প্রকাশিত:
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:৩৪
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শহিদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অর্থ সহযোগিতা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মন্দির পরিদর্শন এবং সবশেষ ভারতের পানি আগ্রাসনের পর বানবাসী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে জামায়াত আমিরের বক্তব্য এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় উপহার সামগ্রী পৌঁছিয়ে জয় করে নিয়েছেন নেটিজেনদের। প্রকাশ্যে এ ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম গত ১৬ বছরের প্রেক্ষাপটে নতুন অভিজ্ঞতা। সব কিছু মিলিয়ে এখন আলোচনায় জামায়াতের আগামী দিনের রাজনীতি কোন পথে? এসব বিষয় নিয়ে দৈনিক নাগরিক সংবাদ কথা বলেছে জামায়াত এর তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীর সঙ্গে।
মোঃ নাঈম ইসলাম, গুরুদাসপুর (নাটোর): গুরুদাসপুর উপজেলা জামায়াতে ইসলাম এর আমির মোঃ আঃ খালেক মোল্লা বলেন, বিগত ১৭ বছর বাংলাদেশের মানুষের উপর যে জগদ্দল পাথর চেপেছিল তা আল্লাহর মেহেরবাণীতে সরে গেছে। বর্তমান আমাদের চাওয়া দেশের জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। সকল স্তরের মানুষের মতামতকে প্যাধান্য দিয়ে গনতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। সময়ের প্রক্ষাপট অবশ্যই তার দাবি রাখে, বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ এখানে আল্লাহর আইন দ্বারা শাষন ব্যবস্থা পরিচালিত হবে এইটাই চাওয়া। বিগত দিনে আমরা যেমন ইসলামের দাওয়াত দিয়েছি সেভাবেই আগামীতে কাজ করবো। নতুন জেনারেশন এর সাথে আমাদের আদর্শিক ঐক্য আছে বিধায় তারা আমাদের সমর্থন করবে বলে আশাবাদি। দলের প্রতি আকৃষ্ট করতে নতুন নির্দেশনা না থাকলেও পুরোনো নির্দেশনার ভিত্তিতে আমরা কাজ করছি তবে একক কোন জেনারেশন নয় বরং সকল মানুষকে আকৃষ্ট করতে কাজ করছি। রাজনীতিতে মেধাবিদের আগমনের মাধ্যমেই লুটপাট, চাঁদাবাজি, দুর্নিতি বন্ধ করা সম্ভব। আগামী দিনে শিক্ষার মানউন্নয়ন, সম্পদের সুষম বন্টন, যোগাযোগ বব্যবস্থার উন্নয়ন, ধর্মীয় স্বাধীনতা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ্।
পৌর জামাতের সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, আগামীতে এমন কেউ একক অধিপত্য বিস্তার করতে দেওয়া হবেনা। দল মত নির্বিশেষে সকলের ন্যায্য দাবী পূরন করা হবে। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ইসলামীক সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মান করা। কোরআনের আলোকে শাষন ব্যাবস্থা করা, যেখানে দুনিয়ার কোন চাওয়া পাওয়া থাকবেনা, ক্ষমতার লোভ থাকবেনা। নতুন জেনারেশন অবশ্যই আমাদের সাথে আছে ও তারা আমাদের বিগত কার্যক্রমে উৎসাহিত হয়ে আমাদের সমর্থন দিয়েছে। তাদেরকে আকৃষ্ট করতে কেন্দ্রের কোন নতুন নির্দেশনা না থাকলেও সে প্রক্রিয়া চলমান। আমাদের ভিসন ২০৪৮ যদি দেখেন তাহলে বুঝবেন সেগুলো মেধাবী ও নতুন প্রজন্মকে নিয়েই তৈরি করা হয়েছে। আমরা আগামীতে দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাব। মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিনোদন নিশ্চিৎ করতে সচেষ্ট আছি।
গুরুদাসপুর উপজেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি, মোঃ আব্দুল্লাহ কাফি বলেন, সাধারন শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামিক শিক্ষা বা ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করে যোগ্য দেশপ্রেমিক তৈরি করাই আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। নতুন পুরাতন নয়, আমাদের উদ্দেশ্য একটাই তা হল ইসলামীক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। সময়ের সাথে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন চলমান থাকবে। আগামিতে আমরা সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করব। নতুন জেনারেশন আমাদের সমর্থন করবে কারন আমাদের বিগত বছরগুলোর কার্যক্রম তাদের আমাদের প্রতি আকৃষ্ট করেছে, এখানে কেন্দ্রের কোন নির্দেশনা নেই। আগামীদিনে মেধাবীরা রাজনীতীতে আসবে কারন তারাই পারবে দেশে সুশাসন প্রতিষ্টা করতে, তারা সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
হারুন অর রশিদ, সোনাতলা (বগুড়া): সোনাতলা উপজেলা শাখার শিবির সভাপতি মোঃ আলবার আকন্দ বলেন, আগামী দিনের প্রত্যাশিত সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য একদল সৎ, দক্ষ, দেশপ্রেমিক নাগরিক প্রয়োজন। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এ দেশের তরুণ প্রজন্মকে আল্লাহর সন্তুষ্টির উপযোগী করে গড়ে তুলতে চায়। ছাত্রশিবির এমন একটি ছাত্র সংগঠন যারা তাদের কর্মীদেরকে সমাজের সকল পঙ্কিলতা ও কলূষতা থেকে মুক্ত করে তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। যা দলমত ছাপিয়ে ভিন্ন আদর্শের ব্যক্তিদের কাছেও প্রশংশিত হয়েছে। এছাড়াও জাতীয় জীবনে নেতৃত্বের ঘাটতি পূরণে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির অনবদ্য ভূমিকা রেখে চলেছে।
মোঃ রায়হান আলী, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ): শাহজাদপুর উপজেলা জামায়াত আমির অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, আগামী দিনে যেন মানুষ সৎ এবং যোগ্য নেতৃত্ব পায় এটাই আমাদের প্রত্যাশা। যেন সে সন্ত্রাস চাঁদাবাজ দুর্নীতিমুক্ত একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আমাদের রাজনীতির মূলনীতি একটাই সেটা হলো আল্লাহর দেখানো পথ অনুসারে চলা। সেই নীতিতেই আমরা ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। নতুন জেনারেশন বৈষম্য বিরোধী একটি সমাজ চায় আমরাও তাদের সাথে একমত। আমরাও চাই আমাদের দেশে কোন প্রকার বৈষম্য না থাকুক। এলাকায় আগামী দিনে যেন মাদক না থাকে, দুর্নীতি না থাকে, কোন প্রকার চাঁদাবাজি হয়রানি মূলক কোন কর্মকা- যেন না হয় এটাই আমাদের প্রত্যাশা। মেধাশূন্য রাজনীতি কখনো হতে পারে না আগামীতে মেধাবীরাই রাজনীতিতে আসবে। তারাই দেশকে বিশ্ব দরবারে সুন্দরভাবে তুলে ধরবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আমরা সব সময়ই চাই সমাজ থেকে অন্যায় জুলুম পাপাচার এগুলো যেন দূর হয়। সেই সাথে যেন একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা হয়।
শাহজাদপুর জামায়াত রোকন সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আগামীতে সুষ্ঠু এবং সুন্দর রাজনীতি করার জন্য আশা রাখি। আমরা সব সময়ই ইসলামের আলোকে রাজনীতি করে আসছি এবং আগামীতেও ইসলামকে অনুসরণ করেই রাজনীতি করবো। অবশ্যই আগামী রাজনীতিতে নতুন জেনারেশন প্রয়োজন, কেননা তারাই গরবে আগামী দিনের সুন্দর এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ। এলাকায় আগামীতে যেন সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি বা দুর্নীতি মুক্ত হয় এবং সেইসাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন উন্নত হয় সেদিকে কাজ করা উচিত বলে আমি মনে করি। নতুন জেনারেশনই আমাদের সুন্দর একটি রাষ্ট্র এনে দিয়েছে, অবশ্যই তাদের সাথে নিয়ে কাজ করতে চাই। আমি মনে করি মেধাবীদের রাজনীতিতে আসা উচিত যার মাধ্যমে আগামী দিনের মেধার ভিত্তিতে সুন্দর বাংলাদেশ গঠন করা যাবে ইনশাআল্লাহ।
শাহজাদপুর উপজেলা শিবির সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ২য় বার স্বাধীন হওয়ার মধ্য দিয়ে নতুন যাত্রা শুরু করে। পতিত সরকার সেক্টরে দূর্নীতি করার মাধ্যম মানুষের জীবন কে অতিষ্ঠ করে ফেলেছিলো। তারা শিক্ষা ব্যবস্থা, অর্থ ব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থা কে ধ্বংস করেছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন মেধাবী ছাত্র ওয়ালিউল্লাহ, আল মুকাদ্দাস কে গুম করেছে। তারা ২০০৬ সালে পল্টন ময়দানে জাময়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের ওপর লগি বৈঠার তান্ডব চালিয়ে ছিলো। তারা পিলখানায় হত্যা, শাপলা চত্ত্বরে হত্যা, জামায়াত নেতৃবৃন্দ কে অন্যায় ভাবে ফাঁসি দেওয়া এবং তিন সেশনে ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির সাথে তামাশা করেছে। সবশেষে ২৪ এর গণহত্যার মাধ্যমে তারা হত্যাকারী হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে চিহ্নিত হয়েছে। শহীদ আবু সাঈদ শহীদ মুগ্ধ,শহীদ রায়হান, শহীদ আব্দুল আলীমের জীবনের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। এজন্য আমি মনে করি তাদের যে স্বপ্ন ছিল তা যদি বাস্তবায়ন করতে না পারি তাহলে তাদের রক্তের সাথে বেইমানি করা হবে।
শাহাদৎ হোসেন, তিতাস (কুমিল্লা) : তিতাস উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর ইঞ্জিনিয়ার শামীম সরকার বিজ্ঞ বলেন, আমরা আমাদের স্বাভাবিক কাজ আগের মতো চালিয়ে যাব পাশাপাশি আমরা আমাদের অতীতের ভুল ত্রুটি শুধরিয়ে সামনে এগিয়ে যাব। আমরা আদর্শিক রাজনীতি করি, আমাদের আদর্শে কোন পরিবর্তন নেই তবে আমরা সময়ে সময়ে কর্মপদ্ধতি ও কর্মকৌশল পরিবর্তন করে থাকি। জেনারেশন- জি এবং আমাদের মাঝে তেমন তফাত আছে বলে আমি মনে করি নাহ। তারাও সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কাজ করে আমরাও করি। তাই মনে করি তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আমাদের সাথে মিল রয়েছে। তাই দেশ গঠনে তারা আমাদের সমর্থ করবে বলে বিশ্বাস করি। যোগ্য নেতৃত্ব ও উদার রাজনীতি হওয়া উচিৎ আর মেধাবীরা আসলেই তা হবে অন্যথায় তা হবে না। তাই মেধাবীদের রাজনীতিতে এ কারণে আসা উচিত।
তিতাস উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি সালাউদ্দিন সরকার বলেন, আমাদের ভাবনা সব সময়ই একই তা ১৭ বছর আগে অথবা পরে। আমরা মূলত একটি কল্যাণ ও ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমাদের আদর্শ ইসলাম এবং আমরা ইসলামের মূলনীতির আলোকেই রাজনীতি করে থাকে এতে পরিবর্তনের কিছু নেই। তবে কর্মপন্থায় কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। জেনারেশন- জি এবং আমাদের মাঝে একটি মিল আছে আর তাহলে স্বৈরাচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান ও প্রতিবাদ। তাই আমরা মনে করি তারা আমাদেরকে এই কারণে ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আমাদেরকে সমর্থন করবে। আমরা জেনারেল - জি এর আহত ও নিহত পরিবারের সকলের সাথে যোগাযোগ করছি তাদেরকে সহযোগিতা করছি এবং তাদের পরিবারের দায়িত্ব নিচ্ছি। প্রথমত আমরা সহাবস্থানে বিশ্বাসী আমরা সবার অংশগ্রহণ মূলক রাজনীতি চাই। ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করতে চাই। রাজনৈতিক সিন্ডিকেট বন্ধ করতে চাই। আগামী দিনের রাজনীতি মেধাবীদের হওয়া উচিত। মেধাবীদের ছাড়া রাজনীতি অনেকটাই শূন্য। এর জন্য তাদের রাজনীতিতে আসা উচিত।
তিতাস উপজেলার বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোহাম্মদ জাহিদ বলেন, গত ১৭ বছর না, যদি বলা হয় ২৭ বছর পর তা হলেও আমরা আমরা বলবো আমরা গতানুগতিক রাজনীতি করি না। আমরা ইসলামী আন্দোলন করি যার মাধ্যমে একটি ছাত্রকে কিভাবে আল্লাহ মুখি করবো দিনের জন্য একজন দায়ী বানাবো সেটা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করি। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতি আগেও যেমন ছিল এখনো ঠিক তেমনি থাকবে। আমরা সমর্থন পাওয়ার জন্য কাজ করি না। আমরা চাই আমাদের যুব সমাজ কিভাবে ইসলামী আন্দোলনের আওতায় আসবে আমরা সেটা চাই।
একটি সুন্দর সমাজের স্বপ্ন যদি আমরা দেখি। তাহলে তা বাস্তবায়ন করার জন্য আমাদের বেশি প্রয়োজন হলো মেধাবী ছাত্র এবং মেধাবী জনতা। যাদের হাত ধরে যুগ যুগান্তর ইসলামী আন্দোলন বা ইসলামের আলো সমাজে বাস্তবায়িত হবে। আর একজন মেধাবী মানুষই পারে একটি যোগ্য ভাবে কাজ করতে। তাই আমাদের মেধাবী সমাজকে সবার আগে এগিয়ে আসা উচিত। যদি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে তাহলে সর্বপ্রথম আমরা যে বিষয়টা দিকের লক্ষ্য করবে বলে মনে হয় সেটা হচ্ছে সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন করে সুন্দর রাষ্ট্র গঠন।
মন্তব্য করুন: