স্বস্তির বৃষ্টিতে অপরুপ রূপে বাকৃবি

“মেঘের ছায়ায় অন্ধকারে রেখেছি ঢেকে তারে

এই-যে আমার সুরের ক্ষেতের প্রথম সোনার ধান।

আজ এনে দিলে, হয়তো দিবে না কাল

রিক্ত হবে যে তোমার ফুলের ডাল।

এ গান আমার শ্রাবণে শ্রাবণে তব বিস্মৃতিস্রোতের প্লাবনে ফিরিয়া ফিরিয়া আসিবে তরণী বহি তব সম্মান” গত কয়েকদিনের অসহ্য গরম থেকে যেনো এক নিমিষেই স্বস্তি নিয়ে এসেছে গত বুধবার দুপুরের ঝুম বৃষ্টি। কবির ভাষায় মেঘের অন্ধকারে ঢেকেছে প্রকৃতি সেই সাথে জানান দিচ্ছে নতুন ফুল আসার সংবাদ। প্রকৃতির এই স্নিগ্ধ আগমন শুভ হোক কৃষকের পরিশ্রমের ক্ষেত্রেও।

দুপুর ১২টা থেকে হঠাৎই ঝুমঝুম বৃষ্টি নেমে এলো। সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে। ক্লান্ত শরীর নিয়ে সবাই যখন ক্লাস শেষ হবার সময় গুণছে তখনই একরাশ সতেজতা ছড়িয়ে দিলো নব বারিধারা। ক্লাসের জানালা দিয়ে অনেকেই তখন তাকিয়ে দেখছে প্রকৃতি আর বৃষ্টির মাখামাখি। প্রতিটা ফোঁটা যেনো প্রকৃতির বুকে ভালোবাসার ছোঁয়া একে দিচ্ছে। বলছিলাম প্রকৃতিকন্যা খ্যাত ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বৃষ্টিবর্ষণ একটি দিনের কথা।

১২৩০ একরের সবুজের মহাসমারোহে ঘেরা অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাকৃবি বৃষ্টিতে সত্যিই এক মোহনীয় রূপ ধারণ করে। জব্বারের মোড়, টিএসসি, নদের পার, বৈশাখী চত্বর, কৃষিবিদ চত্বর, বোটানিক্যাল গার্ডেন, সোহরাওয়ার্দী হলের মাঠ, লাভ রোড, লন্ডন ব্রিজ, কে. আর মার্কেটসহ সমগ্র ক্যাম্পাসেই যেন এক নতুন ধরনের সজীবতা ফিরে আসে।

চিরসবুজ ক্যাম্পাস হওয়ায় বাকৃবিতে বছরের বেশিরভাগ সময় তাপমাত্রার ততটা আধিক্য দেখা যায় না। প্রায়শই বৃষ্টিরও দেখা মিলে। তবে গত কয়েকদিনের গরমের তুলনায় আজকের বৃষ্টিটা একটু বেশিই উপভোগ্য। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করা, ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখতে, কে. আর মার্কেট বা জব্বারের মোড়ের আওয়ালের স্টোরে বৃষ্টি বিলাসের সাথে এক কাপ চা শেষ করা, একটি মাত্র ছাতার নিচে দুই তিনজনের হেটে যাওয়া, শিক্ষার্থীদের হলের মাঠে বা কৃষিবিদ চত্বরে ফুটবলে মেতে ওঠা কিংবা প্রেমিক যুগলের বৃষ্টি বিলাশ - সবমিলিয়ে ক্যাম্পাস জুড়ে রোমাঞ্চকর এক অনুভূতির সৃষ্টি হয়।

বৃষ্টির দিনে সম্পূর্ণ আবাসিক বাকৃবির হলে হলে চলে রুমমেটদের নিয়ে খিচুড়ি রান্নার মহা উৎসব। কোনো ছেলের কাছে উত্তরপাড়া থেকে খিচুড়ি পার্সেল আসলে কয়েক দফা হাসাহাসি ও খুনশুটি চলতে থাকে। দক্ষিণপাড়া থেকেও যে খিচুড়ি পার্সেল যায় না ব্যাপারটা একবারে অস্বীকার করা যাবে না। এই বৃষ্টি বিলাশ নিয়েও হাজারো শিক্ষার্থীর হাজারো রকম অনুভূতি রয়েছে। তাদের মধ্যে থেকেই না হয় জেনে নেয়া যাক বৃষ্টির জন্য কতটা মরিয়া তারা।

কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী সানজিদা লিমু বলেন, তপ্ত গরমের পর সজীবতা নিয়ে আসল রিমঝিম বৃষ্টি। বৃষ্টির পরশে আরো সজীব, উচ্ছল ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠা বাকৃবির অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে যে কেউ হারিয়ে যাবেই। বৃষ্টির দিনের ক্যাম্পাসের চেহারা সত্যিই অন্যরকম। কাজের প্রতি সবারই যেন গা-ছাড়া ভাব। প্রকৃতিকে উপভোগেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে সবাই।

ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থী সুমন চক্রবর্তী বলেন, ক্যাম্পাসে বৃষ্টির দিনগুলো সবারই প্রিয়। বৃষ্টির দিনে ভিজে কেউবা মেতে ওঠে আড্ডা-গানে, কেউবা বেরিয়ে পড়েন প্রিয়জনের সঙ্গে রিকশা ভ্রমণে। বৃষ্টিবিলাসে ক্যাম্পাসের মাধুর্য আরো বেড়ে যায়। ক্যাম্পাসের চা এর দোকানে ভীর জমে যায় বৃষ্টিবিলাসী চা প্রেমিদের৷ এমন দিন বাকৃবিতে বার বার ফিরে আসুক।

বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুদের আরেক শিক্ষার্থী সন্দীপ সাহা বলেন, ক্লাস-পরীক্ষার চাপে অনেকটা যান্ত্রিক জীবন কাটাতে হয়। তাই বৃষ্টির দিন পেলে খুবই ভালো লাগে। যখন বৃষ্টি শুরু হয় তখন আমার ভেতরে একটা আনন্দের অনুভূতি কাজ করে। এছাড়া আমাদের ক্যাম্পাসে গাছপালা পরিমাণও বেশ ভালো। হল থেকে বেরিয়ে বৃষ্টির মধ্যে ক্যাম্পাসে ঘুরতে, বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা দিতে খুবই ভালো লাগে। বৃষ্টির মধ্যে টঙের চা পানের অনুভূতিটা তো আরো অসাধারণ।