নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ দিতে আহ্বান বাকৃবির তদন্ত কমিশনের

দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি ) গত সাড়ে পনেরো বছরে শিক্ষার্থীদের উপর ঘটে যাওয়া নানাবিধ নির্যাতনের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল (৯ অক্টোবর) থেকে শুরু হয় নির্ধারিত ফরম পূরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ দেয়ার পদ্ধতি। জানা গেছে আজ থেকে অনলাইনেও অভিযোগ করতে পারবে শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়ে এই অভিযোগ কার্যক্রমে তাদের সহযোগিতা কামনা করে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে তদন্ত কমিটি। বিজ্ঞপ্তি হতে জানা যায়, স্বৈরাচারী সরকারের শাসনামলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হয়েছে নানারূপ নির্যাতন। যার মধ্যে রয়েছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি, র‌্যাগিং, ইভটিজিং, গেস্ট রুমে নির্যাতন, সিট বাণিজ্য এবং চাঁদাবাজিসহ সকল অন্যায়নের সুষ্ঠু বিচারের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদেরকে আভিযোগ দায়ের করার আহ্বান জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। বিগত সাড়ে পনেরো বছর সময়কালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা এ অভিযোগ জানাতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে অনলাইন ফর্মপূরণ, অভিযোগ পত্রের ফর্ম ডাউনলোড করে হাতে পূরণ কিংবা সরাসরি ফর্মটি হাতে লিখে প্রশাসন ভবন, ছাত্র বিষয়ক বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে স্থাপিত নির্দিষ্ট অভিযোগ বাক্সের জমা দিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।

বিজ্ঞপ্তিটি থেকে আরো জানা যায়, অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর পরিচয় এবং সার্বিক গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়েও আশ্বাস দিয়েছেন তদন্ত কমিটির সদস্যবৃন্দ। পাশাপাশি, অভিযুক্ত ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গ-কে চিহ্নিত করে শাস্তির সুপারিশের উদ্দেশ্যে আগামী ১০ নভেম্বরের মধ্যে নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করে তদন্ত কমিটির নিকট অভিযোগ দায়েরের অনুরোধও জানানো হয়েছে।

অপরাধীদের শাস্তির বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের অপরাধ প্রমাণ হলে যথাযুক্ত শাস্তির জন্য সুপারিশ করা হবে। তবে অপরাধের মাত্রা বিবেচনায় চলমান শিক্ষার্থী অন্যায়কারী হলে ছাত্রত্ব বাতিল, সাময়িক বহিষ্কার বা বহিষ্কারও করা হতে পারে। যদি অপরাধী চাকরি ক্ষেত্রেও পদার্পণ করে তবুও তার সার্টিফিকেট বাতিলসহ সকল ফৌজদারি মামলার জন্যও প্রশাসনকে সুপারিশ করবে তদন্ত কমিশন। কমিটিতে আইনজীবী প্যানেলও থাকবে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী বিষয়টি ফৌজদারি মামলার অন্তর্ভুক্ত হলে সেভাবে আগানো হবে।

চাকরিতে চলে গেছেন বা বিদেশে অবস্থানরত সাবেক শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে জানান, চলে যাওয়া শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে না এসেও অনলাইনে সংযোগ থেকে তাদের অভিযোগ কিংবা প্রমাণ দিতে পারবে। অন্যায়কারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হলে তার সার্টিফিকেট বাতিল বা তার কর্মক্ষেত্রে নোটিশ পাঠিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (৯সেপ্টেম্বর) সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচ তলায় অভিযোগ বক্সের উদ্ভোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া।

এসময় উপস্থিত ছিলেন তদন্ত কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. জি এম মুজিবর রহমান, সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার, ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম, তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দসহ এবং জনসংযোগ ও প্রকাশনা দফতরের সদস্যবৃন্দরা।

উল্লেখ্য, গত ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোফরেস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. জি এম মুজিবর রহমানকে সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা ভিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকারকে সদস্য সচিব করে মোট ২৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ময়মনসিংহ জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট মো. খালেদ হোসেন টিপুকে উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়।