প্রকাশিত:
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:৩৯
আগামী ডিসেম্বরে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ ও আধুনিক যমুনা রেলওয়ে সেতু। সেতুর নির্মাণ সহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার কাজ একেবারেই শেষ প্রান্তে রয়েছে। এ সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান । সম্প্রতি প্রকল্প পরিচালকের কার্যলয়ে এক একান্ত আলাপচারিতায় গণমাধ্যম কর্মিদের সাথে তিনি এমন আশাবাদের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পরিবেশ ও যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক ইতিবাচক বার্তা নিয়ে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ ও আধুনিক রেলওয়ে সেতু । এ সেতুর উদ্বোধনের মুহুর্ত থেকে দেশে শুধূ যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তনই হবে না, তা জাতীয় অর্থনীতি বিকাশে ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যাপক ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে শুরু করবে। সেতুটি উদ্বোধনের মুহূর্ত থেকে দেশের রেল যোযোগের গতি বাড়বে।সেই সাথে পরিবেশের উপর এর ব্যাপক ও ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করবে।
তিনি জানান, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু রেলসেতুতে যে গতিতে ট্রেন চলছে তা হচ্ছে ২০ কিলোমিটার প্রতিঘন্টা গতিতে। ব্রিজ ও দু’স্টেশনের মাঝের দূরত্ব পার হতে একটি ট্রেনের সময় যাচ্ছে কমপক্ষে ৪৫ মিনিট। সেতুতে এখন এই ৪৫ মিনিট সময়ে একটি ট্রেনকে পার করানো যাচ্ছে। এ সময়ে অন্য ট্রেনগুলোকে কোন না কোন পর্যায়ে অপেক্ষমান রাখতে হচ্ছে। এতে সময় এবং জ্বালানী ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। নব নির্মিত সেতুটি উদ্বোধনের পর সেতুসহ দু পাশের দূরত্ব মোট ১৩ কিলোমিটার পার হবে মাত্র ৫ মিনিটে।
তিনি জানান, এ সেতু উদ্বোধনের দিন থেকে দিনে ৮৮ টি ট্রেন চালানো সম্ভব হবে। এতে বাড়বে ট্রেনে যাত্রী ও পণ্য পরিবহণের ব্যাপক সুবিধা। গতি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁচবে সময়। সাশ্রয় হবে জ্বালানী ও অর্থ। তিনি জানান, একটি কন্টেইনার বহনে এখন আমাদের যে খরচ করতে হচ্ছে সেই এখই খরচে একটি ট্রেন ৪৫টি কন্টেইনার বহনে সক্ষম হবে। এতে আামদের জ্বালানী খরচ বাঁচবে কম পক্ষে ৪৫শতাংশ। ব্যাপক এ জ্বালানী সাশ্রয় শুধূ আমাদের অর্থনীতির জন্য সুখবর নয়। এটি আমাদের পরিবেশ দূষনের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করবে। তিনি জানান, আমাদের আমদানী বাণিজ্যের বড় একটি অংশ ভারতের সাথে স্থল ভাগ দিয়ে হয়ে থাকে। এ ব্রিজটি সেই ব্যাপক বাণিজ্যে বহুগুন ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে শুরু করবে। কারণ এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে যে কন্টেইনার পোর্টগুলোতে জমা হচ্ছে তার মাত্র ৩ শতাংশ কন্টেনার পরিবহণ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
তিনি আরো জানান, এ সেতু চালু হলে পন্য ও যাত্রী বহনে রোড ট্রান্সপোর্টের উপর চাপ কমবে। সেই সাথে কমে আসবে রোড এক্সিডিডেন্ট। সব মিলে এ সেতুটি বাংলাদেশের জন্য সার্বিক ভাবে সুসংবাদ হয়ে উঠবে।
তিনি জানান, নদীর বুকে সম্পূর্ণ দৃশ্যমান হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। নির্মাণাধীন সেতুটির সব কটি স্প্যান বসানো হয়েছে। অ্যালাইনমেন্ট ও লেভেল ঠিক করার কাজও শেষ দিকে। বিভিন্ন ড্রেনের কাজ ও কালভার্টগুলোর কাজ শেষ হয়ে গেছে। দুই পাশের স্টেশন বিল্ডিংয়ের কাজ, প্ল্যাটফর্ম স্থাপনের কাজ ও ট্র্যাকের কাজও শেষ ।
জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে সেতুটি নির্মিত হচ্ছে। এর নির্মাণ ব্যয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বরে সেতুটি নির্মাণকাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই রেলসেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের মার্চ মাসে। ডব্লিউডি-১ ও ডব্লিউডি-২ নামে দুটি প্যাকেজে জাপানি পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ডব্লিউডি-১ প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করছে জাপানি আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওবাইসি, টোআ করপোরেশন ও জেইসি (ওটিজে) জয়েন্ট ভেঞ্চার।
ডব্লিউডি-২ প্যাকেজটি বাস্তবায়নে রয়েছে জাপানের আইএইচআই ও এসএমসিসি জয়েন্ট ভেঞ্চার। এ ছাড়া সেতুর উভয় প্রান্তের দুই স্টেশনে সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনে ডব্লিউডি-৩ নামে অপর একটি প্যাকেজের কাজও শেষ পর্যায়ে। সেতুটি নির্মাণে জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের কর্মীরা নিয়োজিত আছেন।
সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের সেতুটির নির্মাণকাজ একবারেই শেষ প্রান্তে রয়েছে। সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ব্রড গেজ ও ১০০ কি, মি. বেগে মিটরি গেজ ট্রেন চলাচল করতে পারবে। জানা যায়, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতিসীমা। বর্তমানে এই সেতু দিয়ে ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করে। সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। ঢাকার সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা অঞ্চলের রেল যোগাযোগে বর্তমান যে বিড়ম্বনা রয়েছে, সেটা আর থাকবে না। নির্মাণ শেষে সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে। কমে যাবে পরিবহনের খরচও। সেই সঙ্গে মহাসড়কের ওপর চাপও অনেকটা কমে আসবে।
মন্তব্য করুন: