প্রকাশিত:
১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৭:১২
ব্রম্মপুত্র নদের তীরে চরাঞ্চলবাসীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে ২০০৬ সালে বিএনপি জামায়াতের শাসন আমলে হাসপাতালটি নির্মাণ হয়। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার দীর্ঘ ১৮ বছরেও ২০ শয্যার এই হাসপাতালটি আলোর মুখ্য দেখিনি । কোন রকম চিকিৎসা সেবা পায়নি এলাকাবাসী। বরং ডাক্তার ও স্টাফ দের নির্মিতি আবাসিক ভবন গুলোতে চলছে মাদক সেবনসহ অসামাজিক কার্যকলাপ।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলা পরানগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত ২০ শয্যার হাসপাতালটি দীর্ঘ ১৮ বছরেও পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি। ফলে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চরাঞ্চলের মানুষ। এদিকে, স্বাস্থ্যসেবা চালু না হওয়ায় হাসপাতালটির মূল ভবন এবং চিকিৎসক ও কর্মচারীদের আবাসিক ভবন অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। হাসপাতালের আবাসিক ভবনগুলো পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের আড্ডাখানায়। স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ একজন ডা. দিয়ে চলছে এই হাসপাতাল, ঠিক মত পাওয়া যাচ্ছে না ঔষধ, নিয়মিত আসেন না ডাক্তার।
বন্ধ রয়েছে ইনডোর বিভাগও। নান্দনিক অবকাঠামো থাকলেও নেই প্রয়োজনীয় জনবল। এ হাসপাতালের নাম চরাঞ্চল ২০ শয্যা হাসপাতাল। চালু হওয়ার ১৮ বছরেও এ হাসপাতাল কোনো কাজেই আসছে না চরাঞ্চলের প্রায় ৫ লাখ বাসিন্দার। ন্যূনতম চিকিৎসা সেবাও না থাকায় তারা এ হাসপাতালের নামই যেন ভুলতে বসেছেন।
জানা যায়, ময়মনসিংহ সদর উপজেলা চরাঞ্চলসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলা ফুলপুর-তারাকান্দা, এলাকাগুলোর গ্রামীণ জনগণের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০০৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন খান দুলুর উদ্যোগে চরবওলা গ্রামে ২০ শয্যার এ হাসপাতালটি স্থাপন করা হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৬ সালের ১৭ অক্টোবর হাসপাতালটির কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দিতেই নির্মিত হয় চিকিৎসক কর্মচারীদের জন্য কোয়ার্টার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের কক্ষগুলোর দরজা-জানালা ভাঙা। চুরি হয়ে গেছে বৈদ্যুতিক তার এবং ইলেকট্রিক্যাল সরঞ্জামগুলো। ময়লা-অবর্জনা জমে আছে পরিত্যক্ত কক্ষগুলোতে। পাঁচটি আবাসিক ভবনের চতুর্দিকে লতাপাতায় ঢেকে আছে। ভেতরের কক্ষগুলো ময়লা-আবর্জনায় পরিত্যক্ত অবস্থায় অবকাঠামাগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালের প্রবেশমুখের দুই পাশে গ্রামের লোকজন বর্তমানে গরু দিয়ে ঘাস লতাপাতা খাওয়ান। হাসপাতালে কর্মরত কোন ওয়ার্ড বয় নেই, রয়েছে একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী, নিরাপত্তা প্রহরী নেই। টিকেট কালেক্টর এবং ওষুধ বিতরণের দায়িত্ব পালনেও কেউ নেই।
এ হাসপাতালটি মুখ থুবড়ে পড়ায় চিকিৎসার জন্য প্রায় ৩৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তাদেরকে আসতে হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অথচ চরাঞ্চলের অষ্টধর, বোরোরচর, পরানগঞ্জ, চর সিরতা, চর ঈশ্বরদিয়া এ ছাড়াও ফুলপুর ও তারাকান্দা উপজেলার কয়েকটি এলাকার স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রধান ভরসা হওয়ার কথা ছিল এ হাসপাতালটি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রমজান আলী বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং লোকবলের অভাবে উদ্বোধনের দেড় যুগ পরও এলাকাবাসী স্বাস্থ্যসেবার সুফল পাচ্ছেন না। সকাল ১১ টায় মাঝে মধ্যে চিকিৎসক আসেন। দুপুর দেড়টার মধ্যে চলে যান। শুক্রবার আবার হাসপাতাল খোলা হয় না। এমন হাসপাতাল আমাদের দরকার নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহজাহান কবির বলেন, ওষুধপত্রের কোনো বরাদ্দ না থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে এক জন চিকিৎসক দ্বারা বহির্বিভাগ চালু রাখা হয়েছে। হাসপাতালের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণসহ ভবন সংস্কারে প্রকল্প প্রস্তাব প্রেরণ করেছি। অনুমোদন পেলে সংস্কার ও মেরামতের পর জরুরি বিভাগ এবং আন্তঃবিভাগ চালু করা হবে বলে জানান তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন নাগরিক সংবাদকে জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে সুদৃশ্য ভবন হলেও ঔষুধ, শয্যা ও খাবারের কোনো বরাদ্দ নেই। তবে, প্রতিদিনই এখানে চিকিৎসক থাকেন। মানুষ যাতে ন্যূনতম ওষুধ পান সেই চেষ্টা করছি আমরা।
মন্তব্য করুন: