প্রকাশিত:
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৪২
ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সৃষ্ট সাম্প্রতিক বন্যায় রেলের বেশ কিছু অংশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষত মেরামত করে রেল চলাচলে উপযোগী করতে অন্তত এক বছর লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে দেখা গেছে, রেলের পূর্বাঞ্চলে বেশি ক্ষতি হয়েছে। সেই তুলনায় পশিমাঞ্চলে ক্ষতির পরিমাণ কম।
রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের অধীনে থাকা বিভিন্ন রেললাইন, রেল সেতু, সংকেত ব্যবস্থা ও স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এতে মোট আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৪৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি ৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। পশ্চিমাঞ্চলে ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
আর পূর্বাঞ্চলে সংকেত ব্যবস্থায় এক কোটি দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। গত রবিবার রেলওয়ের ক্ষয়ক্ষতিসংক্রান্ত প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করা হয়। মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী স্বাক্ষর করেছেন।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগের সীতাকুণ্ডু থেকে ফেনী অংশে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব অঞ্চলে রেললাইনের নিচে পাথর নেই বললেই চলে। রেল সেতু বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিরসরাই এলাকায়। অনেক রেলগেটের ঘর ভেঙে গেছে। রেললাইন থেকে পাথর ও মাটি সরে গেছে।
বিপরীতে লাইনের ওপর বালু পড়ে আছে। সেতুর কাঠের স্লিপার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, রেলের এসব ক্ষয়ক্ষতি পুরোপুরি মেরামত করতে এক বছরের মতো সময় লাগতে পারে। মেরামতে কেমন খরচ হবে সেটা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বন্যায় রেললাইনের বেশির ভাগ পাথর সরে গেছে। পাথরেই বেশি খরচ হবে। টাকা পেলেই কাজ শুরু করা যাবে। তবে এর জন্য ট্রেন চলাচল থেমে নেই। ঢাকা বিভাগের অধীনে টঙ্গী-আখাউড়া অংশে আশুগঞ্জ থেকে তালশহর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে পাঘাচং, পাঘাচং থেকে আখাউড়ায় সেতু, বাঁধ ও রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এতে ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। আখাউড়া-শায়েস্তাগঞ্জ অংশে ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের সীতাকুণ্ডু-ফেনী অংশের অবস্থা নাজুক। এই অংশে ক্ষতি হয়েছে সাড়ে তিন কোটি টাকার। এই এলাকায় রেললাইনের পাথর সরে গেছে। বাঁধের শক্ত মাটি ক্ষয় হয়েছে। কিছু জায়গায় বাঁধে নতুন দেয়াল তৈরির প্রয়োজন হতে পারে। এই সেকশনের মুহুরীগঞ্জ থেকে ফাজিলপুর অংশে মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং চারটি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চট্টগ্রামের ষোলশহর থেকে নাজিরহাট পর্যন্ত অংশে তিন কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। এই অংশের ঝাউতলা এলাকায় রেললাইনের নিরাপত্তা দেয়াল ভেঙে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে এটি নির্মাণ করা দরকার। এ ছাড়া ঝাউতলা এলাকায় রেললাইনের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। নোয়াখালী অংশে বেশির ভাগ রেললাইনেই পর্যাপ্ত পাথর নেই। নোয়াখালী, মাইজদীকোর্ট, চৌমুহনী, বজরা, সোনাইমুড়ী, নাথেরপেটুয়া, খিলা ও দৌলতগঞ্জ স্টেশনগুলোয় লাইনের কাঠের স্লিপার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লাকসাম লাইনের ওপর বালি ও মাটিতে ভরে গেছে। পাথর সরে গেছে।
আগে থেকেই দেশের বেশির ভাগ রেললাইনের অবস্থা ভালো না। এরপর সাম্প্রতিক বন্যায় লাইনগুলোতে ঝুঁকি আরো বেড়েছে। ফলে অনেক জায়গায় গতি কমিয়ে ট্রেন চালানো হচ্ছে।
মন্তব্য করুন: