ছাত্র রাজনীতি থেকে সরে এসে সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি করা যেতে পারে। যদি কোনো দিন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দল গঠন করেও থাকে তাহলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে হবে না। রাজনীতির বিরোধিতা করা আর অপরাজনীতির বিরোধিতা করা পুরোপুরি সাংঘর্ষিক বিষয়। শুধু ছাত্রলীগ কেন? অন্য রাজনৈতিক দলগুলো যদি দখলদারিত্বের রাজনীতি করে আমরা সবাই মিলে শিক্ষার্থীরা প্রতিহত করবো। আমরা কেউ চায় না যে ছাত্রলীগের মতো আরেকটা দলেট জন্ম নিক। ছাত্রলীগ নামটাই হচ্ছে অত্যাচারের বিকল্প। সচেতন ও একতাবদ্ধ থাকলে মনে হয় না আর স্বৈরাচার জন্ম নিতে পারবে। কেউ যদি রাজনীতি করে তার ব্যক্তি অধিকার হরণ করা আমাদের দায়িত্ব না।
শিক্ষার্থী: বিভাগীয় সফর ক্ষেত্রে মূলত আপনাদের ফান্ডিং আসে কোথায় থেকে?
সমন্বয়ক: আসলে দেখেন, আমরা রোডম্যাপিং করে ছাত্র মৈত্রী সফর দিচ্ছি। আপনাদের মতামতগুলো শুনার জন্য এসেছি। আমাদের ফান্ডিং মূলত কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীদের থেকে নেওয়া। এছাড়া নির্দিষ্ট ফান্ড সোর্স নাই। এই যে গাড়িটা দেখে মনে হতে পারে কোথায় থেকে পেলাম, বিশ্বাস করেন আমাদের বিলাসবহুল জীবন যাপন করার খায়েশ নেই। গাড়িটা আমাদের না। এক শুভাকাঙ্ক্ষী আমাদের যাতায়াতের কথা বিবেচনা করে সহযোগিতা করেছে। কোনো জায়গায় যাওয়ার প্লান নিলে অনেকে আতিথেয়তা করার চেষ্টা করে, সেই মূহুর্তে না বলা যায়? এই যে কুষ্টিয়া আসলাম, পরিচিত অনেকে খাওয়া দাওয়ার বিষয়টা ফ্রিতে আপ্যায়ন করলো। তবে এক শিক্ষার্থী পরামর্শ দিলেন যে জনস্বার্থে যত্রতত্র মানুষের কাছ থেকে হেল্প না নেওয়ার।
শিক্ষার্থী: ধরেন, যারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছে কিন্তু আগে ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত ছিল তাদের ব্যাপারে আপনাদের পদক্ষেপ কী?
সমন্বয়ক: প্রথমত ছাত্রলীগের সাথে আমাদের আপোষ নাই। যদি একজন ছাত্রলীগ কর্মী শুরু থেকেই আন্দোলনে অংশ নেওয়া মানে হলো অতীতের জন্য সে তওবা করছে। এই স্বার্থে আপনারা বিবেচনায় নিতে পারেন। আপনারা কতটুকু নিরাপদ সেটা ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি নিজেরাই ভালো বুঝেন। সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত যে কোনো ব্যাক্তির সাথে সহিংসতায় না জড়িয়ে ক্যাম্পাস পরিবেশ স্বাভাবিক করা। বর্তমান যত ক্যূ করুক কিন্তু পুনরায় তারা ক্যাম্পাসে দখলদারিত্বে যাওয়া সম্ভব না।
শিক্ষার্থী: আমরা যতটুকু জানি প্রধান উপদেষ্টার আমেরিকার প্রতি একটু টান আছে। আমরা ভারত বিদ্বেষী হয়ে আমেরিকার প্রতি ঝোঁকে গেলে আপনাদের করণীয় কী?
সমন্বয়ক: দেখেন, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সেটা ভারত হোক কিংবা আমেরিকা হোক, আমরা ছাত্র জনতা শক্ত হাতে প্রতিহত করবো। ভারতকে হটিয়ে আমরা আমেরিকাকে প্রশ্রয় দিতে গেলে শেখ হাসিনার মতো বর্তমান সরকারও পতন হবে ছাত্র জনতার কাছে। এখানে এমন সুযোগ নাই যে নির্দিষ্ট একটা দেশের হয়ে কাজ করবে।
শিক্ষার্থী: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিয়ে অস্তিত্ব সংকটে আমরা, এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যায় কিনা?
সমন্বয়ক: এই বিষয়ে আমাদের আগে ধারণা ছিল না। কুষ্টিয়া শহরে একজন প্রশ্ন করেছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে আরেকটা আছে, তো আপনারা আগে কেন ইউজিসিকে জানাননি? প্রশাসন আসলে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করবেন। আমরাও কেন্দ্র থেকে যতটুকু সহযোগিতা করা লাগে চেষ্টা করবো।
শিক্ষার্থী: এনটিআরসিএ কর্তৃক শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় লেকচারার (প্রভাষক) হিসেবে নিয়োগে ইবির ধর্মতত্ত্ব অনুষদের শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর প্রয়োজন কেন? অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজন হয় না। বৈষম্যটা কি দূর করা যাবে না?
সমন্বয়ক: আমার যতটুকু ধারণা রয়েছে স্পেশালাইজড সাবজেক্টগুলোর ক্ষেত্রে এমন কন্ডিশন দেয়া হয়। আল ফিকহ, দাওয়াহ এই সাবজেক্টগুলো তো স্পেশাল মনে হচ্ছে। আপনাদের ডিন স্যারের মাধ্যমে অবহিত করুন। (শিক্ষার্থীদের দাবি আরবি, ইসলামিক স্টাডিজ এগুলো তো ঢাবি, রাবি, চবি তেও আছে, কিন্তু তাদের প্রয়োজন হয় না। ইবির বেলায় বৈষম্য হচ্ছে)। আমরাও কথা বলে দেখবো। সেইম সাবজেক্ট পড়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় সুযোগ পেলে আপনারা কেন বৈষম্যের শিকার হবেন?
শিক্ষার্থী: অনেকে আমাদের আন্দোলন নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করতেছে, আমরা ক্যাম্পাসে আন্দোলন করিনি এমন প্রসঙ্গে। তাদের ব্যাপারে আপনাদের সিদ্ধান্ত কী?
সমন্বয়ক: আন্দোলন নিয়ে যারা প্রশ্নবিদ্ধ করে তাদের প্রতিহত করুন। যেটা পরিস্থিতি পরিবেশ বুঝে আপনারা সিদ্ধান্ত নিবেন। আমরা যেভাবে ক্লাসের সহপাঠীদের বয়কট করেছি সেভাবে। আবাসিক হলে যারা থাকেন তারাই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
শিক্ষার্থী: চব্বিশের শহিদদেরকে স্মরণে রাখতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কিনা?
সমন্বয়ক: সরকার তো অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য কোটি কোটি টাকা আনুমানিক বাজেট ধরলো। এক্ষেত্রে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন আপত্তি করে আসছেন। অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে এত টাকা খরচের কোনো মানে হয় না। কিন্তু এই খরচের সাথে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে হচ্ছে বলে জানা গেছে। এদিকে শিক্ষার্থীদের স্মরণে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সকল শহিদদের বায়োডাটা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থী: ভিসি নিয়োগ না হওয়ায় সব কিছু স্থবির ক্যাম্পাস, এক্ষেত্রে আপনাদের কোনো পদক্ষেপ আছে কিনা?
সমন্বয়ক: ভিসি প্রয়োগের জন্য আপনাদের নিজেদের এগিয়ে যাওয়া লাগবে। আপনারা আদায় করে নেন। কোন ধরনের ভিসি পছন্দ তা শিক্ষার্থীদের আদায় করে নেওয়ার সময়। আমাদের অনেকগুলো অপশন ছিল ঢাবিতে, আমাদের পছন্দ মতো নিয়ে নিলাম। তবে সামগ্রিকভাবে দ্রুত ভিসি নিয়োগের মাধ্যমে পড়াশোনা স্বাভাবিক হোক সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
মন্তব্য করুন: